বিরাটরা পৌঁছে গেলেন জোহানেসবার্গে, বিসিসিআইয়ের তড়িঘড়ি পদক্ষেপের সম্ভাবনা কম
ভারতীয় ক্রিকেটে নজিরবিহীন বিতর্কের আবহেই দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছে গেল ভারতীয় ক্রিকেট দল। তিন টেস্টের পাশাপাশি প্রোটিয়াদের দেশে তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজও খেলবে ভারত। টেস্টে বিরাট কোহলি নেতৃত্ব দেবেন। রোহিত শর্মার ফিটনেসের উপর নির্ভর করবে কে একদিনের সিরিজে নেতৃত্ব দেবেন। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট সারলে রোহিতই যাবেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, নয়তো অন্য কাউকে অধিনায়ক বেছে নেওয়া হবে।
বিরাটেরই মিথ্যাচার, নিশ্চিত বোর্ড
এরই মধ্যে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যেভাবে বিরাট কোহলি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তাতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে। বিসিসিআইয়ের সব কর্তারই বিশ্বাস, বিরাট কোহলিই মিথ্যাচার করছেন। এই ভাবনার পিছনে বোর্ডকর্তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র, বিরাট কোহলির উপস্থিতিতে বোর্ডকর্তাদের ভিডিও কনফারেন্সের ফুটেজ। বিরাট কোহলি যতই অস্বীকার করুন না কেন, বোর্ডসূত্রে যা খবর তাতে ওই ভিডিও কনফারেন্সেই দেখা যাচ্ছে সৌরভ নিজে বিরাটকে টি ২০ ক্যাপ্টেন্সি ছাড়তে বারণ করেছিলেন। তবে বিরাট যে সংস্কৃতি আমদানি করেছেন, তা শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানে থাকলেও ভারতীয় ক্রিকেটে নজিরবিহীন। যেখানে অধিনায়ক আঙুল তুলছেন বোর্ড সভাপতি ও সিস্টেমের দিকেই।
সৌরভ স্পিকটি নট!
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আজ জানিয়ে দিয়েছেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। গোটা ঘটনার দিকে নজর রেখে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করবে বিসিসিআই। তবে বোর্ডসূত্রে খবর, বিসিসিআই কর্তারা বিরাটের কথা বিশ্বাস না করলেও তড়িঘড়ি কোনও পদক্ষেপ করতে নারাজ। তার কারণ, ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে টেস্ট সিরিজ। তবে এই সিরিজ যে বিরাটের কেরিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বোর্ডসূত্রে খবর, গতকাল সৌরভ, জয় শাহ-সহ বোর্ডকর্তারা জুম কলে নিজেদের মধ্যে কথা বলে সম্মিলতভাবে ঠিক করেছেন এখনই কোনও বিবৃতি বা প্রেস রিলিজ প্রকাশ করা হবে না।
ধীরে চলো নীতি
সুনীল গাভাসকর বলেছিলেন, বিরাটের বক্তব্যের পর কোনও অসঙ্গতি থাকলে তা স্পষ্ট করার যোগ্য ব্যক্তি সৌরভই। যদিও বোর্ডের এক কর্তার কথায়, যেহেতু এটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং বোর্ড সভাপতি জড়িয়ে রয়েছেন, সেখানে তড়িঘড়ি পাল্টা কোনও বিবৃতি দেওয়া হলে তা টেস্ট সিরিজের আগে দলের মনোবলে আঘাত করতে পারে। সে কারণে এখনই কিছু না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই। সৌরভ ও বিরাট এক টেবিলে বসলেই যাবতীয় জল্পনা বা ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু কোনও বিবৃতি দেওয়া হলে তারপর নানাবিধ ব্যাখ্যায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তবে সৌরভ বা জয় শাহ এখনই বিরাটের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও কথা বলবেন না।
ফাইনাল ফ্রন্টিয়ারেই অগ্নিপরীক্ষা
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারত কোনওদিন টেস্ট সিরিজ জেতেনি। বিভিন্ন দেশে সিরিজ জেতার পর বিরাটের কাছে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে এটাই ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার। তিনি যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিয়ে যদি শতরান বা বড় ইনিংস খেলেন, ভারতকে সিরিজ জেতাতে সক্ষম হন তখন হাওয়া বিরাটের দিকে ঘুরতে পারে। কিন্তু এটাও ঠিক, বিরাট ১৩ বছর ধরে মিডিয়াকে সামলানোর অভিজ্ঞতা থেকে এটাও জানেন, একজন চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার প্রকাশ্যে বোর্ডের শীর্ষকর্তাদের দিকে আঙুল তুলতে পারেন না। তাও আবার যেখানে তিনি একা সাংবাদিক বৈঠক করছেন এবং বোর্ড সেটা আয়োজন করেছে। বিরাট প্রথমে প্রোটিয়াদের দেশে একদিনের সিরিজ না খেলার গুজব ওড়ান। তারপর বলেন, ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরানোর কথা জানতে পারেন টেস্ট দল নির্বাচনের বৈঠকের দেড় ঘণ্টা আগে। সবশেষে সৌরভের বক্তব্যকে খণ্ডন করাতেই জোর বিতর্কের সূত্রপাত। যার জের চলবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর অবধিই।
ছবি- বিসিসিআই