(মুভি রিভিউ) #Dear Zindagi, আধুনিক আলিয়া আর চিরসবুজ শাহরুখ, সঙ্গে গল্পই সিনেমার ইউএসপি
বলিউডে যেরকম অন্য স্বাদের ছবি হচ্ছে, এই ডিয়ার জিন্দেগি সেরকমই একটি ছবি। যেখানে রুক্ষ আধুনিকতা রয়েছে। তবে তার মধ্যে থেকেই জীবনের সমস্ত আবেগ, উচ্ছ্বাস বারবার উঁকি মারে।
অভিনয় : শাহরুখ খান, আলিয়া ভাট, কুণাল কাপুর, অঙ্গদ বেদি, আলি জাফর, আদিত্য রয় কাপুর
লেখক ও পরিচালক : গৌরী শিন্ডে
কেন দেখবেন : শাহরুখ-আলিয়া জুটি, সিনেমাটোগ্রাফি ও গান
নেতিবাচক দিক : গল্প বলার ধরন বেশি ঝিমোনো, কিছু জায়গা গল্পে আলগা রয়ে গিয়েছে
সেরা মুহূর্ত : এই সিনেমায় অনেকগুলি মুহূর্ত রয়েছে। তবে একটি দৃশ্যে শাহরুখের প্রতি নিজের ভাবনা প্রকাশ করতে গিয়ে ভেঙে পড়েছেন আলিয়া। সম্ভবত সেটাই সেরা সেরা মুহূর্ত
গল্প
কিয়ারা ওরফে কোকো (আলিয়া ভাট) একজন সিনেমাটোগ্রাফার। যে নিজে কোনও একদিন সিনেমা বানাবে বলে স্বপ্ন দেখে। নিজের স্বপ্ন, ভাবনা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তাঁর রয়েছে। এদিকে তাঁর জীবনের প্রেম নিয়ে আলাদা মজাদার গল্প রয়েছে।
সে সিধ (অঙ্গদ বেদি) এর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক শেষ করে কারণ তাঁর ফিল্মমেকার বন্ধু রঘুবেন্দ্র (কুণাল কাপুর)-কে মনে ধরেছিল। সিঙ্গাপুরে একটি শ্যুটিং চলাকালীন দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। কোকো রঘুবেন্দ্রকে দেখে মোহিত হয়ে পড়ে। তবে সম্পর্ক নিয়ে সিরিয়াস হতে সে শেখেনি। সেই পরিস্থিতি তৈরি হতেই কনফিউসড হয়ে পড়ে সে।
কিছুদিনের মধ্যেই সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয় এবম কোকো ও রঘুবেন্দ্রর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর নিজের জীবন সিদ্ধান্ত, ভালোলাগা ও কমিটমেন্ট নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে কোকো।
এসবের মাঝেই চিন্তাগ্রস্ত কোকো গোয়ায় একটি ভিডিও শ্যুট করতে যায়। আর সেই গোয়া ট্রিপই কোকোর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাগস ওরফে জাহাঙ্গীর খানের সঙ্গে। একটি মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কনফারেন্সে দুজনের সাক্ষাৎ হয়।
জাগসের অন্যরকম ভাবনার কথা শুনে মোহিত হয় কোকো। সে শুরু করে কাউন্সেলিংয়ের পাঠ। নিজের ভিতরের নেতিবাচক দিকগুলিকে উপড়ে ফেলার জন্যই এমনটা করে সে। এরপরই ফের একবার প্রেমে পড়ে কোকো। হ্যান্ডসাম গায়ক-মিউজিশিয়ান রুমি (আলি জাফর)-র প্রেমে পাগল হয় কোকো। কিন্তু তা সত্ত্বেও জীবন নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা বাকী থেকে গিয়েছে কোকোর। মনোবিদ জাগস কি পারলেন সেই জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে?
পরিচালনা
পরিচালক গৌরী শিন্ডের এই সিনেমা আজকের দিনে খুবই প্রাসঙ্গিক। বেশিরভাগ যুবক-যুবতীরাই এই সমস্যার মধ্য দিয়ে জীবনের একটা সময় পার করেন। তাদের সকলের কথাই এই সিনেমায় বলতে চেয়েছেন পরিচালক। সিনেমার মধ্যে ভালোবাসা, ভালোলাগা, বন্ধুত্ব, ঘৃণা, হিংসা, নিরাপত্তহীনতা সহ সমস্ত আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।
কিছু কিছু জায়গায় একঘেয়ে মনে হলেও পরিচালক কি বার্তা দিতে চেয়েছেন সেটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে সিনেমাটি ভালো লাগবে। গল্প বলার দিক থেকে গৌরীর আগের সিনেমার সঙ্গে এটি তুলনায় আসবে না হয়ত, তবে দুঃখ, আনন্দের আবেগ আপনার মনকে আপ্লুত করবে সন্দেহ নেই।
অভিনয়
আলিয়া বলিউডে কাজ করা প্রায় ৬ বছর হয়ে গেলেও নিজের চরিত্র নিয়ে সেভাবে কাটাছেঁড়া করেননি। উড়তা পাঞ্জাবের পর থেকে অন্য আলিয়াকে দেখা যাচ্ছে। এই সিনেমায় সেটাকেই অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে শাহরুখ খানকে প্রেমিক হিসাবে যেভাবে দেখতে অভ্যস্ত আমরা, এই সিনেমায় তার ধারকাছ দিয়েও ঘেঁষেননি কিং খান। বরং তিনি নিজের কমবয়সী পেশেন্টকে নিয়ে সমুদ্রের ধারে খেলেছেন জীবনের মানে বোঝানোর জন্য। তবে এই শাহরুখও আপনাদের মন জয় করবেন নিশ্চিতভাবেই।
বাকী সকলেই নিজের মতো করে অভিনয়ে ছাপ ফেলরা চেষ্টা করেছেন। তবে গোটা সিনেমা জুড়েই রাজ করেছেন আলিয়া ও পরে শাহরুখ।
মিউজিক
জসলিন রয়্যালের অন্যরকম কণ্ঠে লাভ ইউ জিন্দেগি বেশ হিট হয়েছে ইতিমধ্যেই। এছাড়া গোয়ার দৃশ্যায়নের সঙ্গে মিলিয়ে বেশ সুন্দর নেপথ্য মিউজিক দেওয়া হয়েছে। তু হি হ্যায়-গানটিও জনগণের মনে ধরেছে নিশ্চিভাবেই।
সবশেষে বলা, বলিউডে যেরকম অন্য স্বাদের ভিন্নধারাকে মিশিয়ে ছবি হচ্ছে, এই ডিয়ার জিন্দেগি সেরকমই একটি ছবি। যেখানে রুক্ষ আধুনিকতা রয়েছে। তবে তার মধ্যে থেকেই জীবনের সমস্ত আবেগ, উচ্ছ্বাস বারবার উঁকি মারে। ফলে তার স্বাদ পেতে গেলে সিনেমা হলে যেতেই হবে।