রথের দিন শেষ মহরীর মৃত্যুর সঙ্গে জগন্নাথ মন্দিরে সমাপ্ত শতাব্দী প্রাচীন ‘দেবদাসী প্রথা’
রথের দিন শেষ মহরীর মৃত্যুর সঙ্গে জগন্নাথ মন্দিরে সমাপ্ত শতাব্দী প্রাচীন ‘দেবদাসী প্রথা’
সোমবার থেকে ভগবান জগন্নাথ দেবের পুরীর রথযাত্রা শুরু হল। আর এর এই শুভদিনে শেষ হল শত শত বছরের পুরনো রীতি 'দেবদাসী সেবা’। কারণ জগন্নাথ মন্দিরের শেষ দেবদাসী মহরী পরশমণি প্রয়াত হয়েছেন। ৯২ বছর বয়সী দেবদাসী ভগবান জগন্নাথের শেষ সেবায়ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
শেষ দেবদাসীর মৃত্যু
বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি গত দশ বছর ধরে মন্দিরে গীত গোবিন্দ আবৃত্তি করার পরিষেবা দিতে পারেননি। গত আট দশক ধরে পরশমণি ভগবানের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন কিন্তু ২০১০ সালের পর তাঁর বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি এই সেবা চালিয়ে যেতে পারেননি। তাঁর আত্মীয় প্রসন্ন কুমার দাস শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। জানা গিয়েছে, শনিবার ঘুমের মধ্যেই মারা যান পরশমণি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। সোমবার তাঁর দেহ পোড়ানো হয় স্বর্গদ্বারে।
মহরীদের বেদনাময় জীবন
জগন্নাথ ধর্ম নিয়ে গবেষণা করা সুরেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন যে রাজত্ব বিলুপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই শতাব্দী প্রাচীন পরিষেবারও অবনতি ঘটছিল। মহরীরা অক্লান্ত পরিষেবা দিতেন ভগবানের প্রতি। কিন্তু তাঁরা কখনই এটা পছন্দ করতেন না যে আজীবনের সঞ্চয় ও সম্পত্তি হারানোর ভয়ে মেয়েদের দত্তক নিয়ে তাঁদের উত্তরসূরি হিসাবে পরিষেবায় নিযুক্ত করা হোক। মিশ্র জানিয়েছেন যে মহরিরা তাঁদের গোটা জীবন উৎসর্গ করে দেন ভগবানের নামে তাই তাঁদের বিয়ে করার কোনও অধিকার নেই।
দেবদাসীর নিয়ম
দেবদাসী বা মহরী প্রথা অনুযায়ী, মহরীরা এক কিশোরী মেয়েকে দত্তক নিতে পারেন এবং তাঁদের গান, নাচ ও একাধিক সঙ্গীত চর্চায় পারদর্শী করে তুলবেন। যাতে তাঁদের মন্দির কর্তৃপক্ষের সামনে পেশ করা যেতে পারে এবং তাদেরকে ভগবানের কাজে নিয়োগ করা হয়। দেবদাসীর আর একটি নাম হল মহরী। এটা বলা হয় যে মন্দিরের অধিকারের সরকারি রেকর্ডে 'মহরী সেবা'র উল্লেখ রয়েছে। তবে গত দু'দশকে মন্দিরে নাচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ সমস্ত 'নাচুনি' তাঁদের উত্তরসূরিকে মন্দিরে না দিয়েই মারা গিয়েছেন। শশীমণি ও পরশমণি মন্দিরে
২৫ জন দেবদাসী ছিলেন
মন্দিরের রেকর্ড অনুসারে, প্রায় একশো বছর আগে, মন্দিরে ২৫ জন দেবদাসী ছিলেন। তবে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মন্দিরে কেবল চারটি দেবদাসী হরপ্রিয়া, কোকিলাপ্রভা, পরশমণি এবং শশীমণি বাকি ছিলেন। এই তিনজনেরই মৃত্যুর পরে কেবল পরশমণিই বেঁচে ছিলেন।
শুরু রথযাত্রা
সোমবার থেকে পুরীতে ভগবান জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা শুরু হল। গত বছরের মতো এ বছরও কোভিড পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে ভক্তদের অংশগ্রহণ ছাড়াই এই উৎসব পালন করা হবে। রথের শোভাযাত্রার সময় পুরীর ১২ শতকের মন্দিরের সামনের গ্র্যান্ড রোডে জন সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।