ফ্যামিলি ম্যান ২-এর ভাস্করণ কি এলটিটিইর প্রভাকরণকে মনে করাচ্ছে! তামিল টাইগারের গোপন ডেরা কেমন ছিল
ফ্যামিলি ম্যান ২-এর ভাস্করণ কি এলটিটিইর প্রভাকরণকে মনে করাচ্ছে! তামিল টাইগারের গোপন ডেরা কেমন ছিল
অ্যামাজন প্রাইমের 'ফ্যামিলি ম্যান ২' (Famliy Man 2) কার্যত ঝড় তুলে দিয়েছে নেট দুনিয়ায়। অ্যাকশনে ঠাসা এই সিরিজে বিভিন্ন রাজনৈতিক চরিত্র যেন বহু চেনা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এমনই এক চরিত্র 'ফ্যামিলি ম্যান টু' এর ভাস্করণের চরিত্রটি। যার সঙ্গে অনেকেই মিল পাচ্ছেন প্রয়াত তামিল টাইগার প্রভাকরণের (Prabhakaran)।
ফ্যামিলি ম্যান টু-এর রাজনৈতিক চরিত্র
ইতিমধ্যেই সিরিজে প্রদর্শিত প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় সীমা বিশ্বাস অভিনীত চরিত্রটির সঙ্গে অনেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিল পাচ্ছেন। আর চরিত্রের পদবী 'বসু' হওয়ায় বাংলার প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে নিয়েও আলোচনা উঠে আসছে। এদিকে, এই নয়া সিরিজের অন্যতম অংশ শ্রীলঙ্কার বিদ্রোহী তামিল সংগঠন। সিরিজে দেখানো হয়েছে এই তামিল সংগঠন শ্রীলঙ্কার সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে তাদর আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বহু বছর আগে শ্রীলঙ্কার বুকে এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায় এভাবেই উঠে এসেছিল 'লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলাম' বা এলটিটিই-এর হাত ধরে। যার প্রধান ছিলেন ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ । 'ফ্যামিলি ম্যান ২' তে সেরকমই এক চরিত্রের নাম রয়েছে ভাস্করণ। ভাস্করণের সঙ্গে প্রভাকরণের কতটা মিল বা অমিল রয়েছে, সে বিতর্ক সরিয়ে রেখে , দেখা যাক প্রভাকরণের গোপন ডেরায় কী ঘটত শ্রীলঙ্কার বুকে? 'রিয়েল লাইফে' কীভাবে চলতে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি।
কে এই প্রভাকরণ?
শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে এই প্রভাকরণ একজন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিত্ব। একটি স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে প্রভাকরণ শ্রীলঙ্কার বুকে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে। ১৯৭৬ সালে গঠিত হয় এলটিটিই। শ্রীলঙ্কায় সিংহলিদের দ্বারা তামিলদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে এই বিদ্রোহের রাস্তা নেয় প্রভাকরণ। সুচতুর গেরিলা যুদ্ধে পটু এই নেতাকে ঘিরে একাধিক রোমহর্ষক ঘটনা রয়েছে এলটিটিই-র ইতিহাসে।
১৯৮৩তে জাফনায় ভয়াবহ হামলা
আটের দশকে শ্রীলঙ্কায় তামিলদের উপর নারকীয় সংহারের ঘটনা উঠে আসতে থাকে। এরপর ১৯৮৩ সালে জাফনায় একটি শ্রীলঙ্কার সেনার টহল অভিযানে ভয়াবহ হামলা চালায় এলটিটিই। যে হামলার নারকীয়তা অভাবনীয় বলে বর্ণনা করেছেন অনেকেই। ১৩ জন শ্রীলঙ্কান সেনা সই ঘটনায় মারা যেতেই এলটিটিইর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষিত হয় সিংহলি সরকারের তরফে। শ্রীলঙ্কায় শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
কারা ছিলেন প্রভাকরণের পরিবারে?
