মুকুল কি ফের ‘চাণক্য’ হবেন রাজ্য রাজনীতিতে! তৃণমূলে ফের পুরনো ছন্দের খোঁজে
মুকুল কি ফের ‘চাণক্য’ হবেন রাজ্য রাজনীতিতে! তৃণমূলে ফের পুরনো ছন্দের খোঁজে
মুকুল রায় নিজের মস্তিষ্কের জোরে রাজ্য রাজনীতিতে 'চাণক্যে'র ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তৃণমূলেই হোক বা বিজেপিতে যোগ দেওয়া সাড়ে তিন বছর, তাঁর কৌশলী চালের সাক্ষী থেকেছে রাজ্য। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিজেকে স্বতন্ত্র করে তুলেছিলেন ভোট রাজনীতিতে। সেই পুরনো মুকুলকে কি ফিরে পাবে বাংলা?
তৃণমূলে ফেরত মুকুল রায়ের দ্বিতীয় ইনিংস
দ্বিতীয় দফায় তৃণমূলে ফেরত এসে এ যাবৎ তাঁকে দেখা যায়নি সক্রিয় ভূমিকায়। বিজেপিতেও একুশের নির্বাচনে তিনি সাদা-মাটা ভূমিকা পালন করেছেন। বলা চলে, ২০১৯-এ তাঁর হাত ধরে বিজেপির সাফল্যের মুখ দেখলেও একুশের ভোটে তাঁকে পোছেননি অমিত শাহরা। বিজেপিতে গুরুত্ব হারিয়ে তিনি আবার ভেড়েন তৃণমূলে।
তৃণমূলে পুরনো জাদু ফের দেখাবেন মুকুল?
এখন তিনি তৃণমূলে এসে পুরনো ছন্দ ফিরে পাবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আগেও উঠেছিল। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের সেই প্রশ্ন উঠছে। কারণ তৃণমূলের হয়ে চারটি পঞ্চায়েত ভোট সামলেছেন তিনি। বিজেপির হয়ে একটি। ব্লক থেকে জেলা, জেলা থেকে রাজ্য তিনি হাতের তালুর মতো চিনতেন তৃণমূলে। এখন আবার তৃণমূলে ফিরে তিনি কি পুরনো জাদু ফের দেখাবেন?
ফিরে আসার ইঙ্গিতবাহী বার্তা এক লাইনে
২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটের দামাম বাজতে শুরু করেছে। তার আগে তৃণমূল পঞ্চায়েত-বৈঠকে বসতে চলেছে। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে মুকুল রায়কেও। দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট উঁকি দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, আবার মুকুল রায়কে পুরনো ফর্মে দেখা যাবে কি না। তিনি কিন্তু একটা বাক্যে যা বললেন, তা তাঁর ফিরে আসার ইঙ্গিতবাহী তো বটেই!
‘এখনও মরে যাইনি, এখনও বেঁচে আছি’
তৃণমূলের নতুন সদর কার্যালয়ে এদিনই প্রথম এসেছিলেন মুকুল রায়। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তৃণমূলে পঞ্চায়েতের আগে তাঁরে পুরো ছন্দে দেখা যাবে কি না। তার উত্তরে মুকুল রায় বলেছিলেন, আমি এখনও মরে যাইনি, এখনও বেঁচে আছি।
রাজনীতির লোককে রাজনীতিতেই দেখা যাবে?
মুকুল রায়কে এরপর প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাঁকে আবার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে দেখা যাবে কি না, তৃণমূলের মিটিং মিছিলে দেখা যাবে কি না, তিনি আবার জেলায় জেলায় ছুটে যাবেন কি না? মুকুল রায় এর জবাব দিয়েছিলেন মাত্র দু'টি বাক্যে। বলেছিলেন, রাজনীতির লোককে তো রাজনীতিতেই দেখা যাবে। দল যেখানে বলবে, সেখানেই যাব।
‘কৌটিল্য’ মুকুলের ভোট-অঙ্ক ভুল যেত না
ভোট আসছে বঙ্গে। তাই আবার আলোচনায় মুকুল রায়। আসলে ভোট করানোটা তাঁর মতো বঙ্গ রাজনীতিতে খুব কম নেতা-নেত্রীই বোঝেন। তাই মুকুল রায় ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূলস্তরের নেতা-নেত্রীদের এতটাই নিবিড় যোগাযোগ ছিল যে, 'কৌটিল্য' মুকুলের ভোট-অঙ্ক ভুল যেত না। তাই তাঁর কদর এখনও রয়েছে।
সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসার ইঙ্গিত মুকুলের
মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে আসার পর নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই স্ত্রী-বিয়োগ ঘটেছে তাঁরা। নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সুস্থির ছিল না। তাঁকে বহুবার অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শোনা গিয়েছে। এখন তাঁর শরীর অনেক সুস্থ বলে দাবি করে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সক্রিয় রাজনীতিতে আসার অন্তরায় পিএসি-র পদ
মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর পারিবারিক সমস্যা ও মানসিক সমস্যাতেই শুধু পড়েননি, তাঁকে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছিল। লাগাতার মামলার চাপও তাঁর সক্রিয় রাজনীতিতে আসার অন্তরায় হয়ে উঠেছিল। আইনি লড়াইয়ের ফলে তৃণমূলে যোগ দিয়েও তাঁকে বিজেপি সাজতে হয়েছিল। সম্প্রতি পিএসি চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি ঝামেলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
পুরনো ছন্দের মুকুলকে এখন প্রয়োজন তৃণমূলেরও
আর বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেল হেফাজতে, বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও জেল হেফাজতে। এই অবস্থা কর্মীদের মনোবল ফেরাতে মুকুল রায়ের মতো পোড়খাওয়া নেতাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন মনে করছে তৃণমূলও। তাহলে মুকুল-তৃণমূলে পুরনো ছন্দ ফের ফিরে আসতে পারে রাজ্য রাজনীতিতে।