ফিরে দেখা ২০২০ : করোনার আবহে আইপিএলের সফলতার রাস্তা কীভাবে তৈরি করল বিসিসিআই
ফিরে দেখা ২০২০ : করোনার আবহে আইপিএলের সফলতার রাস্তা কীভাবে তৈরি করল বিসিসিআই
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে থমক গিয়েছিল বিশ্ব। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সব ধরনের ক্রীড়া ইভেন্ট। সেই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল আইপিএল ২০২০-এর নামও। তবু সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বিসিসিআই। অসম্ভবকে সম্ভব করে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা শুধু নয়, দেশের বাইরে সফলভাবে টুর্নামেন্টেহর আসর বসিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শিবির। সই পথটাই ফিরে দেখে নেওয়া যাক।
করোনা ভাইরাসের প্রভাব
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনে করোনা ভাইরাসের প্রভাব বাড়তে শুরু করেছিল। এ দেশেও অতিমারীর প্রকোপ দেখা দিতে পারে অনুমান করে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল ভারত সরকার। ফলে আইপিএল ২০২০-এর সূচি প্রকাশে শিথিলতা দেখিয়েছিল বিসিসিআই।
প্রাথমিক সূচি
ভারতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে চলতি বছরের মার্চে। তবু ঝুঁকি নিয়েই আইপিএল সূচনার সম্ভাব্য দিন ঘোষণা করে দিয়েছিল বিসিসিআই। ঠিক হয়েছিল, ২৯ মার্চ থেকে শুরু হবে টুর্নামেন্ট। কিছুদিন পর পূর্ণাঙ্গ সূচিও প্রকাশ করে দিয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শিবির।
প্রস্তুতি শুরু
বিসিসিআই আইপিএল ২০২০-এর সূচি প্রকাশ করতেই জোরকদমে টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল দলগুলি। নিজ নিজ শহরের মাঠে অনুশীলনে নেমে পড়েছিলেন ক্রিকেটাররা। আইপিএল শুরুর অপেক্ষায় দিন গোনা শুরু হয়েছিল ক্রিকেট প্রেমীদের।
দর্শকশূন্য স্টেডিয়াম
ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রভাব বাড়তে থাকায় আইপিএল ২০২০ স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এই ইস্যুতে একাধিকবার কথা হয়েছিল বিসিসিআইয়ের। অতিমারীর প্রভাব থেকে বাঁচতে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্ট আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শিবির। প্রয়োজনে আইপিএলের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দেওয়ারও আভাস দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
স্থগিত আইপিএল ২০২০
শত চেষ্টা করেও যুদ্ধ জিততে ব্যর্থ হয়েছিল বিসিসিআই। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ আইপিএল স্থগিত করে দিতে বাধ্য হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শিবির। কবে শুরু করা যায় টুর্নামন্টে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিতে পারছিল না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
স্পনসরশিপ বিতর্ক
আইপিএল পিছোতে থাকায় বিপুল আর্থিক আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছিল বিসিসিআই। ইতিমধ্যে লাদাখ সীমান্তে ভারতীয় সেনাদের ওপর আক্রমণ করে বসে চিনা ফৌজ। শহিদ হন প্রায় ২০ জন ভারতীয় জওয়ান। ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল দেশ। আইপিএলের টাইটেল স্পনসর হিসেবে চিনা সংস্থা ভিভোর সঙ্গে বিসিসিআই-এর সম্পর্ক ছিন্ন হোক দাবিতে সরব হয়েছিল বিভিন্ন মহল। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে এই ইস্যুতে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল বিসিসিআই। কেবল ২০২০ সালের আইপিএলের জন্য ভিভোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শিবির। তীব্র আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল বিসিসিআই।
ড্রিম ইলেভেনের সঙ্গে বন্ধন
ভিভোর মতো আর্থিক প্যাকেজ না পেয়েও রীতিমতো টেন্ডার ডেকে ড্রিম ইলেভেন-কে আইপিএল ২০২০-এর টাইটেল স্পনসর ঘোষণা করে বিসিসিআই। তা নিয়েও কম কথা হয়নি।
আমিরশাহীতে আইপিএল
