প্রেম, বিচ্ছেদ, বিতর্ক, তাঁর মতই বর্ণময় স্বস্তিকা মুখ্যোপাধ্যায়ের জীবন
তাঁর অসাধারণ রূপ আর কটা চোখের চাহনিতে বেসামাল হননি এমন পুরুষের সংখ্যা বোধহয় নেই বললেই চলে। কারণ তিনি স্বস্তিকা মুখ্যোপাধ্যায়। দেখতে দেখতে জীবনের ৪১ বসন্ত পেরিয়ে গেলেও আজও তাঁর রূপের আগুনে প্রজাপতির মত ছুটে যান দর্শককুল। এথনিক থেকে ওয়েস্টার্ন, তাঁর অঙ্গে যে পোশাক ওঠে তারা বধহয় নিজেদেরই ভাগ্যবান মনে করে। কিন্তু বাস্তব জীবনে ততটাও সুন্দর নয় স্বস্তিকার জীবন।

শৈশব ও বেড়ে ওঠা
১৯৮০ সালের ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন স্বস্তিকা। বাবা জনপ্রিয় অভিনেতা সন্তু মুখ্যোপাধ্যায়। কলকাতার কারমেল স্কুল, "সেন্ট তেরেসা স্কুল" এবং "গোখেল মেমরিয়াল স্কুল" থেকে পড়াশোনা শেষ করেন স্বস্তিকা মুখার্জি।

বিবাহ বিভীষিকা
১৯৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সাগর সেনের পুত্র প্রমিত সেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু তাদের বিবাহিত জীবন সুখী ছিলনা। তাদের দম্পতি জীবন পৃথক হওয়ার আগে মাত্র দুই বছর স্থায়ী ছিল। তিনি তার স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক অপব্যবহার এবং গর্ভবতী অবস্থায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০০০ সালে জন্ম নেয় মেয়ে অন্বেষা।

কেরিয়ারের প্রথম অধ্যায়
কেরিয়ারের প্রথম দিকে নাচ দিয়ে যাত্রা শুরু করেন স্বস্তিকা। ২০০১ সালে তিনি আনন্দ শঙ্কর সেন্টার "কালচার লার্নিং ড্যান্স"-এ ভর্তি হন, যেখানে তিনি তনুশ্রী শংকরের কাছে থেকে নৃত্যর তালিম নেন। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করার সময় টিভি সিরিয়াল 'দেবদাসী'তে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পান। তাঁর বিপরীতে ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা সুমন।
এরপর 'এক আকাশের নিচে' এবং 'প্রতিবিম্ভ' ধারাবাহিকেও পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন।

ফিল্ম কেরিয়ার
২০০৩ সালে তিনি তার বড় পর্দায় উর্মী চক্রবর্তীর পরিচালনায় "হেমন্তের পাখি" ছবিতে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর কেরিয়ারে বড় ব্রেক রবি কিনাগির 'মস্তান'। এরপর ক্রান্তি, কৃষ্ণকান্তের উইল, পার্টনার ফল্মে সুপারস্টার জিতের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। তবে তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট পরিচালক অনিক দত্তের 'ভূতের ভবিষ্যৎ' ছবি। সেখানে 'কদলিবালা'র চরিত্র টক অফ টাউন হয়ে ওঠে। এছাড়াও পরিচালক সৃজিত মুখার্জির মিশর রহস্য, জাতিস্মর, হোটেল 'সাজাহান রিজেন্সি' তাঁর হিট লিস্টে সামিল।

বলিউডে স্বস্তিকা
টলিউডের পাশাপাশি বলিউডেও কাজ করেছেন এই বং সুন্দরী। পরিচালক আয়ুষ রায়নার মুম্বাই কাটিং-এ অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন স্বস্তিকা। এরপর জশরাজ ব্যানারে পরিচালক দিবাকর ব্যানার্জির 'ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি'তে তাঁর সাহসী অভিনয় নজর কেরেছিল সবার। সুশান্ত সিং রাজপুতে শেষ মুভি 'দিল বেচারা' তে তাঁর অভিনয়ও খুব প্রশংসিত হয়।

সম্পর্ক ও বিতর্ক
তবে তাঁর বাস্তব জীবন মোটেও মসৃণ ছিল না। অসফল বিয়ের পর একাধিক সম্পর্কে তাঁর নাম জড়ায়। প্রথম তাঁর সঙ্গে তারকা জিতের প্রণয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে খবর রটেছিল। এরপর অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও এককালে তাঁর প্রেমের খবরে সরগরম ছিল টলিপাড়া। পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়কে ঘিরেও স্বস্তিকাকে নিয়ে হয়েছে বহু বিতর্ক।
কিন্তু এসবের মাঝেও সাহসিনী স্বস্তিকা বরাবরই বলে এসেছেন তিনি যেমন তিনি তেমনই।

ছবি সৌ:ইনস্টাগ্রাম