তৃণমূলে কর্তৃত্ব কার? বিতর্কের অবসান ঘটাতে শেষে আসরে নামতে হল খোদ মমতাকেই
তৃণমূলে কর্তৃত্ব কার? বিতর্কের অবসান ঘটাতে শেষে আসরে নামতে হল খোদ মমতাকেই
তৃণমূলে কর্তৃত্ব কার? সে প্রশ্নের সোজাসাপ্টা জবাব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমো হিসেবে মমতার নাম লেখা হলেও হালে যেন কর্তৃত্বে দেখা যাচ্ছিল তথাকথিত উত্তরসূরিকে! তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা চলছিল। ঘরে-বাইরে অনেক তো মমতার কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছিলেন। আপাতত সেই বিতর্কের অবসান ঘটালেন খোদ মমতা।
দলের রাশ মমতার হাতেই, কাউকে ছাড়ছেন না
কিন্তু আদৌ কি ঘটল বিতর্কের অবসান? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মন্তব্যে একপ্রকার প্রকাশই করে দিয়ে গেলেন, দলের রাশ তাঁর কাছ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল বা বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিতর্ক শুরু হতে তিনি দলের রাশ নিজের হাতেই রাখছেন, কাউকে ছাড়ছেন না। দলে শেষ কথা তিনিই। এখনই তাঁর হাত কর্তৃত্ব সরলে বিদ্রোহের সম্ভাবনা প্রবল।
তৃণমূলে মমতাই শেষ কথা, বলতে হল ফলাও করে
সম্প্রতি বিজেপিতে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে রদবদলে। মমতা চান না এই পরিস্থতিতে তাঁর দলেও এমন কোনও জটিলতা তৈরি হোক। সম্প্রতি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে যে বৈপরীত্য তৈরি হয়েছে, তা ঘুচিয়ে দলকে এক পথে পরিচালিত করতে বদ্ধপরিকর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে জন্যই তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দলের কর্তৃত্ব তাঁর হাতেই রয়েছে। অর্থাৎ তৃণমূলে মমতাই শেষ কথা।
যে প্রশ্ন প্রাক-বিজেপি পর্বে তুলেছিলেন শুভেন্দু
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রথম প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অদিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে শেষবার বৈঠকে বসার সময় জানিয়েছিলেন যতদিন দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সির তত্ত্বাবধানে ছিল, সবই ঠিক ছিল। কিন্তু এখন দল চলে অভিষেক-পিকের অঙ্গুলিহেলনে। এই তৃণমূল আর পূর্বের তৃণমূলের অনেক তফাৎ।
অভিষেক না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশ্নে কতৃত্ব
তৃণমূলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্তৃত্ব রয়েছে নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সর্বেসর্বা, তা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব যে আগের তুলনায় অনেকাংশের বেড়েছে তৃণমূলে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার কারণ একুশের অভূতপূর্ব সাফল্যের পর একা অভিষেকের পদোন্নতি হয়েছে। অভিষেক হয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
অভিষেকের সেনাপতিত্বে ভিনরাজ্যে পাখির চোখ
অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেনাপতি করেই তৃণমূল সর্বভারতীয় পর্যায়ে চলতে চাইছে। একুশের ভোটে জিতেই অভিষেক জানিয়ে দিয়েছিলেন, এবার তাঁর লক্ষ্য ভিনরাজ্যে ফুল ফোটানো। সেইমতোই ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের পরিকল্পনা মতো তৃণমূল ডানা মেলতে শুরু করে ত্রিপুরা ও গোয়া রাজ্যে। ত্রিপুরার সংগঠন বিস্তারের পর এবার গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চলেছে তৃণমূল।
দলকে সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কার
এই পরিস্থিতিতে দলকে সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব যখন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন অভিষেক, তক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই এখন তৃণমূলে কর্তৃত্ব। তিনিই এখন সংগঠনের সর্বসর্বা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতটা না তৃণমূল সুপ্রিমো, তার থেকেও বেশি মুখ্যমন্ত্রী!
মমতাই সর্বেসর্বা দলের, সংগঠন দেখবেন তিনিই
এই দ্বন্দ্বে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুপ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। এবার সেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই সর্বেসর্বা দলের। তাঁর কথাই শেষ কথা। সংগঠন দেখবেন তিনিই। দলের রাশ তিনি নিজের হাতে রাখছেন, তা ফলাও করে জানিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে যেন আর কোনও বিতর্কের অবতারণা না করা হয়, তাও বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
কখনই বাংলাকে উপেক্ষা করে ভিনরাজ্যের নজর নয়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন স্পষ্ট করে দেন, তৃণমূলের পাখির চোখ হল বাংলা। বাংলাকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেবে তৃণমূল। ভিনরাজ্য নিয়ে চিন্তা তারপরে। কখনই বাংলাকে উপেক্ষা করে ভিনরাজ্যের দিকে নজর দেবে না তৃণমূল। এভাবেই দলের অভিমুখ স্পষ্ট করে দিলেন মমতা। মমতার এই কথা নিয়ে এখন চর্চা চলছে। কেন তিনি ফলাও করে বললেন ভিনরাজ্যের থেকে বাংলাই সর্বদা বেশি গুরুত্ব পাবে?
অভিষেক তৃণমূলে সেকেন্ড ইন কম্যান্ডের গুরুত্ব পান
প্রশ্ন উঠেছে, মমতা কি তবে কাউকে বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন। আসলে একুশের নির্বাচনে মমতার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মোদী-শাহরাও মমতার সঙ্গে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন অভিষেককে। এই গুরুত্ব বৃদ্ধিতে অভিষেক তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হয়ে উঠেছিলেন। আর একটা মহল তাঁকে তৃণমূলের প্রধানও ভাবতে শুরু করেছিল।
ড্যামেজ কন্ট্রোলে বার্তা দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে মমতা-অভিষেক নিয়ে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিষেককে অস্বীকার করেছেন। অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার মডেল আবার সেই সেই বিতর্কেকে শিখরে তুলে দিয়েছে। এরপর অভিষেক ভিনরাজ্য থেকেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে বার্তা দেন তাঁর নেত্রী মমতাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই তিনি নেত্রী মানেন। তিনি একজন সৈনিক মাত্র।
তৃণমূল তৈরির মেহনত স্মরণ করিয়ে বার্তা মমতার
কিন্তু তারপরও বিতর্কের অবসান হয়নি। শেষে আসরে নামতে হয় স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতা জানান, দলের সংগঠন তিনিই দেখবেন, আর কেউ নন। তিন-চার বছর কাজ করে কেউ নিজেকে বড় কিছু ভাবলে ভুল হবে। অনেক কষ্ট করে এই দলটা তিনি গড়েছেন। অনেকেরই মেহনত আছে। তা বলে দলে নিজেকে কেউ যেন শেষ কথা না মনে করেন। মমতার এই বক্তব্যে স্পষ্ট তিনিই শেষ কথা তৃণমূলে।