'দিলওয়ালো কি দুনিয়া' ছেড়ে চললেন বাপ্পি দা, বিদায় লগ্নে 'কভি অলবিদা না কেহনা'
'দিলওয়ালো কি দুনিয়া' ছেড়ে চললেন বাপ্পি দা, বিদায় লগ্নে 'কভি অলবিদা না কেহনা'
এ যেন এক আশ্চর্য সমাপতন। সুরের আকাশ থেকে খসে গেল আরও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। শোকের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার সময়ই পেলেননা দেশবাসী, বিশেষত এই বাংলা। তার আগেই ফের শূন্য হল বঙ্গ-জননীর কোল। ইন্দো- ওয়েস্টার্ন ফিউশনের দুই পিলারের প্রথম নাম যদি হয় পঞ্চম দা অর্থাৎ আর ডি বর্মণের, পরের নামটা হবে নিঃসন্দেহে বাপ্পি লাহিড়ীর। এককালে পঞ্চমকে টেক্কা দেওয়ার জন্য 'হিম্মতয়ালা' যদি কেউ ছিলেন তিনি একমাত্র বাপ্পি লাহিড়ী। জেদ, অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যাবসায়ের জোরেই লিখেছিলেন 'আলোকেশ' থেকে 'বাপ্পি' লাহিড়ী হয়ে ওঠার কাহিনী।
শৈশবে বাপ্পি
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর রাজার শহর জলপাইগুড়িতে জন্ম নেন আলোকেশ। বাবা অপরেশ লাহিড়ী ছিলেন শ্যামা সঙ্গীতের শিল্পী। বরাবরই বাড়িতে গান বাজনার চল ছিল। সেখান থেকেই সঙ্গীতে হাতেখড়ি। খুব ভালো তবলা বাজাতে পারতেন তিনি। আর সেই তবলা সঙ্গতেই প্রথম জীবনের কাজ শুরু। সোনার ছেলে বলিউডে সোনার দ্যুতি ছড়াবেন, এই ইচ্ছা যৌবনকাল থেকেই প্রবল ভাবে তৈরি হয়। আর সেই স্বপ্নে ভর করেই মাত্র ১৯ বছর বয়সেই মুম্বই পারি দেন বাপ্পি।
প্রথম পদক্ষেপ
ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে আরব সাগরের তীরে নিজের সুরের ঝংকার তুলতে চেষ্টার কোনও ক্রুটি রাখেননি। ১৯৭৩ সালে শমু মুখোপাধ্যায় পরিচালিত হিন্দি ছবি 'নানহা শিকারি' ছবিতে প্রথম সুরদান। তারপর ১৯৭৫-এ তাহির হুসেনের 'জখমী' ফিল্মে সুরারোপ। এরপর আর পিছন ঘুরে তাকাতে হয়নি। জাওয়ানি জানেমনের বেমিসাল সুরের যাদুতে বেহুঁশ হননি এমন শ্রোতার সংখ্যা নেই এই ভূ-ভারতে। তাঁর কাছের মানুষরা বলেন 'বেগ চিরা' স্মৃতি শক্তি ছিল বাপ্পি দার। যতটা তাড়াতাড়ি সবকিছু মাথায় নিতে পারতেন তা আর ভুলতেননা কখনও। আর এই ক্ষমতাই তাঁকে বানিয়েছে ডিস্কো কিং।
'মেরে ইয়ে গীত'
১৯৭৪ সালে রাহুল দেব বর্মণ খুব ব্যস্ত থাকায় 'মদহোস' ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল বাপ্পি লাহিড়ীর। সেই স্কোর খুব পছন্দ হয় পরিচালকের। সেই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করার জন্য আর ডির কাছ থেকে রীতিমত 'নো অবজেকশন সার্টিফিকেট' আনতে হয়েছিল। কিন্তু এর পরেই শুরু হয় বাপ্পির কালজয়ের যাত্রা।
১৯৭০, ১৯৮০, ১৯৯০ তিন দশক বলিউডে রাজ করেছেন তিনি। ১৯৭৬ সালে চলতে চলতে, ১৯৭৯ সালে লহু কে দো রঙ, ১৯৮১ তে ওগো বধূ সুন্দরী, ১৯৮২ তে নমক হালাল, ১০৮১তে ডিস্কো ডান্সার, ১৯৮৩তে হিম্মতওয়ালা, ১৯৮৪ তে কসম প্যায়দা করনে ওয়ালি কি, ১০৯৩ সালে গীতাঞ্জলী, তালিকা টা অনেক অনেক লম্বা।
'মেরে ইয়ে গীত'
১৯৭৪ সালে রাহুল দেব বর্মণ খুব ব্যস্ত থাকায় 'মদহোস' ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল বাপ্পি লাহিড়ীর। সেই স্কোর খুব পছন্দ হয় পরিচালকের। সেই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করার জন্য আর ডির কাছ থেকে রীতিমত 'নো অবজেকশন সার্টিফিকেট' আনতে হয়েছিল। কিন্তু এর পরেই শুরু হয় বাপ্পির কালজয়ের যাত্রা।