শ্রীলঙ্কার জাফনায় জন্মানো প্রভাকরণ পরিবারের ৪ ভাইবোনের অন্যতম ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর পরিবারে স্ত্রী ও দুই সন্তান আসে। এদিকে, প্রভাকরণের নেতৃত্বে ততক্ষণে আটের দশকে শ্রীলঙ্কার উত্তরভাগে কার্যত সমান্তরাল সরকারের শাসন শুরু হয়েছে। প্রবল শক্তিশালী গেরিলা যুদ্ধনীতিতে সম্বল করে প্রভাকরণ গোপন ডেরা থেকে চালিয়ে যেতেন নিডের যাবতীয় কর্মকাণ্ড।
রাজীব গান্ধীর হত্যা ও ওয়েব সিরিজের প্লট
ওয়েব সিরিজ 'ফ্যামিলি ম্যান ২' তে দেখানো হয়েছে যে , তামিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার ছক কষছে। যা রুখতে তৎপর ভারতের গোয়েন্দারা। ঘটনা বারবার ১৯৯১ সালের ২১ শে মের কথা মনে করিয়ে দেয়। যেদিন তামিলনাড়ুর শ্রীপেরম্বুদুরে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যা হয়। জানা যায়, সেই হত্যা প্রভাকরণের নির্দেশেই হয়। আর এই হত্যারকাণ্ডের জন্য শিবরাসন নামে এক ব্যক্তিকে কাজে লাগায় তামিল টাইগাররা। সেদিনও 'মানব বোমা' ব্যবহার করেছিল এলটিটিই।
কেমন ছিল প্রভাকরণের গোপন ডেরা?
শ্রীলঙ্কার মুল্লাইতিভু জেলার পুথুকুরিইউরুপ্পা এলাকায় ছিল তামিল টাইগার প্রভাকরণের গোপন ডেরা। সেখানেই ছিল তাঁর সিক্রেট বাঙ্কার। বর্তমানে তা শ্রীলঙ্কার সেনার আওতায়। এলাকার নাম 'টাইগার ট্রেল'। গভীর বানি-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই ডেরার প্রবেশ পথ। রয়েছে কাদায় ঘেরা রাস্তা। যা সহজে পার করা সাধারণের পক্ষে দুঃসাধ্য। এই গোপন ডেরা এমনভাবে বানানো যে সকলে অলক্ষ্যে এখানে গাড়ি ঢুকে গেলেও আকাশপথে তা দেখা যাবে না। গোটা এলাকা জুড়ে রয়েছে এক আজব চক্রব্যুহ।
৬০ একরের গোপন ডেরা
পাঁচটি স্তরীয় নিরপত্তা ব্যবস্থা ছিল প্রভাকরণের এই গোপন ডেরায়। তারের বেড়ার পর, পাতা ছিল মাইন , ছিল প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুরদের জায়গা। এছাড়াও অন্তত ১০০ জন গার্ড সেখানে ছিল।
কী ঘটত প্রভাকরণের গোপন চেম্বারে?
শোনা যায়, এলাকায় যাঁরা এলটিটিইর বিরোধিতা করতেন, তাঁদের ধরে নিয়ে প্রভাকরণের গোপন চেম্বারে মোটা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত। যে শিকল হাতি বাঁধার কাজে ব্যবহার হয়। ১০-১২ ফুটের জেলে তাঁদের বন্দি করা হত। জেলের দেওয়াল জুড়ে ছিল রক্তের দাগ।
সপুত্র প্রভাকরণের মৃত্যু
ঘটনা ২০০৯ সালের। যখন শ্রীলঙ্কার সেনা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে প্রভাকরণের গোপন এলাকা। পালাবার পথ তখন আর পায়নি এই তামিল নেতা। শ্রীলঙ্কার সেনার হাতে সেই দিন মৃত্যু হয় প্রভাকরণের। একই সঙ্গে মারা যায় তার সন্তান চার্লস অ্যান্টনি।
ছবি সৌজন্য -অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও