রিল লাইফের হিরো থেকে বাস্তবের অসহায় বাবা, অন্য স্তরের সিনেমা ‘একে ভার্সেস একে’
অন্য স্তরের সিনেমা ‘একে ভার্সেস একে’
বছরের সেরা হিন্দি ছবি বললেও তা কম বলা হবে। এত সহজে অথচ এরকম অনন্য একটি সিনেমা তৈরি হতে পারে, তা একে ভার্সেস একে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। ছবিতে অনিল কাপুর ও অনুরাগ কাশ্যপের অগণিত আবেগ, পরাবাস্তব মুহূর্ত এবং প্লটের টুইস্ট আপনাকে একবারের জন্য আসন ছেড়ে ওঠার সময় দেবে না। এটা ভিন্ন ধরনের, মনোরঞ্জনকর, ট্রিপি এবং বাস্তব ও কল্পনা জগতের মেলবন্ধন বলা যেতেই পারে।
ছবির গল্প
সিনেমার গল্প শুরু হয়েছে এক বরিষ্ঠ অভিনেতা একের (অনিল কাপুর) সঙ্গে আর এক স্ব-উৎসাহী পরিচালক একের (অনুরাগ কাশ্যপ) সঙ্গে উত্তপ্ত বাক বিতণ্ডা দিয়ে এবং এরপর রাগের বশে কাশ্যপ অপহরণ করেন অনিল কাপুরের মেয়ে, অভিনেত্রী সোমন কাপুরকে (সোনম কাপুর)। এরপরই আসল খেলা শুরু হয়, হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পেতে সেই বাবার আর্তিকেই এরপর ক্যামেরাবন্দি করে সিনেমা তৈরি করে ওই পরিচালক। একজন বলিউড তারকার অবসাদের সময় তাঁদের আচরণ কেমন হয় সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেন রিলের পরিচালক।
পরিচালক ও অন্যান্য দিক
ছবির আসল পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে, যাঁর ক্যামেরা পরিচালনা অসাধারণ, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাবেশ যোশীর লাইটিং দক্ষতা, এই দুইয়ের যুগলবন্দী অসাধারণ এক স্বাদ এনে দিয়েছে ছবিতে। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, যোগিতা বিহানির প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছেন মোতওয়ানে, যিনি কাপুরের গোটা বিষয়টি রেকর্ড করেছেন। অবশ্যই কিছুটা সংযম রক্ষা করা হয়েছে তবে কাপুর এবং কাশ্যপের স্ব-হতাশাজনক হাস্যরসকে দর্শকদের অস্থির করে তোলার আগে পর্যন্ত মোতওয়ানে তার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে, কাশ্যপের প্রেমিকা হওয়ায় কাপুর কটাক্ষ করেন বিহানিকে অথবা হর্ষবর্ধন কাপুর, অনিলের ছেলে, যিনি এই সঙ্কটের মাঝেও নিজের অভিনয় দিয়ে কাশ্যপকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তারকাদের জীবনের আরও একটি দিক হল দর্শকদের চোখে পড়া মাত্রই তাঁরা কাপুরকে তাঁরই তিন দশক আগের জনপ্রিয় গান রাম লক্ষণের স্টেপ করতে বলেন। ছবিতে দেখানো হয়েছে, বলিউড তারকা তাঁর নিখোঁজ মেয়ের সন্ধান করার সঙ্কটের মাঝেও কীভাবে ভক্তদের আবদার মেটাচ্ছেন, হয়ত এটা সত্যিকারের তারকাদের জীবন।
অভিনয়
অভিনয় নিয়ে কোনও সংশয় না রাখাই বোধহয় ভালো। সুদক্ষ, অভিজ্ঞ অভিনেতা অনিল কাপুর যে কোনও চরিত্রেই নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন, তবে সিনেমায় নিজের চরিত্রে অভিনয় করা সহজ মনে হলেও অতটাও সহজ নয়। তবে অনিল কাপুর যথাযথ ভাবে নিজের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। অনুরাগ কাশ্যপও তাঁর চরিত্রে যথেষ্ট সাবলীল ছিলেন।
ভিন্ন স্বাদের ছবি
একে ভার্সেস একে এক অন্য ধারার ছবি বলা যেতেই পারে। যদিও মুক্তির আগেই ছবিতে বায়ু সেনার পোশাক নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলেও তা ছবি মুক্তিকে আটকাতে পারেনি। আসলে বলিউডে এ ধরনের চিন্তাধারা নিয়ে কেউ কোনওদিন ছবি করেননি। সেদিক দিয়ে অবশ্যই পরিচালককে বাহবা জানাতে হয়। পরিচালকের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে ছবির অন্যান্য কলাকুশলী ও অভিনেতারা। তাই বছর শেষে দর্শক অন্য স্বাদের ছবি পেতে চলেছেন সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।