'ভাষায় এত বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি', মন্তব্য দক্ষিণী তারকা কমল হাসানের
হিন্দি ভাষাকে অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের চিন্তাভাবনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। ঘটনাক্রম শুরু হয়েছে মূলত দিন কয়েক আগে। দেশের প্রধান ভাষা হিসেবে হিন্দিকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর এরপরেই নানা মহল থেকে উঠছে নানা রকমের বিতর্ক। এ বিষয়ে দক্ষিণ ভারতের মক্ষি খ্যাত অভিনেতা কিচ্চা সুদীপ সরাসরি মন্তব্য করে বসেন যে হিন্দিকে আর রাষ্ট্রীয় ভাষা বলা চলে না। অপরদিকে এও শোনা যায় যে হিন্দি কখনওই ভারতের রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিল না। আর এই বিষয় নিয়েই চলছে হিন্দি বনাম অন্যান্য ভাষা নিয়ে তুমুল বিতর্ক। আর এরই মধ্যে এবার এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন সুপারস্টার কমল হাসান।
ভাষা বিতর্কে এবার মুখ খুললেন সুপারস্টার অভিনেতা কমল হাসান। হিন্দি বিতর্ক নিয়ে তিনি এবার বিদেশ মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে বললেন, ভারত তো আমেরিকার মত নয়, যেখানকার লোকজন শুধু ইংরেজিতেই কথা বলে। এরই সঙ্গে তিনি ভারতের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য নিয়েও কথা বলেন। তাঁর মতে, 'ভারত নানা ভাষার দেশ। আর এই বৈচিত্র্যই ভারতকে অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা করে। ভারতের ভাষা অনেক কিন্তু সকল ভারতবাসী ঐক্যবদ্ধ।' আসলে এইদিন নিজের আগামী সিনেমার প্রমোশনে গিয়েছিলেন কমল হাসান। আর সেখানেই এক সাংবাদিক বৈঠকে হিন্দি বনাম আঞ্চলিক ভাষা বিতর্ক প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। এবং তারই উত্তরে একথা বলেব কমল হাসান।
তামিল অ্যাকশন থ্রিলার 'বিক্রম'-এর প্রচারের জন্য রাজধানী দিল্লিতে সফরে এসেছেন অভিনেতা কমল হাসান। আর সেখানেই হিন্দি ভাষা বিতর্ক নিয়ে সরব হলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি দেশের বিবিধ ভাষা এবং ইংরাজি প্রসঙ্গে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, "আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত যে আমাদের কাছে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার লোক আছে কিন্তু একে অপরের সাথে ইংরেজিতে যোগাযোগ করে। এতে দোষের কিছু নেই। ব্রিটিশরা আমাদের অনেক কিছু লুট করেছে, কিন্তু তারা আমাদের এমন কিছু রেখে গেছে যা আমরা এখন কাজে লাগাতে পারি।" এরই সঙ্গে দেশের একাধিক আঞ্চলিক ভাষা প্রসঙ্গে তাঁর মত, 'ভাষায় এত বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি।'
একই সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষায় সিনেমা প্রসঙ্গেও নিজের মত প্রকাশ করলেন মহাতারকা কমল হাসান। এরই সঙ্গে তিনি একাধিক উদাহরণও টেনে আনেন। কমলের কথায়, "নিজেকে একজন ভারতীয় অভিনেতা হিসেবেই ভাবা দরকার। দেশের ভাষাকে তামিল, মালায়ালাম, হিন্দি বা বাংলা বলার পরিবর্তে ভারতীয় ভাষা বলুন। এটা আমাদের ভাষা। আমি কোনও ভাষা হয়ত বলতে পারি না কিন্তু লক্ষ লক্ষ আছেন যারা তা বলতে পারেন। যেমন প্রায় ৮০ মিলিয়ন ব্যক্তি তামিল ভাষায় কথা বলেন। ঠিক তেমনই ভারতের অন্যান্য ভাষায় কথা বলার লোকের সংখ্যাও কয়েক কোটি করে। তাই আঞ্চলিক দলাদলির বদলে আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি অর্জন করা ভারতীয় চলচ্চিত্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত।" সেইসঙ্গে তিনি উদাহরণ দেন বাহুবলী বা মুঘল-এ-আজম এর মত মেগাহিট সিনেমার। এবং এটিও উল্লেখ করেন যে এইসব সিনেমা কখনও তামিল বা হিন্দি সিনেমা হিসেবে নয়, বরং ভারতীয় সিনেমা হিসেবেই পরিচিত।
প্রসঙ্গত, হিন্দি ভাষা বিতর্কে প্রথম থেকেই সরব হয়েছেন দেশের একাধিক সেলেবরা। এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আঞ্চলিক ভাষাগুলি গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক ভাষায় ডাক্তারি পড়ার সুযোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হিন্দিকে দেশের প্রধান ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বললে এর বিরোধিতায় সরব হন কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান। কন্নড় অভিনেতা কিচ্চা সুদীপও এর বিরোধিতা করে মন্তব্য করলে তার পাল্টা জবাব দেন অজয় দেবগন। তারপরই সেই বিতর্ক আরও উসকে সুদীপকে সমর্থন করে এগিয়ে আসেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই। এদিকে সব বিতর্ক উস্কে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনও ভাষা বিতর্কে মুখ খুলেছেন। কিন্তু এতসব কাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জবাব দেন যে 'জাতীয় শিক্ষানীতিতে আমরা প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাষা নিয়ে সংঘাত তৈরির চেষ্টা চলছে। নাগরিকদের সতর্ক করুন'।