সকলকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে গেলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, ফিরে দেখা অভিনেতার সফর
সকলকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে গেলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, ফিরে দেখা অভিনেতার সফর
'জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে’! লাইনটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা বঙ্গভূমির প্রতি থেকে নেওয়া। কথাটা চিরন্তন ও ধ্রুব সত্য। তবুও কী কাছের মানুষ চলে গেলে চোখের জলের বাঁধ মানানো যায়। আজও ঠিক তাই হল! সকালেই মন ভারাকান্ত হয়ে ওঠে সকলের। সবার প্রিয় টলিউডের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্য়ায় আর নেই! আমাদেরকে ছেড়ে পরলোক গমন করেছেন তিনি।
কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন অভিনেতা
১৯৬৪ সালে ৩০ এপ্রিল কলকাতার বরানগরের জন্মগ্রহণ করেছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭। কয়েক দিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন অভিনেতা। কাজ পাগল মানুষটি কিন্তু অসুস্থ হলেও কাজ ঠিক চালিয়ে গেছেন। গতকাল একটি রিয়েলিটি অংশ নিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ শ্যুটিং শেটে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক কষ্টেই বাড়ি ফিরলেন তিনি। বাড়ি ফিরেও রেহাই মিলল না অসুস্থতা থেকে। তাঁকে সুস্থ করার জন্য স্যালাইনের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। যদিও ভাগ্য সহায় দেয় তাহলে কী করা সম্ভব ! শেষ রক্ষা করতে পারলো না পরিবার। আজ ভোরেই পরিবারসহ ভক্তদের কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন অভিনেতা। তাঁর মৃত্যু খবরের শোকস্তব্ধ টলিউড ইন্ডাস্টির।
কীভাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু
১৯৮৬ সালে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি অনেক বাংলা চলচ্চিত্র এবং ধারাবাহিকে অভিনয় করে অনুগামীদের মন কেড়েছিলেন। সেই অনুগামীদেরই আজ কষ্ট দিতে তিনি দুবার ভাবলেন না! তিনি মা, ওরা চার জন, মায়ার বাধন, গীত সংগীত সিনেমায় অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্যের কর্মের মধ্যে পরে দহন, বারিওয়ালি ও হ্যালো।
রেখে গেলেন স্ত্রী, সন্তানকে
'হায়রে পিছন ফিরে দেখল নারে কাঁদে যে কার মন' ২০০৮ সালে সংযুক্তা চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছিলেন তিনি। ২০২২ সালে তাঁর চিরবিদায় শুধু ভালোবাসার সঙ্গে শুধু দিয়ে গেলেন চোখের জল। মনে মানুষকে ছেড়ে থাকা কী নিদারুণ কষ্ট তা একমাত্র সে বোঝে। তাঁর একটি সন্তান আছে।
বন্ধ হল লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন
কাজ পাগল লোকটি শ্যুটিং সেট, লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন থেকে একদম দূরে থাকতে পছন্দ করতেন না। অভিনেতার মৃত্যু অনেকই মানতে পারছেন না। জানা গিয়েছে অসুস্থ হওয়ার পর অনেক বার বমিও করেছিলেন তিনি। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা কথা বলেছিলেন সহকর্মীরা। কিন্তু সে কথাতে রাজি হননি। বাড়িতে চিকিৎসা হোক সেটাই তিনি চেয়েছিলেন।
বক্স অফিস কাঁপাতেন তিনি
একটা সময় ছিল যখন টলিউড ইন্ডাস্টিতে অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের বক্সঅফিসকে কাঁপিয়ে ছিলেন। গত দু'বছর ধরে খড়কুটো ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলেন অভিনেতা। তাঁর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকপ্রকাশ করেছেন তাঁর সহকর্মীরা। শোকপ্রকাশ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়- সহ অনেক পরিচালক থেকে অভিনেতা ও অভিনেত্রী সহ অনেক কলাকৌশলীরা। আর গুনগুণের বাবা চরিত্রের দেখা মিলবে না অভিনেত্রাকে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
প্রথম কত সালে তিনি অভিনয় শুরু করেছিলেন
সালটা ১৯৮৬ সময় তরুণ মজুমদার পরিচালিত পথভোলা সিনেমা দিয়ে তিনি অভিনয় জগতের আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, তাপস পাল, উৎপল দত্ত, সন্ধ্যা রায় তাবড় তাবড় তারকাদের তিনি অভিনয় করেছেন।
সেরা ধারাবাহিক
১৯৮৮ থেকে ৯০ দশকের মোট ৮টি ছবিতে অভিনয় করে বিশেষ নজর কেড়েছে অভিষেক। ওরা চার জন, তুফান, পাপি, অমর প্রেম যা বিশেষ নজর কেড়েছিল দর্শকদের। ২০১২ থেকে ছোট পর্দায়ও অভিনয় করলে তিনি। প্রথম অভিনয় করেছিলেন টাপুর টপুর ধারাবাহিকে। আঁচল, ইচ্ছেনদী, অন্দর মহল, ফাগুন বউ সহ একাধিক ধারাবাহিকে অভিনেতা দেখা মিলেছে। ২০১৯ থেকে ২০২২ মধ্যে তিনি খড়কুটো ও মোহর ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করেছিলেন কিন্তু যা শেষ করতে পারলেন না।
শোকাহত টলিউড ইন্ডাস্টিরমহল
বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি পড়াশোনা করেছেন। শেঠ আন্দরাম জয়পুরীয়া কলেজ থেকে তিনি লেখা পড়া শিখেছেন। কাজ ছাড়াও তিনি মানুষকে খুব আপন করতেন। তাই তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত ইন্ডাস্টিরমহল সহ অনেকেই। তাঁর মৃত্যুতে যে টলিউডে যে ক্ষতি তা কী সত্যিই পূরণ হবে কখনও! 'তুমি যেখানেই থেকো ভালো থেকো।'
অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ টলিপাড়া, শোক জ্ঞাপন সোশ্যাল মিডিয়ায়