এশিয়া কাপ ২০১৮, ৪ ক্রিকেটীয় যুদ্ধ - বদলে দিতে পারে ভারত-বাংলাদেশ ফাইনালের গতি প্রকৃতি
এশিয়া কাপ ২০১৮ ফাইনাল ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে পারে এমন ৪টি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট যুদ্ধ।
সুপার ফোর পর্বে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে বিধবস্ত করেছিল ভারত। শুক্রবার এশিয়া কাপের ফাইনালে ফের দুই দেশের সাক্ষাত হচ্ছে। এর মধ্যে ভারত পাকিস্তানকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে কিন্তু আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ টাই হয়ে গিয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের সঙ্গে শেষ ওভারে জয় পাওয়ার পর পাকিস্তানকেও ৩৭ রানে হারিয়েছে। চোট পেয়ে দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন বড় ভরসা সাকিব আল হাসান। তবুও তাদের ব্যাঘ্র গর্জন থামেনি।
পরিসংখ্যান, পারফরম্যান্স ইত্যাদি বিচারে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ হলের থেকে অনেক এগিয়েই ফাইনালে নামছে ভারত। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচ একটি নতুন ম্যাচ। আর ক্রিকেট হল মহাঅনিশ্চয়তার খেলা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ হল একটি যুদ্ধের মতো। খেলা চলাকালীন ছোট্ট ছোট্ট লড়াই চলে। শুক্রবার কাপ ধরে রাখতে গেলে কিন্তু সেই লড়াইগুলি জিততে হবে ভারতকে। দেখে নেওয়া যাক সেই কাদের মধ্যে সেই লড়াই।
শিখর ধাওয়ান-রোহিত শর্মা বনাম মুস্তাফিজুর রহমান
সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অন্যতম ভয়ঙ্কর বোলার মুস্তাফিজুর। ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলার মতো পেস আছে তাঁর হাতে। কিন্তু তাঁর প্রধান শক্তি অভ্রান্ত লক্ষ্য ও বিপুল বৈচিত্র। কাটার, স্লোয়ার বাউন্সার, ইয়র্কার - কী নেই তাঁর হাতে! তার উপর তিনি বাঁহাতি। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের অনেকেই বাঁহাতিদের বলের অ্যাঙ্গেলটা খেলতে পছন্দ করেন না।
শুক্রবার কিন্তু মুস্তাফিজের কাজটা খুবই কঠিন। কারণ ভারতের দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা এই মুহূর্তে দুরন্ত ফর্মে আছেন। টুর্নামেন্টে শিখরের ২টি শতরান হয়ে গিয়েছে, রোহিতের একটি। তাজেই যতই মুস্তাফিজুর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে ম্যাচ জেতান বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪ উইকেট তুলুন, ভারতের দুই বাঘা ওপেনারের সামনে তাঁকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে।
মেহিদি হাসান মিরাজ বনাম ভারতের টপ অর্ডার
২০ বছরের এই অফ স্পিনার বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় উঠতি তারকা। পাকিস্তান ম্যাচে তাঁকে শুরুতেই আক্রমণে এনেছিলেন অধিনায়ক। তিনি পাক ওপেনার ফখর জামান ও পাকিস্তানের সেরা পাক ব্যাটসম্যান বাবার আজমকে তুলে নিয়ে জোর ধাক্কা দিয়েছিলেন।
একই ভাবে যদি তিনি শিখর ও রোহিতকে ফিরিয়ে দিতে পারেন, তাহলে কিন্তু ভারত খুবই চাপে পড়ে যাবে। গত ম্যাচে কিন্তু ভারতের মিডল অর্ডারকে আফগান স্পিনারদের বিরুদ্ধে নড়বড়ে লেগেছে। তবে রোহিত-শিখরকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাটা মুখে বলা যতটা সহজ, কাজে করে দেখানোটা ততটাই কঠিন।
কূলদীপ যাদব-যুজবেন্দ্র চাহাল বনাম মুশফিকুর রহিম
চোট আঘাতে জজর্রিত এই বাংলাদেশ দল অনেকটাই নির্ভর করে আছে মুশফিকুরের উপর। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত শতরান দিয়ে তিনি শুরু করেছিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও একটি ৯৯ রানের ইনিংস খেলে তিনি এই মুহূর্তে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (২৯৭)।
শুধু তাই নয়, তিনি দেখিয়েছেন একদিকে যেমন তিনি ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং করতে পারেন, আবার প্রয়োজনে চাপের মুখে রান তাড়া করতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। তবে মুশফিকুরের জন্য অপেক্ষা করছেন ভারতের চায়নাম্যান বোলার কূলদীপ ও লেগ স্পিনার চাহাল। তাদেরকে মুশফিকুর কতটা সামলাতে পারেন, তার উপর কিন্তু অনেকটাই নির্ভর করছে ফাইনালের ভাগ্য।
ডার্কহর্স মাশরাফে মোর্তাজা
২০০৭ সালে দ্রাবিড়ের ভারতকে যে মাশরাফে মোর্তাজা ধ্বংস করেছিলেন সেই মাশরাফে আর আজকের ৩৪ বছরের মাশরাফের মধ্যে অনেক তফাত। মাঝে গুরুতর চোট-আঘাতে ভুগতে হয়েছে তাঁকে। যার জেরে অনেক কমে গিয়েছে তাঁর বলের গতি। ব্য়াট হাতেও ইদানিং কচিত-কদাচিত তাঁকে ঝড় তুলতে দেখা যায়।
কিন্তু, তাঁর উপস্থিতিই, বাংলাদেশ দলের কাছে অন্য মাত্রার। বাংলাদেশের খেলায় যে হারার আগে না হারার মনোভাব দেখা যায়, তার আমদানি করেছিলেন তিনিই। এই এশিয়া কাপেও তাঁর ছোট ছোট অবদান বড় হয়ে দেখআ দিয়েছে। পাকিস্তান ম্যাচেই যেমন সাকিবের অনুপস্থিতি তিনি সাফল্যের সঙ্গে ভরাট করেছিলেন অনিয়মিত বোলারদের দিয়ে। পাশাপাশি ভারতকে সামনে দেখলে বোধহয় তাঁর শরীরে বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝড়ে। ভারতের বিরুদ্ধে অসম্ভব ভাল তাঁর রেকর্ড। আরও একবার কি তিনি ভারতের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠবেন? সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।