যুদ্ধফেরত এক ইংরেজের হাতে তৈরি হয়েছিল ভারতের এক মন্দির, জানেন তার নেপথ্য ইতিহাস
ভারতের একমাত্র মন্দির নির্মিত হয়েছিল এক ইংরেজের দ্বারা, জানেন তার ইতিহাস
ব্রিটিশরা প্রায় ২০০ বছর ভারত শাসন করেছে। তাঁদের শাসনামলে তৈরি হয়েছে বহু গির্জা ও ক্যাথিড্রাল। কিন্তু জানেন কি এ মন্দিরও তৈরি হয়েছিল ইংরেজদের দ্বারা। ভারতে একটিমাত্র মন্দির রয়েছে, যা তৈরি করেছিলের একজন ইংরেজ। ইংরেজ-নির্মিত সেই মন্দির কোনটি জানেন, জানেন সেই মন্দির তৈরির ইতিহাস?
কোথায় অবস্থিত সেই মন্দির
সেটা ছিল ১৮৮০-র দশক। মধ্যপ্রদেশের আগর মালওয়ায় তৈরি হয়েছিল একটি শিবমন্দির। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মার্টিন দ্বারা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল ওই মন্দির। সেই ভারতের একমাত্র মন্দির, যেটা এক ইংরেজ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু কী ছিল ইতিহাস, যার জন্য ওই ইংরেজ ভারতের বুকে মন্দির পুনর্নির্মাণে ব্রতী হয়েছিলেন?
প্রেক্ষাপটে কর্নেল মার্টিনের আফগান যুদ্ধ
কর্নেল মার্টিন আফগান যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তিনি নিয়মিত তাঁর স্ত্রীকে চিঠি লিখলেন, সেখানকার অবস্থার কথা জানাতেন। এটি একটি দীর্ঘ যুদ্ধ ছিল। কিছুদিন পর কর্নেলের চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়। মিসেস মার্টিন তখন থাকতেন আগর মালওয়ার ক্যান্টনমেন্টে। প্রিয়তমের বিরহে শোকাতুরা হয়ে কাটছিল তাঁর জীবন।
স্বামীর বিরহে মন্দিরে প্রার্থনা ইংরেজ স্ত্রীর
কোনও খবর পাচ্ছেন না স্বামীর, কী করবেন? মনে মনে অস্তির হয়ে উঠছিলেন। তিনি তখন নিজেকে ভুলিয়ে রাখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘোড়ায় চড়তে শুরু করেন। একদিন তিনি ঘোড়ায় চড়ে বৈজনাথ মহাদেবের মন্দিরের পাশ দিয়ে যাচছিলেন। তখন মন্দিরটির জরাজীর্ণ অবস্থা। আরতি চলছিল। মন্দির থেকে ভেসে আসছিল শঙ্খের আওয়াজ। মন্ত্রোচ্চারণ হচ্ছিল। তা শুনে তিনি থমকে গিয়েছিলেন।
দুঃখের কাহিনি বর্ণনা করেন পুরোহিতের কাছে
শিব মন্দিরের সেই পূজার্চনা দেখে তিনি মন্দিরের ভেতরে যান। ব্রাহ্মণ তাঁর মুখে বিষাদের ছাপ দেখে জিজ্ঞাসা করেন, কী হয়েছে মা আপনার? মিসেস মার্টিন তখন তাঁর দুঃখের কাহিনি বর্ণনা করেন পুরোহিতের কাছে। ব্রাহ্মণ তা শুনে বলেছিলেন, আপনি ভগবান শিব ভক্তের প্রার্থনা শোনেন। তাঁকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন। আপনিও মা, প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় আপনার প্রার্থনা শুনবেন ভগবান শিব।
১০ দিন পর ঘটেছিল চমকপ্রদ ঘটনা
ব্রাহ্মণের কথা শুনে আশ্বস্ত হন। ব্রাহ্মণ তাঁকে 'ওঁম নমঃ শিবায়' মন্ত্রটি জপ করার পরামর্শ দেন। ইংরেজ মহিলা ভগবান শিবের কাছে কর্নেলের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কর্নেল যুদ্ধ থেকে নিরাপদে ফিরে এলে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করে দেবেন। তার ১০ দিন পর চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে। যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে এক বার্তাবাহক স্বামীর একটি চিঠি নিয়ে আসেন। কী লেখা ছিল সেই চিঠিতে!
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এল চিঠি, কী ছিল সেই চিঠিতে
সেই চিঠিতে লেখা ছিল- আমি যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাকে নিয়মিত চিঠি দিতাম। কিন্তু হঠাৎ পাঠানরা আমাদের ঘিরে ফেলে। সেখান থেকে পালাবার কোনও উপায় ছিল না। হঠাৎ দেখলাম একজন ভারতীয় যোগীকে। মাথায় লম্বা চুল, জটাধারী, ত্রিশূলধারী, ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিত। তিনি আপগানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালাতে শুরু করতেই আফগানরা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়। তাঁর কৃপায় সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরে আসি আমরা।
চিঠিটি পড়ে মিসেস মার্টিনের চোখে জল
এমনও শোনা যায়, ওই যোগী যুদ্ধক্ষেত্রে কর্নেলের উদ্দেশে বলেন, আমার চিন্তা করা উচিত নয়। কারণ তিনি আমাকে উদ্ধার করতে এসেছেন। আমার স্ত্রীর প্রার্থনায় খুশি হয়ে তিনি স্বয়ং এসেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। চিঠিটি পড়ে মিসেস মার্টিনের চোখে জল চলে এসেছিল। হৃদয় আনন্দ সাগরে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। তারপর তিনি ভগবান শিবের সামনে নিবেদন করেছিলেন তাঁর সেই অশ্রুবারি।
কর্নেল ফিরে এসে সংস্কার করেন মন্দিরের
এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরেই লেফটেন্যান্ট কর্নেল মার্টিন ফিরে আসেন। এরপর মার্টিন দম্পতি শিবের ভক্ত হয়ে ওঠেন। ১৮৮৩ সালে তাঁরা মন্দির সংস্কার করেন ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে। বৈজনাথ মহাদেব মন্দিরে রাখা একটি স্ল্যাবে সেই তথ্য খোদাই করা রয়েছে। সেই তথ্য থেকে সূত্র পেয়েই জানা যায় মন্দির নির্মাণের এই ইতিহাস।
ইংল্যান্ডে ফিরে বাড়িতে শিব মন্দির নির্মাণ
এরপর মার্টিন দম্পতি দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে তাঁরা শিব মন্দির তৈরি করবেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাঁরা প্রার্থনা করবেন। জানা যায়, তাঁরা বাড়িতে শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন এবং প্রার্থনাও করতেন। এই ঘটনা আজও মিথ হয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের ওই আগর মালওয়ার অঞ্চলে। লোকের মুখে মুখে ফেরে এই কাহিনি।
ছবি সৌ:agarmalwa.nic.in
পৃথিবীতেই আছে 'স্বর্গ'! সেই রাজ্যের ঠিকানা রইল, ঘুরেও আসতে পারেন 'ইচ্ছে ডানা’ মেলে