এসবের মধ্যে করোনা ভাইরাসের আবহে ভারতে আইপিএল আয়োজন করা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছিল বিসিসিআই। তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় সময় নিয়েও ঠোকঠুকি শুরু হয়। অবশেষে ময়দানে নামে আইসিসি। দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই স্থানে পরোক্ষে বিসিসিআই-কে আইপিএল আয়োজন করার সুযোগ দেওয়া হয়।
ভারতের বাইরে আইপিএল
অতিমারী পরস্থিতিতে যে ভারতে আইপিএল আয়োজন করা সম্ভব নয়, তা জানিয়ে দেয় বিসিসিআই। দেশের বাইরে টুর্নামেন্ট নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেয় আইপিএল কমিটি। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন করার ইচ্ছাপ্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও শ্রীলঙ্কা। শেষ হাসি হাসে প্রথম দেশ।
আমিরশাহীতে আইপিএল
বিসিসিআই জানিয়ে দেয়, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে আইপিএল ২০২০। ১০ নভেম্বর শেষ হবে টুর্নামেন্ট। সেই মতো সূচিও প্রকাশ করে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে জৈব সুরক্ষা বলয়ে নিজ নিজ হোটেলে কোয়ারেন্টাইন পর্ব শেষ করে অনুশীলন শুরু করে দলগুলি।
ব্যতিক্রম সিএসকে
আইপিএল ২০২০ শুরুর মাত্র কয়েকদিন আগে করোনা ভাইরাসের থাবা পড়ে এমএস ধোনি নেতৃত্বাধীন চেন্নাই সুপার কিংস শিবিরে। ফাস্ট বোলার দীপক চাহার, ব্যাটসম্যান ঋতুরাজ গায়েকোয়াড় সহ সিএসকে-র মোট ১৩ জন সদস্য করোনা সংক্রমিত হন। ফলে ধোনি শিবিরকে অনুশীলন বন্ধ রাখতে হয়। যদিও আমিরশাহী উড়ে যাওয়ার আগে চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামে পাঁচ দিনের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছিল হলুদ ব্রিগেড।
রায়নার 'না'
করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে আইপিএল ২০২০ না খেলার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না। দুবাই থেকে ভারতে ফিরে আসেন তিনি। এই ইস্যুতে বিস্তর বিতর্ক হয়। এই ঘটনার আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান রায়না। একই সিদ্ধান্ত নেন কিংবদন্তি মহেন্দ্র সিং ধোনিও।
ফ্লপ ধোনি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো এমএস ধোনি আইপিএল ২০২০-তে নিজেকে উজাড় করে দেবেন বলে ভেবেছিলেন ক্রিকেট প্রেমীরা। কিন্তু হয় তার উল্টোটা। ব্যাট হাতে মৃয়মান থাকেন ক্যাপ্টেন কুল। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার প্লে-অফ পৌঁছতে ব্যর্থ হয় সিএসকে।
পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়ন মুম্বই
করোনা ভাইরাসের আবহে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে হওয়া আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। পঞ্চমবারের জন্য খেতাব জিতে রোহিত শর্মা শিবির। টানা দুই বার আইপিএল জিতে চেন্নাই সুপার কিংসকে ধরে ফেলে মুকেশ আম্বানির দল।
কেকেআরের অধিনায়ক পরিবর্তন
দীনেশ কার্তিকের নেতৃত্বে আইপিএল ২০২০-এর অভিযান শুরু করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু দলের পারফরম্যান্সে ক্রমাবনতির জেরে নিজেই কেকেআরের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন কার্তিক। পরিবর্তে দলের নেতা হন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান। তা সত্ত্বেও এবারও আইপিএলের প্লে-অফে পৌঁছতে পারেনি শাহরুখ খানের দল।
সফল আইপিএল
করোনা ভাইরাসের আবহে আইপিএল ২০২০-কে সফল বলে ঘোষণা করেন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দর্শকশূন্য মাঠে গোটা টুর্নামেন্ট হওয়ায় আইপিএলের টিভি ভিউয়ারশিপ সর্বকালের রেকর্ড ছাপিয়ে যায়। টুর্নামেন্ট চলাকালীন কোনও ক্রিকেটার এবং অফিসিয়াল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ায় বিসিসিআইয়ের পিঠ চাপড়ায় ক্রিকেট মহল।
অজিদের বিরুদ্ধে টি-২০তে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যে ভারতীয় দলে কোন পরিবর্তনের সম্ভবনা, সম্ভাব্য একাদশ কী