গ্রামোন্নয়নে টার্গেট, গরিবদের জন্য কল্পতরু বাজেট পেশ জেটলির
গ্রামীণ ভারতই আসল ভারত। দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ এখনও গ্রামে বাস করে। সেকথা মাথায় রেখেই গ্রামীণ ভারতের শক্তিবৃদ্ধিতে বাজেটকে ব্যবহার করলেন জেটলি।
গ্রামীণ ভারতই আসল ভারত। দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ এখনও গ্রামে বাস করেন। সেকথা মাথায় রেখেই গ্রামীণ ভারতের শক্তিবৃদ্ধি করতে বাজেটকে ব্যবহার করলেন জেটলি। গ্রামাঞ্চলের বিকাশ হলে, গ্রামীণ জনসংখ্যা শক্তিশালী হলে দেশ শক্তিশালী হবে। এই ভাবনাকে সামনে রেখে আগামী লোকসভা ভোটের আগে এক ঢিলে দুই পাখি মারল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
[আরও পড়ুন:জেটলির বাজেটকে এতটাই কদর্য বললেন মনমোহন]
যদিও কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার পর নানা মহল থেকে নানা আলোচনা ভেসে আসছে। কেউ বলছেন আগামী লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। গ্রামীণ জনসংখ্যা বা বলা ভালো ভোটারদের ধরতেই শহুরে জনসংখ্যাকে কার্যত উপেক্ষা করে গ্রামোন্নয়নকে টার্গেট করেছে কেন্দ্র। আবার কেউ বলছেন, যে কাজটা আগের সরকারের এতবছরে করে ফেলার করার কথা ছিল, এতদিনে এসে সেই কঠিন পথই বেছে নিলেন জেটলি।
[আরও পড়ুন:'যাঁরা হাওয়াই চটি পড়েন তাঁরা হাওয়াই জাহাজে চড়বেন',বিমান পরিষেবায় যা ঘোষণা হল বাজেটে]
এবারের বাজেটের সিংহভাগ জুড়েই ছিল দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা। শুরুতেই বাজেট বক্তৃতায় জেটলি জানিয়ে দেন, দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তের জীবনকে আরও সহজ করে তোলার উপর জোর দিচ্ছে সরকার। কৃষকদের আয় ২০২২ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করার চেষ্টা হচ্ছে। সেই বিষয়ে কেন্দ্র দায়বদ্ধ। বিশেষ করে ছোট ও প্রান্তিক কৃষক, খেতমজুরদের প্রতি সরকারের দায় বেশি। পাশাপাশি মাছ চাষ, পশুপালন, ডেয়ারি শিল্পে সরকারের নজর রয়েছে।
শুধু কৃষকদের দিকেই নয়, গ্রামীণ জনসংখ্যার একটা বড় অংশ মহিলাদের মানোন্নয়নের প্রতিও সমান দৃষ্টি রয়েছে সরকারের। আগের পাঁচ কোটির পরে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় ৮ কোটি এলপিজি সংযোগ দেবে সরকার। দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে কেন্দ্র তৎপর হয়েছে। এর পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশের পিছিয়ে পড়া অংশকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছে সরকার। উপজাতি এলাকায় একলব্য বিদ্যালয় তৈরির কথা জানানো হয়েছে। শুধু কী তাই! আগামী অর্থবর্ষের মধ্যে গ্রাম-শহর মিলিয়ে গরিব মানুষদের জন্য ২ কোটি নতুন শৌচালয় তৈরি হবে। মৌলিক স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বড় যে ঘোষণা জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনায় ১০ কোটি পরিবারকে এর আওতায় আনা হয়েছে। পরিবার পিছু বছরে ৫ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্য বীমা দেবে সরকার। যার ফলে দেশের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এর সুবিধা পাবেন। প্রতিটি রাজ্যে একটি করে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ তৈরির ঘোষণাও হয়েছে।
মোদীর বাজেটে তপশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য প্রায় ৬০০টি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তার জন্য বাজেটে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দিকেও নজর দিয়েছে মোদী সরকার। এছাড়া বছরে ২৫০ কোটি টাকার লেনদেন করে যে সমস্ত সংস্থা তাদের কর্পোরেট কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
ফলে সবমিলিয়ে যেটা দেখা যাচ্ছে তাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, কৃষি সহ একাধিক ক্ষেত্র যেখানে প্রান্তিক মানুষদের ভিড় বেশি, সেখানে বেশি মনসংযোগ করা হয়েছে বাজেটে। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, অনেক বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছেন অরুণ জেটলি। সেটা কতটা রাখতে পারবেন তা বোঝা যাবে একবছ পরই। তবে ভোটের দিকে তাকিয়ে হলেও সমাজের প্রান্তিক মানুষদের দিকে তাকাতেই হতো। সেই কাজটাই করেছে সরকার। গ্রামীণ ভারতের উন্নতিতেই দেশের সার্বিক উন্নতি। একথা মাথায় জেটলি বাজেট পেশ করেছেন কিনা তার উত্তর সময় দেবে।
[আরও পড়ুন:বাজেটের পর কোন জিনিসের দাম বাড়ল, কোন জিনিসের কমল জেনে নিন একনজরে]