করোনা আবহে অন্য রূপে হাজির বসিরহাটের 'বসু বাড়ির কলার ছড়া দুর্গাপুজো'
করোনা আবহে অন্য রূপে হাজির বসিরহাটের 'বসু বাড়ির কলার ছড়া দুর্গাপুজো'
আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে অকাল বোধনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে করোনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবছর হচ্ছে পুজো। জমিদার বাড়ি থেকে রাজবাড়ী, বহু ঐতিহ্যবাহী বাড়ি বনেদি বাড়িতেও সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। থাকছে একাধিক বিধি নিষেধ।
ব্যতিক্রম
নয়
বসিরহাটের
প্রাচীন
পুজোগুলির
মধ্যে
অন্যতম
'বসু
বাড়ির
কলার
ছড়া
দুর্গাপূজা।'
প্রাচীন
পুজো
গুলির
মধ্যে
এই
পুজোর
ইতিহাস,
নামকরণ
ও
বেশ
কিছু
প্রাচীন
প্রথা
আজও
সময়ের
সঙ্গে
সঙ্গে
বহন
করে
আসছে
বসিরহাটের
মানুষ।
এই
পুজোর
নামকরণের
ও
কাঠামো
তৈরির
কথকতা
আজও
ঐতিহ্যের
সঙ্গে
পালন
করে
আসছে
বসু
বাড়ির
বর্তমান
সদস্যরা।
তবে এবছর করোনা অতিমারির কারণে দেবীর আরাধনার দিন অর্থাৎ মহালয়ার দিন থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বসু বাড়ির সদস্যরা হাজির হতে পারেননি। পুজো হলেও জাঁকজমক ও আড়ম্বরতা অনেকটাই জৌলুসহীন। বসিরহাটের দন্ডিরহাট নলকোড়ায় অবস্থিত প্রাচীন বসুবাড়িতে।
পুজোর ইতিহাস নিয়ে বসু বাড়ির সদস্যরা জানান, এই পুজো শুরুর নির্দিষ্ট সময়কাল জানা না থাকলেও ১৪৬০ থেকে ১৪৭০ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে এই দূর্গা পুজো শুরু হয়। যশোহরের রাজা প্রতাপাদিত্যের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা ঈশ্বরীগুপ্ত বসু এই পুজো শুরু করেছিলেন। সেখান থেকেই চলে আসছে এই পুজো। কথিত আছে প্রতাপাদিত্যও এই পুজোতে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে প্রথমে থেকেই এই পুজোর নাম "কলার ছড়া দুর্গাপূজা" ছিল না। এই নামটির পেছনে রয়েছে এক কথকতা।
১৭৯৩ সালে প্রতিমা তৈরির সময় মহামায়ার পেছনের ৮টি হাত বারবার ভেঙ্গে যেতে থাকে। বারবার সেই হাতগুলির মেরামতি করে তবেই পূজা করতে হয়েছে। প্রতিমা তৈরির সময়ে পায়রা গিয়ে হাতগুলির উপর বসার ফলে সেগুলি ভেঙ্গে যাচ্ছিল। কিন্তু পায়রা কোন ভাবেই আটকানো যাচ্ছিল না। বহু চেষ্টার করেও প্রতিমার হাত ভাঙ্গা কিছুতেই আটকানো যায়নি। ১৭৯৩ থেকে ১৭৯৭ পর্যন্ত এই পাঁচ বছর এভাবেই পায়রা দ্বারা প্রতিমার হাত ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে অমঙ্গলের সংকেত আঁচ করা হয়।
১৭৯৭ সালের পর তৎকালীন বসু পরিবারের প্রধান গোপাল বসু স্বপ্নাদেশ পান প্রতিমার ১০টি হাতের মধ্যে পেছনের ৮টি হাত ছোট করে দিতে। সেই মত সামনের দুটি হাত প্রমাণ মাপের থাকলেও পেছনের ৮টি হাত ছোট করে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই প্রতিমার হাত ভাঙ্গা বন্ধ হয়ে যায়। হাত ছোট হয়ে যাওয়ার ফলে প্রতিমাকে দেখলে ওই ছোট হাতগুলিকে অনেকটা কলার ছড়ার মত দেখায়। তখন থেকেই বসু বাড়ির পুজোর নাম হয় "কলার ছড়া দুর্গাপূজা।'
শুধু এই ঘটনাই নয় প্রতিমার কাঠামো ও প্রতিমা গড়ার ক্ষেত্রেও আছে ইতিকথা। জানা যায় পুজো শেষে সিঁদুর খেলার সময় সবার অজান্তে পার্শ্ববর্তী গ্রামের মুসলিম সমাজের এক জন এসে প্রতিমার কাঠামো থেকে একটা কাঠের টুকরো ভেঙে নিয়ে যায়। পরবর্তী বছর সেই কাঠামোর কাঠের ভাঙ্গা আংশ দিয়েই নতুন করে কাঠামো বানানো হয়। তবে কে বা কারা এসে কাঠামোর কাঠ ভেঙে নিয়ে যায় এবং নতুন কাঠামো বানানোর সময় কাঠের আংশটা রেখে যায় তার কোন খোঁজ আজ পর্যন্ত নিজেরা জানলেও বসু পরিবারের লোকেরা তা বাইরে প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।
পুরুষ ধরে টাকির অন্য বসু পরিবারের সদস্যরা কলারছড়া দুর্গাপূজার প্রতিমা বানালেও তারাও জানেন না কাঠের ভাঙ্গা আংশ কোথা থেকে আসে। টাকির বসু বাড়ির প্রতিমা শিল্পী মদন মোহন বসুর কথায়, কি কারণে? কে বা কারা? কি ভাবে? প্রতিমার কাঠামোর কাঠ ভেঙে দিয়ে যায় তা আমরাও জানি না। আমাদের জানানোও হয়না। শুনেছি আফগানিস্তান থেকে এক পাঠান তার পরিবার নিয়ে ওই এলাকায় এসেছিল। তাদের সংখ্যা বেড়ে অনেক হয়েছে। তাদের পদবী এলাকায় গাজী। তাদেরই কেউ কাঠামোর কাঠ ভেঙে নতুন কাঠামো বানানোর আগে দিয়ে যায়। বসু পরিবারের লোকেরাও বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে নারাজ।
দেরি করে পুজোর অনুমতি, তমলুকের পটুয়া পাড়ায় প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা তুঙ্গে