সব চকচকে বস্তু সোনা না হলেও সত্যি চমকানো সোনা বাপ্পি দা : মীর
সব চকচকে বস্তু সোনা না হলেও সত্যি চমকানো সোনা বাপ্পি দা : মীর
তাঁর পেশা রেডিও জকি। আর তিনি ডিস্কো গানের রাজা। রেডিও চলছে, মীর আফসার আলি বলছেন। বাপ্পি দা নেই। সুরের জগতে পরপর তিন নক্ষত্র পতনের তালিকায় তার নাম লেখালেন বাপ্পি লাহিড়ীও। অনেকের মতো মর্মাহত মীর। তবে বরাবরের কথার মাধ্যমে নিজের জাত চেনানো মীর আবারও তাঁর সম্মান জানালেন অন্যভাবে।
ফেসবুকে লিখেছেন 'অল দ্য গ্লিটার্স আর নট গোল্ড। ইটস বাপ্পি লাহিড়ী'। অর্থাৎ সব চকচকে বস্তু সোনা না হলেও সত্যি চমকানো সোনা বাপ্পি দা। সবাইকে চমকে দিয়ে চলে গিয়েছেন তিনি। আসলে নিজের পেশার বহু শো-এ একাধিকবার তাঁকে নিয়ে মজা করেছেন মীর। সেই বাপ্পি দা আজ নেই। মীর বলেছেন , তিনি না থাকলে তো তাঁর শিল্পে বাড়তি মাত্রা যোগ হত না। 'মানুষকে হাসিয়েছি। আনন্দ দিয়েছি। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার থেকে বড় কিছু হতে পারে না। সেই কাজটি করতে সাহায্য করেছেন বাপ্পি লাহিড়ি।'
মীরের কথায়, 'ছোট থেকেই বাপ্পি লাহিড়ি খুবই মজার এক মানুষ। কয়েক জন মানুষ থাকেন, যাঁদের দেখে নির্মল আনন্দ হয়। মন উৎফুল্ল হয়ে যায়। উনি সে রকমই। স্কুলে টেবিল বাজিয়ে গান গাইতাম আমরা। বাপ্পিদা পাশ্চাত্য সঙ্গীতকে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন। কখনও কখনও তিনি গোটা সুর অন্য কোনও গান থেকে নিয়ে নিতেন। ছোটবেলায় তো বুঝতাম না সেই সুরের উৎস আছে সাগর পেরিয়ে। তাও কী যে ভাল লাগত! বড় হওয়ার পরে বন্ধুদের বাড়িতে গ্রামোফোনে বিলিতি গান শুনতে শুনতে মনে হত, আরে এই সুর তো শুনেছি বাপ্পিদার গানে। পরবর্তী কালে কাজের সূত্রে আলাপ হয় বাপ্পিদার সঙ্গে। আমি সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি তো সুর চুরি করেন। এ ভাবে সুর তুলে আনেন কেন?'' উনি উত্তর দিয়েছিলেন, আমি ইনিস্পায়ার হই।'' বুঝতে পারিনি প্রথম বার। আবারও জিজ্ঞাসা করি। উত্তর পেলাম, ইনিস্পায়ার। আমি বললাম, আচ্ছা! আপনি ইনস্পায়ার্ড হন। উদ্বুদ্ধ হন।'
মীর বলেছেন আরও প্রশ্ন করেছিলাম যে ''আমেজ যে আপনাকে এত নকল করি, আপনার রাগ হয় নিশ্চয়ই? বাপ্পিদার উত্তর দিয়েছিলেন, হাতি চলে বাজার, কুত্তা ভকে হাজার। পর মুহূর্তে তিনি ব্যাখ্যা করলেন, আমি কিন্তু নিজের শরীরের ওজনের জন্য নিজেকে হাতি বলিনি। হাতির আক্ষরিক অর্থে যেও না। হাতি বলতে বুঝিয়েছি, আমার মতো এত বড় মাপের সুরকার! বাপ্পিদার এই উত্তরে হেসে হেসে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ''আপনি আমাকে কুকুর বললেন?
এ সব কারণেই আমার কাছে তিনি সেই মজার মানুষটি, যাঁকে দেখলেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আজ আফসোস হচ্ছে।'
ফের সঙ্গীত জগতের নক্ষত্র পতন! গায়ক বাপ্পি লাহিড়ির শেষ রেকর্ড করা গানটি কী, জানেন আপনি
মুম্বইয়ের হাসপাতালে মারা যান তিনি। ৬৯ বছর বয়সে মারা গেলেন মুম্বইয়ের জনপ্রিয় এই সঙ্গীত পরিচালক। কয়েক মাস আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। পরে সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ফের তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রায় ১ মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বাপ্পি লািহড়ি। বুধবার সকালে হাসপাতালেই মারা যান তিনি।
মুম্বইয়ে বাঙালি শিল্পীদের একটা বড় জায়গা তৈরি করে দিয়েছিলেন িতনি। বিশেষ করে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে একাধিক ছবিতে গান পরিচালনা করেছেন বাপ্পি লাহিড়ি। ঊষা উত্থুপের সঙ্গেও একাধিক গান গেয়েছেনষ। বাপ্পি লাহিড়ি একাধিক ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন। এমনকী গানও লিখতেন তিনি। মাত্র ৩ বছর বয়সে তবলায় হাতে খড়ি তাঁর। ১৯ বছর বয়সে পাড়ি দিয়েছিলেন মুম্বইয়ে। বলিউডে গানের ধারায় এক নতুন বদল এনেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। অনেক নতুন শিল্পীকে তিনি সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
বাপ্পি লাহিড়ির প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পী মহলে। খবর পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন ঊষা উত্থুপ। তিনি বলেেছন, বাপ্পি দা নেই একথা ভাবতেই পারছি না। তাঁর মত হাসিখুশি লোক খুব কমই ছিল। যেকোনও মনখারাপ করা জায়গার মেজাজ বদলে দিতে পারতেন বাপ্পি লাহিড়ি। বলিউডের একাধিক সুপার হিট ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালে জলপাইগুড়িতে জন্মে ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। শৈশব থেকেই গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।