মানসিক অবসাদের জেরে খেলা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন যাঁরা! একনজরে তাবড় ক্রিকেটারদের তালিকা
সম্প্রতি মানসিক অবসাদে থাকা জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে। তবে শুধু অভিনেতাদের মধ্যেই নয়, মানসিক অবসাদে ভোগেন সকল পর্যায়ের মানুষই। এই রোগ থেকে মুক্তি পাননি ক্রিকেটাররাও। সময়ের সঙ্গে মানসিক অবসাদকে মেনে নিয়ে বহু ক্রিকেটারই খেলা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। এই মানসিক ভারসাম্যহীনতা কখনও বা মানুষকে মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দেয়।
ক্রিকেটারদের মধ্যে মানসিক অবসাদ
মার্কাস ট্রেসকোথিক, জোনাথন ট্রট, স্টিভ হার্মিসন, ম্যাথু হগার্ড, শন টেইট, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের মতো খেলোয়াড়েরা কেরিয়ারের বিভিন্ন সময়ে মানসিক অবসাদে ভুগেছেন। ট্রেসকোথিকের সৌজন্যে তো ক্রিকেট-বিশ্ব বেশ আগেই জেনেছে মানসিক অবসাদ ক্রিকেটারদের একটি রোগ।
মার্কাস ট্রেসকথিক
ইংলিশ ওপেনার মার্কাস ট্রেসকোথিক মাত্র ৩২ বছর বয়সে ক্যারিয়ারে স্বর্ণালী সময়েই অবসরের ঘোষণা দেন। ২০০৬ সালে ভারত সফর চলাকালীন হঠাৎ দেশে ফিরে যান এই ব্যাটসম্যান। তারপরে অবশ্য আবার সাদা পোশাকে মাঠে ফিরেছিলেন তিনি এবং ট্রেসকোথিকও নিজেই জানিয়েছিলেন তিনি অবসাদে ভুগছেন। এবং অবসাদ কাটিয়ে উঠতে না পারায় পরের বছরেই অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ওয়ানডে শতকের মালিক হওয়ার রেকর্ড নিয়ে অবসরে গিয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
অবসাদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য কিছুদিন ক্রিকেট থেকে দূরে থেকেছেন শন টেইট, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো ক্রিকেটাররাও। মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকায় ম্যাক্সওয়েল কিছুদিনের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিরতি নেন। দলে জায়গা হলেও অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
ডেভিড বেয়ারস্টো
আরও এক ইংলিশ ক্রিকেটার ডেভিড বেয়ারস্টোও অবসাদে ভুগছিলেন। মূলত তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তার সমস্যা শুরু হয়। আর্থিক সমস্যার সম্মুখীনও হচ্ছিলেন। মদ্যপান, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবনসহ বিভিন্ন দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন তিনি। ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে শুরু করেছিলেন রেডিও ধারাভাষ্য। কিন্তু তাতেও পরিত্রাণ মেলেনি। ১৯৯৭ সালে অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের পর বেঁচে গেলেও, সুস্থ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেই আত্মহত্যা করেন বেয়ারস্টো।
সারাহ টেলর
ইংলিশ নারী ক্রিকেটার সারাহ টেলর দলকে দীর্ঘসময় ধরে অসাধারণ সব জয় উপহার দিয়ে এসেছেন। ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়, ২০১৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০১৮ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় যার মধ্যে অন্যতম। ব্যাট হাতে ৬৫৫৩ রানের পাশাপাশি গ্লাভস হাতে তার নামের পাশে আছে ২৩২টি ডিসমিসাল। বিশ্ব নারী ক্রিকেটেরই একজন অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। এই তারকা ক্রিকেটার বিশ্বকাপ জয়ের পরে হঠাৎ করে অবসরের ঘোষণা করেন। তিনিও মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে জানানো হয়।
জোনাথন ট্রট
ইংলিশ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান জোনাথন ট্রটও অ্যাশেজের সময়েই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তবে ফ্লিনটফ-ট্রেসকথিকদের থেকে আলাদা ছিলেন তিনি। কারণ তারা অবসাদের কথা জানিয়ে দিলেও ট্রট তা অস্বীকার করেন এবং উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখান। তখন তিনি অবসাদে ভুগছেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, 'আমি পাগল নই।' অবশ্য পরে তিনি স্বীকার করেন হতাশার কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাচ্ছিলেন এই ব্যাটসম্যান।
অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ
ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। ২০০৫ সালের অ্যাশেজ সিরিজে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বছরেই অ্যাশেজের শ্রেষ্ঠত্ব হারায় ইংল্যান্ড। ২০০৬-০৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ধবলধোলাই হয় ইংলিশরা। এরপরেই আরও ভেঙে পড়েন ফ্লিনটফ। ফ্লিনটফ নিজেই জানান, তিনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন। অবশেষে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেন ফ্লিনটফ। অবসরের আগে ২০০ এর বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে করেছেন ৭ হাজারের অধিক রান ও বল হাতে ৪০০ উইকেটও শিকার করেছেন।