চোখধাঁধানো নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম, এবার দেশের স্পোর্টস সিটি নিয়ে ভাবনা অমিত শাহের
জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম বা রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম আগেই হয়েছে। দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলার নামকরণ করা হয়েছে অরুণ জেটলির নামেও। সেই তালিকায় এবার সংযোজন আমেদাবাদ। মোতেরার সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল স্টেডিয়ামের আজ থেকে নাম হলো নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। এদিনই ভূমিপুজো হলো একটি স্পোর্টস কনক্লেভের। সেটির নামকরণ হবে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নামে।
স্পোর্টস সিটি হবে আমেদাবাদ
এদিন স্পোর্টস কনক্লেভের ভূমিপূজন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, দেশের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। তাঁদের উপস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম নামকরণের ঘোষণার পর অমিত শাহ বলেন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই নরেন্দ্র মোদী বলতেন গুজরাটের মানুষজনকে ক্রীড়াক্ষেত্রে ও সেনাবাহিনীতে আরও বেশি করে আকৃষ্ট করতে হবে। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম বানানোর। আমার অনুরোধে তিনি গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন। গুজরাট ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নত হতে থাকে। তাই নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের পাশাপাশি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল স্পোর্টস এনক্লেভ তো হলোই, নারানপুরায় আরও একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি করা হবে। ফলে যে কোনও আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন সম্ভব হবে। দেশের স্পোর্টস সিটি হয়ে উঠবে আমেদাবাদ। আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের সবরকম ব্যবস্থা থাকবে। এশিয়াড বা কমনওয়েলথ গেমস শুধু নয়, আমেদাবাদকে অলিম্পিক্স আয়োজনের মতো করে তৈরি করা হবে।
কোন পথে এগিয়েছে মোতেরা
১৯৮২ সালের আগে আমেদাবাদে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতো মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন স্টেডিয়ামে। তখন এর নাম পরিচিত ছিল গুজরাত স্টেডিয়াম হিসেবে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে সম্মান জানাতে গুজরাত সরকার আমেদাবাদের মোতেরায় সবরমতী নদীর কাছে ১০০ একর জমিতে নতুন স্টেডিয়াম তৈরির উদ্যোগ নেয় ১৯৮২ সালে। ৯ মাসের মধ্যেই নতুন স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শেষে স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন হয়। ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগেও এই স্টেডিয়ামের সংস্কার হয়। ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে এই মাঠে প্রথম টেস্ট খেলে ভারত। এই মাঠেই ১০ হাজার রান পূর্ণ করেছেন সুনীল গাভাসকর, কপিল হ্যাডলিকে টপকে ৪৩২তম উইকেট পান মোতেরাতেই। বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম গড়তে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন উদ্যোগ নেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৬ সালে শুরু হয় সংস্কারের কাজ। গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি থাকার সময়ই স্টেডিয়াম তৈরির যাবতীয় পরিকল্পনা সেরে রেখেছিলেন মোদী। সেইমতোই তৈরি হয়েছে এই স্টেডিয়াম। নমস্তে ট্রাম্পের মাধ্যমে জনসমক্ষে আনার পর আজ থেকে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে ভারত-ইংল্যান্ড গোলাপি বলের টেস্ট। শুরুতেই দাপট দেখাচ্ছে ভারতই।
কেমন হয়েছে স্টেডিয়াম
বিসিসিআই তাদের টুইটারে স্টেডিয়ামের বিভিন্ন ছবি পোস্ট করেছে। দুই দলের ক্রিকেটাররাও স্টেডিয়াম দেখে মুগ্ধ। অমিত শাহ বলেছেন, ১ লক্ষ ৩২ হাজার মানুষ এখানে বসে খেলা দেখতে পারবেন। ৬৩ একর জমিতে স্টেডিয়ামটি গড়ে উঠেছে। খরচ হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। বিশ্বমানের সুবিধাযুক্ত চারটি ড্রেসিংরুম রয়েছে। ক্লাব হাউস চোখধাঁধানো। ৭৬টি কর্পোরেট বক্স, ইন্ডোর, আউটডোরের ব্যবস্থা তো আছেই, রয়েছে রেস্তোরাঁ, অলিম্পিক সাইজ সুইমিং পুল, জিম, থ্রি ডি প্রজেক্টর থিয়েটার। স্টেডিয়ামে ঢোকার তিনটি পথ রয়েছে। এই মাঠের বিশেষত্ব ফ্লাডলাইট। দুবাইয়ের রিং অব ফায়ারের মতো এই স্টেডিয়ামে এলইডি আলো লাগানো হয়েছে কোনও স্তম্ভে নয়, স্টেডিয়ামের ছাদ বরাবর।
ছবি- বিসিসিআই টুইটার
১১টি পিচ রয়েছে নতুন স্টেডিয়ামে
বিভিন্ন ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ করা ব্যাট দিয়ে সাজানো অটোগ্রাফ গ্যালারির পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ হলো এই স্টেডিয়ামে নানা মুহূর্তের ছবি দিয়ে সাজানো হল অব ফেম সেকশন। ১১টি পিচ রয়েছে। ৬টা লাল মাটি ও ৫টি কালো মাটি দিয়ে বানানো। মূল পিচগুলির মতোই চরিত্র প্র্যাকটিস পিচগুলিরও, যা ভারতে এই প্রথম। বৃষ্টিভেজা উইকেট ৩০ মিনিটে শুকিয়ে ফেলার ব্যবস্থা রয়েছে। নিকাশিব্যবস্থাও উন্নত মানের। ইডেনে গোলাপি বলের টেস্টে পেসাররা সব উইকেট পেলেও প্রথম দিনে নতুন স্টেডিয়ামে দাপট দেখাচ্ছেন ভারতীয় স্পিনাররা।