১৯৭০, ১৯৮০, ১৯৯০ তিন দশক বলিউডে রাজ করেছেন তিনি। ১৯৭৬ সালে চলতে চলতে, ১৯৭৯ সালে লহু কে দো রঙ, ১৯৮১ তে ওগো বধূ সুন্দরী, ১৯৮২ তে নমক হালাল, ১০৮১তে ডিস্কো ডান্সার, ১৯৮৩তে হিম্মতওয়ালা, ১৯৮৪ তে কসম প্যায়দা করনে ওয়ালি কি, ১০৯৩ সালে গীতাঞ্জলী, তালিকা টা অনেক অনেক লম্বা।
ডিস্কো দিওয়ানে
অন্যান্য মিউজিকের সগে বাপ্পি লাহিড়ীকে যে বাজনা ও সুরের জাদুকর বলা হয় তা হল ডিস্কো মিউজিক। ১৯৮২ তে ডিস্কো ডান্সার ছবির সেই বিখ্যাত গান, ইয়াদ আ রাহা হ্যায় তেরা প্যার, কিংবা 'আই অ্যাম আ ডিস্কো ডান্সার' গানে এক কথায় তুফান উঠেছিল আসমুদ্রহিমাচলে। জালতা হ্যায় জিয়া মেরা, প্যার মে কভি কভি, রাত বাকি বাত বাকি, এই তো জীবন, ঝুম ঝুম ঝুম বাবা, হরি ওম হরি, রাম্বা হো সাম্বা হো, প্যার মাঙ্গা হ্যায় তুম হি সে, তোফা লায়া, ন্যায়নো মে সপ্না, একের পর এক ব্লকবাস্টার হিট গান এক কথায় শ্রোতাদের পা কে স্থির রাখতে দিত না। বাংলায় তাঁর 'এই তো জীবন যাক না যেদিকে' আইকন হয়ে আছে। কমিক ক্লাসিক্যাল গানের মধ্যে নমক হালাল সিনেমার 'পগ ঘুঙরু বান্ধ মীরা নাচি থি' বরাবরের হিট।
গিনেস বুকে নাম
৩৩টি ছবির সুর দিয়ে ১৮০টি গান রেকর্ডিং করার জন্য গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জ্বলজ্বল করেছে বাপ্পি লাহিড়ীর নাম, যা ভারতে প্রথম। প্রথম এবং একমাত্র ভারতীয় সঙ্গীতকার হিসেবে ১৯৮৯ সালে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জোনাথন রসের লাইভ কন্সার্টে।
কালো চশমা আর সোনা
একতা কথা তিনি মজা করে বলতেন যে তাঁর কাছে ভগবানের অপর নাম হল সোনা। বাপ্পি লাহিড়ীর সোনার কালেকশন নিয়ে একবার আশা ভোঁসলে মজা করে বলেছিলেন বাপ্পি হলেন একটা চলাফেরা করা জুয়েলারি হাউজ। তবে শুধুমাত্র সোনার গয়নাই নয়, চকমকে লং কোট আর কালো সামগ্লাসে আলাদা স্টাইল ট্রেন্ড সেট করেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। আজও যা আইকন হয়ে রয়েছে।
ইনস্ট্রুমেন্টাল হিট
গানের সুরের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বাজনা বরাবরই বাপ্পি লাহিড়ীর সুর ও সঙ্গীতে স্থান পেয়েছে। বিশেষত ইলেকট্রিক গিটার ও পঙ্গো। নিজে খুব ভালো তবলা বাজাতে পারতেন বাপ্পি দা। তার তাঁর একাধিক গানে সিগনেচার টিউন বানিয়েছিলেন তবলা আর পঙ্গোকে। এছাড়াও সেই সময় সবথেকে আধুনিক মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করতেন একমাত্র বাপ্পি লাহিড়ীই। যা তাঁর সৃষ্টিকে এক অসামান্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।
কাঁদিয়ে চললেন বাপ্পি দা
আরও অনেক গান হয়ত সৃষ্টি করার বাকি ছিল। কিন্তু তার আগেই ৬৯ বছর বয়সেই শেষ হয়ে গেল বাপ্পিদার চলার পথ। ২০২১-এর এপ্রিলে করোনা ধরা পড়েছিল তাঁর। মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরেন। কিন্তু মঙ্গলবার গভীর রাতে 'অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া'য় আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালেই জীবনের অন্তিম শ্বাস নেন তিনি। গত একমাস ধরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী।
৩৩টি ছবির জন্য ১৮০টি গান রেকর্ড, গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি