দুই থেকে ১৮ হয়ে আবার ২-এ! বিজেপির মাথায় হাত সঙ্ঘের সাম্প্রতিক সমীক্ষা রিপোর্টে
দেশে মোদীর উত্থানের বছরে বাংলা থেকে ২ জন সংসদ পেয়েছিল বিজেপি। তার ২০১৯-এ তা এক লাফে বেড়ে হয়েছিল ১৮। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের হৃদকম্প ধরিয়ে দেওয়ার পক্ষে তা যথেষ্ট ছিল।
দেশে মোদীর উত্থানের বছরে বাংলা থেকে ২ জন সংসদ পেয়েছিল বিজেপি। তার ২০১৯-এ তা এক লাফে বেড়ে হয়েছিল ১৮। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের হৃদকম্প ধরিয়ে দেওয়ার পক্ষে তা যথেষ্ট ছিল। কিন্তু একুশে অভুতপূর্ব কামব্যাক করেছে তৃণমূল। সেই ধাক্কা আসন্ন ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ফের ২-এ নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে সঙ্ঘ।
২০১৪-র অবস্থায় ফিরে যাবে বিজেপি!
সম্প্রতি সঙ্ঘ এক জনসমীক্ষা করেছিল দেশজুড়ে। তার অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলাও। কিন্তু বাংলা নিয়ে সঙ্ঘের রিপোর্টে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৯-এ যেখানে বাংলা থেকে ১৮টি সংসদীয় আসনে জিতেছিল বিজেপি, এবার তা ঠেকবে মাত্র দু'য়ে। অর্থাৎ সেই ২০১৪-র অবস্থায় ফিরে যাবে বিজেপি।
সঙ্ঘ রিপোর্টে স্পষ্ট বুমেরাংয়ের ছবি
সঙ্ঘ রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এই মুহূর্তে বিজেপির জন্য কোনও আসনই নিরাপদ নয়। তার মধ্যে এখন বলতে গেলে আর কোনও আসনই নিরাপদ নয়। বিজেপি শোচনীয়ভাবে হারতে পারে এবার লোকসভা নির্বাচনে। বাংলায় যখন আরও বেশি আসনে জিতে বঙ্গ বিজেপি কামব্যাকের স্বপ্ন দেখছে, তখন সঙ্ঘ রিপোর্টে স্পষ্ট বুমেরাংয়ের ছবি।
বিজেপি বাংলায় বড়জোর দুটি আসন পাবে!
সঙ্ঘ তাদের সমীক্ষা রিপোর্টে জানিয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজেপি বাংলায় বড়জোর দুটি আসনে জিততে পারে। তাও একেবারে নিশ্চিত নয় দু'টি আসন। তবুও সম্ভাব্য জয় হতে পারে দার্জিলিং ও বনগাঁ আসনে। অন্য কোনও আসনে বিজেপি বর্তমানে জয় পাওয়ার জায়গায় নেই। দ্রুর পরিস্থিতি বদল না হলে বিজেপি বাংলা থেকে হতাশা ছাড়া কিছুই লাভ করতে পারবে না এবার। এমনটাই মত সঙ্ঘ পরিবারের।
বঙ্গ বিজেপিতে ক্ষয় রোগ ধরা পড়েছে
সঙ্ঘ সম্প্রতি সারা দেশজুড়ে সমীক্ষা করেছিল। ২০২৪-এ বিজেপি ও তাঁর মিত্রশক্তিরা কতগুলি আসন কন রাজ্যে লাভ করতে পারে। সেই রিপোর্টে বাংলার জন্য আশাব্যাঞ্জক কিছউ দেখছে না আরএসএস বা সঙ্ঘ। তাদের সমীক্ষায় ধরা পড়েছে বঙ্গ বিজেপিতে ক্ষয় রোগ ধরা পড়েছে। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন।
বিজেপি ক্ষয়িষ্ণু! লুকিয়ে রয়েছে সিঁদুরে মেঘ
আরএসএস-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলায় বিজেপি দ্রুত হারে গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা কমছে। এই মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও লক্ষণও নেই। মোদীর আমলে বাংলায় বুকে ২ দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। ফের সেই দুয়ের গেরোয় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বাংলার মানুষ যেভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিজেপি থেকে তাতে লুকিয়ে রয়েছে সিঁদুরে মেঘ।
বাংলার বুকে বিজেপি ফের অপ্রসাঙ্গিক!
তবে কি ২০২৪ সালে বাংলার বুকে বিজেপি ফের অপ্রসাঙ্গিক হয়ে পড়বে। কেননা যেভাবে সঙ্ঘ মাত্র দুটি আসন জয়ের কথা বলেছে এবং তাও নিশ্চিত নয় বলে ব্যাখ্যা করেছে, তাতে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সঙ্ঘ মনে করছে বাংলায় একমাত্র গোর্খা আর মতুয়াদেরই পাশে পাবে বিজেপি। তাঁদের দাক্ষিণ্যেই দুটি আসন মিলতে পারে। নতুন নিট ফল হতে পারে জিরো।
প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিজেপি পূরণ করতে পারেনি।
এখানে আবার প্রশ্ন উঠেছে এই মুহূর্তে গোর্খা ও মতুয়াদের মধ্যেও বিজেপি বিরোধী ক্ষোভের আগুন ধিকধিক করে জ্বলতে শুরু করেছে। কারণ তাঁদের বারবার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি, তা পূরণ করতে পারেনি। এবার তাহলে তাঁদের কাছে কী মুখে যাবে বিজেপি, কোন মুখে তাঁদের কাছে ভোট চাইবে। তাই অনিশ্চিতের খাতায় রয়েছে এই দুটি আসনও। তবে একটাই ইতিবাচক যে, দু'টি ক্ষেত্রেই তৃণমূল এখনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
বাংলার বুকে বিজেপি বড় ভুল করেছে
কিন্তু কেন এই বিপর্যয়, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে সঙ্ঘ। সঙ্ঘের রিপোর্টে উঠে এসেছে, বাংলার বুকে বিজেপি বড় ভুল করছে দলবদলু নেতাদের গুরুত্ব দিয়ে। বিজেপি একুশের বিধানসভায় দলের পুরনো মুখদের কোনও গুরুত্ব না দিয়ে নতুনদের প্রাধান্য দিয়েছিল। কিন্তু সে অর্থে নতুনরা তেমন সাফল্য এনে দিয়ে পারেনি। উল্টে পুরনোরা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।
তৃণমূলেরই বাদ পড়া নেতাদের গুরুত্ব বিজপিতে!
দলের পুরনোদের না গুরুত্ব দেওয়া বাংলার মানুষ ভালো চোখে দেখেনি। বাংলার মানুষের কাছে বিজেপি মানে তৃণমূলের বি টিম হয়ে গিয়েছিল। তাই তৃণমূলের বিরোধিতায় তৃণমূলেরই বাদ পড়া নেতাদের তাঁরা গুরুত্ব দেয়নি। তার মাশুল গুণতে হয়েছে একুশের ভোটে, চব্বিশের ভোটেও তার প্রভাব শোচনীয়ভাবে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
দু'দিক দিয়েই ক্ষয় হয়ে চলেছে বিজেপির
এখন বিজেপিতে যেভাবে ভাঙন ধরে চলেছে। যেভাবে দল থেকে ইস্তফার হিড়িক পড়েছে এবং তার নেপথ্যে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব উঠে আসছে, যেভাবে পুরনোরা এখনও অবহেলিত হয়ে আসছে, তাতে বিজেপি তেমন কোনও আশার আলো দেখাতে পারছে না। দলবদলুদের গুরুত্ব দেওয়ায় দলের পুরনো বহু নেতা এখনও নিষ্ক্রিয়। আর দলবদলুদের অনেকে ফিরে গিয়েছেন পুরনো দলে। অর্থাৎ দু'দিক দিয়েই ক্ষয় হয়ে চলেছে বিজেপির।