মধ্যবিত্তের জীবনে নোটবন্দীর স্মৃতি উস্কে দেবে অনুরাগ কাশ্যপের ‘চোকড: পয়সা বোলতা হ্যয়’
মধ্যবিত্তের জীবনে নোটবন্দীর স্মৃতি উস্কে দেবে অনুরাগ কাশ্যপের ‘চোকড: পয়সা বোলতা হ্যয়’
অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত 'চোকড: পয়সা বোলতা হ্যয়’ ৫ জুন শুক্রবার মুক্তি পায় নেটফ্লিক্সে। একটি পরিবারের গৃহবধূর হাতে আচমকা মোটা টাকা চলে আসার পর বেলাগাম খরচ ও নোটবন্দীর পর আচমকাই সেই পরিস্থিতি বদলে যায়। এই নিয়েই পরিচালক তাঁর 'চোকড’–এর গল্প সাজিয়েছেন।
মুম্বই শহরতলির একটি বাড়ি, যেটাকে পায়রার খোপ বললেও ভুল হবে না। যেখানে কোনও কিছুই সম্পূর্ণ নয়, কোনও না কোনও ত্রুটি সেখানে রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা প্লামবিংয়ের। পাইপ ফেটে জল বেরোনো, রান্নাঘরের পাইপ দিয়ে জল না যাওয়া এ সব সমস্যার সঙ্গে প্রতিদিনই লড়াই করছে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। এক রাতে প্রায় তিনটের সময় সব কিছুই দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়। সরিতা (সাইয়ামি খের) ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরের সিঙ্কের নীচের পাইপ খুলে দেয় এবং নোংরা নালার জলে ভর্তি হয়ে যায় তাঁর রান্নাঘরের মেঝে। সেই নোংরা জলের সঙ্গেই প্লাস্টিক ব্যাগে মুড়িয়ে রাখা নগদও উঠে আসে। এটা কি কেউ কখনও ভেবেছিলেন?
ছবির গল্প
সরিতার বিয়ে হয়েছে সুশান্তের (রোশন ম্যাথিউ) সঙ্গে। তাঁদের একটি ছেলেও রয়েছে। এই তিনজনই সমাজের মানদণ্ডে এক অদ্ভুত। সুশান্ত বাড়িতেই থাকে, নিজে থেকে তা বেছে নেননি, কিন্তু তিনি কোনও চাকরি পাননি। তিনি সঙ্গীতকার হতে চেয়েছিলেন কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অন্য সব লড়াকু প্রতিভাদের দলে তিনিও সামিল। সরিতা ব্যাঙ্কের কর্মী। যদিও তিনি গায়িকা হতে চেয়েছিলেন কিন্তু মঞ্চে অনুষ্ঠান করার সময় তাঁর গলা রূদ্ধ হয়ে যায় এবং সেই ভয় আজ পর্যন্ত তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সরিতা এবং সুশান্তের সম্পর্কও যেন কোথাও রূদ্ধ হয়ে গিয়েছে, তাঁরা একে অপরকে ঘৃণা করেন না কিন্তু কোথাও যেন তাঁদের সম্পর্ক আটা-ডাল-চাল-সবজির মাঝে পড়ে পেছনের সিটে চলে গিয়েছে। অর্থ তাঁদের জীবনে মোগাম্বোর মতো, যেমনটা ভারতের অন্য মধ্যবিত্ত পরিবারে হয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে রান্নাঘরের বেসিনের নোংরা জলের মধ্যে থেকে পাওয়া হাজার-পাঁচশো টাকার একাধিক নোট একধাক্কায় সরিতার জীবন বদলে দেয়। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকে সে। কিন্তু ২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর রাত আটটার সময় মোদীর নোটবন্দীর ঘোষণা এক লহমায় সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
নোটবন্দীর স্মৃতি
অনুরাগ কাশ্যপ দেখাতে চেয়েছেন ৯ নভেম্বরের সকালে গোটা ভারতের পরিবারের চিত্রটাকে। পরিবার বিভক্ত হয়ে যায় ওই একটা সিদ্ধান্তে তা হল নোটবন্দী। সুশান্ত খুশি ছিল কারণ আচ্ছে দিন আসতে চলেছে এবং সরিতা তো বিশ্বাসই করতে পারছিল না, একদল যখন মহল্লাতে এই খবর শুনে নাচছিলেন, অন্যদিকে সরিতার প্রতিবেশীর চিন্তা ছিল দু'দিন বাদে মেয়ের বিয়ে কি করে ক্যাটারারকে টাকা দেবেন। মানুষ ব্যাঙ্কের বাইরে লাইন দিয়ে রয়েছেন নিজেদের টাকা বদল করার জন্য। একজন নতুন নোটের সঙ্গে সেলফি নিচ্ছেন তো বৃদ্ধের অনুরোধ ‘আমার বয়স হয়েছে, কি করে আমি রোজ আসব, আমায় দয়া করে সাহায্য করুন।' এই ছবিটি নোটবন্দীর স্মৃতিকে এক ঝটকায় উস্কে দেবে।
জীবন্ত চরিত্র
সাইয়ামি তাঁর চরিত্রে একেবারে দুর্দান্ত ছিলেন। তাঁর চোখের ফাঁক, রোজকারের ঝামেলায় মাঝে মাঝে তা জন্ডিসের মতো হলুদ হয়ে যেত, ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিটের ছবিতে সাইয়ামির চোখ দর্শকের মনে বিঁধবে। রোশনও তাঁর চরিত্র সুশান্তে যথাযথ ছিলেন। দর্শকরা তাঁর আচরণ দেখে অবশ্যই তাঁকে ঘৃণা করবেন। তাঁদের প্রতিবেশীর চরিত্রে অম্রুতা সুভাষ দারুণ অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন, যাঁকে দেখে আপনার স্থানীয় সবজি বিক্রেতার কথাই মনে পড়বে।
সফল পরিচালক
চিত্রনাট্য থেকে ছবির সংলাপ, দৃশ্যায়ন সবকিছুই দারুণ এই ছবিতে। কোথাও এতটুকু খামতি রাখেননি পরিচালক। সাধারণ মানুষের সমস্যাকে তুলে ধরেছেন অনুরাগ। সেখানে কোনও ফাঁক রাখেননি। টানটান উত্তেজনা রয়েছে এই ছবিতে। এর পরে কি হতে চলেছে সেই কৌতুহল দর্শকের মনে দিতে সফল হয়েছেন পরিচালক। তাই নোটবন্দীর স্মৃতি ফিরে পেতে অবশ্যই এই ছবিটি দেখতে হবে।
ফোর্বসের সর্বাধিক রোজগেরে সেলেবের তালিকায় অক্ষয় কুমারের নাম, শীর্ষে কাইল জেনার