Exclusive: 'শিক্ষক-গুরু চলে গেলেন', তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ মেগাস্টার চিরঞ্জিতের
Exclusive: 'শিক্ষক-গুরু চলে গেলেন', তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ মেগাস্টার চিরঞ্জিতের
তাঁর নামে একটা সময়ে হিল্লোল জাগত হাজার তরুণী-যুবতীর হৃদয়ে। তাঁকে দেখার জন্য মানুষের ভিড় থিকথিক করতো স্টুডিও পাড়ায়। তাঁর ছবি মানেই সুপার হিট। বেদের মেয়ে জ্যোৎসনা, অমর কণ্টক, সিঁদুর খেলা থেকে শুরু করে প্রফুল্ল, যোদ্ধার মতো অসংখ্য কালজয়ী ছবি তিনি দশকের পর দশক সিনেপ্রেমী বাঙালিকে উপহার দিয়ে এসেছেন। টলিউড যে উত্তম কুমার পরবর্তী সময়ে টলিউডে সেই মানের যে ক'জন সুপারস্টার বাংলার ঘরে ঘরে জায়গা করে নিতে পেরেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম তিনি।
সাধারণ বাঙালির প্রিয় নায়কের মন আজ ভারাক্রান্ত কারণ অমৃতলোকে গমন করেছেন তাঁর 'গুরু' তরুণ মজুমদার। এই প্রতিবেদকে এ দিন ফোনের অপর প্রান্ত থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর টলিউডের এক নম্বর অভিনেতার খেতাব ধরে রাখা দীপক চক্রবর্তী (চিরঞ্জিৎ) বলেন, "এটি নিঃসন্দেহে নক্ষত্র পতন। টেম্পো স্লো রেখে রোম্যান্টিক একটা ঘড়ানার ছবি তিনি বানাতেন যেটা দারুণ লাগত দেখতে। ইন্ডাস্ট্রিকে বহু স্মরণীয় ছবি তিনি উপহার দিয়েছেন।"
তবে শেষের দিকে কিংবদন্তি চিত্র পরিচালকের কাজ সেভাবে মানুষের মনে দাগ কাটতে পারছিল না, মনে করেন চিরঞ্জিৎ।তাঁর কথায়, "দর্শককূলের পছন্দ এবং মানসিকতার তফাৎ তৈরি হয়ে গিয়েছে। উনি যেই মানের ছবি বানাতেন শেষের দিকে সেই বিষয়টা ধরার মতো দর্শক আর ছিল না, তিনি নিজেও আর পারছিলেন না কারণ বয়স হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তরুণ মজুমদার চিরকালীন সেরা-শ্রেষ্ঠ। তরুণ মজুমদারের একটি নিজস্ব ধারা রয়েছে যান্ত্রিক থেকে শুরু চাওয়া-পাওয়া, গণদেবতা সবেতেই সেই বিষয়টা রয়েছে। কিন্তু এই ছবির দর্শকই পরবর্তী সময়ে পাল্টে যায়, তিনি শেষের দিকে গিয়ে সেটা ধরতে পারেননি, এটা সব সময়েই হয় কারণ প্রজন্ম বদলাচ্ছে, সেই দর্শক আর নেই। এখন ওটিটি'র যুগ। মানুষ অ্যাকশন ফিল্ম এখন বেশি পছন্দ।"
সিনেমার প্রতি প্রেম যখন থেকে তৈরি হয়েছে তখন থেকে তরুণ মজুমদার এবং তপন সিনহার প্রতি আলাদাই আকর্ষণ বোধ করতেন চিরঞ্জিত। তিনি বলেছেন, "অনেকেই ছিলেন কিন্তু তরুণ মজুমদার এবং তপন সিনহা- এঁদের দু'জনের ছবি কখনও মিস করতাম না। পাগলের মতো এই ছবিগুলো দেখতাম। আমাদের গুরু-শিক্ষক সবই এঁরা।"
উত্তম কুমার পরবর্তী সময়ে মূলত যেই দু'টি কাঁধের উপর ভর করে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি বেঁচেছিল তাঁদের মধ্যে একটি চিরঞ্জিত। তবে অভিনেতার পাশাপাশি তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে, তিনি এক জন চিত্র পরিচালক। পরিচালনাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। পরিচালক হতে গিয়েই তাঁর হয়ে ওঠা মেগাস্টার। তবুও অভিনয়ের মাঝেই তিনি একাধিক ছবি পরিচালনা করেছেন। তাঁর পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে মর্যাদা, ফিরিয়ে দেওয়া, সংসার সংগ্রাম, কেঁচো খুড়তে কেউটে, ভয়, বস্তির মেয়ে রাধা, মানুষ অমানুষের মতো হিট ছবি। অদূর ভবিষ্যতে কী আবারও পরিচালকের চেয়ারে দেখা যাবে তাঁকে। স্পষ্ট ভাষায় তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সেই রকম টান আর অনুভব করেন না। তাঁর কথায়, "আমি হিসেব করে কিছু করি না, কোনও সময় ছবি করতেও পারি। তবে খুব একটা উৎসাহ আমার নেই।"