আটলান্টিকের নীচে সাড়ে ৮ কিলোমিটার প্রশস্ত গর্ত! কী ঘটেছিল ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে
আটলান্টিকের নীচে সাড়ে ৮ কিলোমিটার প্রশস্ত গর্ত! লুকানো ছিল ৬৬ মিলিয়ন বছর
আটলান্টিক মহাসাগরের নীচে দেখতে পাওয়া গিয়েছে সাড়ে ৮ কিলোমিটার প্রশস্ত গর্ত! প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর পর তা উদ্ধার হয়েছে। এতদিন ওই বিশালাকার গর্ত লুকানো অবস্থায় ছিল সমুদ্রের তলদেশে। ওই গর্ত সমুদ্রতলের উপরিভাগে নয়, সমুদ্রের তলদেশের নিম্নভাগে রয়েছে ওই গর্ত! কীভাবে ওই গর্তের সৃষ্টি, তা নিয়ে ভূ-বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেছেন।
কী করে সৃষ্টি হল গর্ত, প্রাথমিক ধারণা
বিজ্ঞানীরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, গ্রহাণু প্রভাবের কারণে এই সুবিশাল গর্ত তৈরি হতে পারে। আটলান্টিক মহাসাগরের যে অংশ ওই গর্ত তৈরি হয়েছে, সেখানে গ্রহাণুর প্রমাণ মিলেছে। কোনও গ্রহাণু আটলান্টিক মহাসাগরে পড়ার পর এই বিশাল গর্ত তৈরি হতে পারে। তবে গ্রহাণু ছাড়াও মহাসাগরের তলদেশে সুবিশাল গর্ত তৈরির অন্যান্য কোনও কারণ রয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কোথায় মিলেছে আটলান্টিকের ওই গর্ত
পশ্চিম আফ্রিকার গিনির উপকূল থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে ওই গর্তের অবস্থান। সেখান থেকে শুরু করে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে সাড়ে আট কিলোমিটার প্রস্থ বরাবর ওই গর্তটি রয়েছে বলে জানতে পারা গিয়েছে। সমুদ্রতলের প্রায় ৪০০ মিটার নীচে গর্তটি মিলেছে। এখনও দৈর্ঘ্য নিশ্চিত করা যায়নি। কী কারণে ওই গর্তের সৃষ্টি তাও বোঝা যায়নি সুনিশ্চিত করে।
যদি সমুদ্রতলে গর্ত করে অনুসন্ধান চালানো যায়
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তাঁরা যদি সমুদ্রতলের নীচে গর্ত করে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া চালাতে পারেন, তবে নিশ্চিত হতে পারবেন গ্রহাণুর জন্যই এই গর্তের সৃষ্টি হয়েছে কি না। ওই জায়গা থেকে ড্রিল করে নমুনা সংগ্রহ করার ব্যাপারে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। তাহলে গ্রহাণু তত্ত্বটি প্রমাণ করতে পারবেন এবং তা যে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে হয়েছিল, তার প্রমাণও করতে পারবেন।
৬৬ মিলিয়ন বছর আগের ঘটনায় ভূ-তাত্ত্বিক পরিবর্তন
৬৬ মিলিয়ন বছর আগে 'চিক্সুলুবু' নামে একটি গ্রহাণু পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল। গ্রহাণুটি পড়ে থাকতে পারে আটলান্টিকের বুকে। ওই গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করে, যার ফলে ডাইনোসরকে বিলুপ্ত করে দেয়। সেইসব অনুসন্ধানগুলি সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। পৃথিবীর উপর বৃহৎ গ্রহাণু ও ধুমকেতুর পতন যে এমন ভূতাত্ত্বির পরিবর্তন ঘটাতে পারে, তার প্রমাণও মিলবে এর ফলে।
কম্পিউটর সিমুলেশন ব্যবহার করে গবেষকরা যা পান
কম্পিউটর সিমুলেশন ব্যবহার করে গবেষকরা গর্তটির অনুসন্ধান পান। এবং বিশাল বিপর্যয়ের কারণ ও প্রভাব শনাক্ত করতে সক্ষম হন। সিমুলেশনটি ইঙ্গিত দেয় যে, ৫০০ থেকে ৮০০ মিটার জলের নীচে ৪০০ মিটার প্রশস্ত গ্রহাণুর সংঘর্ষের ফলে গর্তটি তৈরি হয়েছিল। এই পতনের প্রভাবে এক কিলোমিটার বেশি উচ্চতার সুনামি তৈরি হতে পারে বা তার বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হতে পারে।
টোঙ্গার অগ্নুৎপাত এবং সুনামির থেকে ১০০০ গুণ ক্ষমতা
২০২২ সালে টোঙ্গায় যে অগ্নুৎপাত এবং সুনামি হয়, তার ১০০০ গুণ বেশি শক্তি ছিল ওই গ্রহাণু পতনের। এগুলো সবই কম্পিউটার সিমুলেশন থেকে পাওয়া। এই তথ্যগুলির পরিমার্জন দরকার। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্রহবিজ্ঞানী ড. ভেরোনিকা ব্রে এই কথা জানান। এডিনবার্দের হেরিওট-ওয়াট ইউনিভার্সিটির একজন ভূ-তাত্ত্বিক ড. উইসডিয়ান নিকলসন আটলান্টিকের সমুদ্রতল থেকে ভূমিকম্পের প্রতিফলন পরীক্ষা করে ওই গর্তটি আবিষ্কার করেন।
ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার সঙ্গে গর্তের সম্পর্ক
সিসমিট ডেটা বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, গ্রহাণু দ্বারা প্রভাবিত পললগুলি ক্রিটেসিয়াস-প্যালিওজিন সীমানার সঙ্গে মিলে যায়। তবে সিসমিক ডেটার রেজোলিউশনের কারণে তারা এখনও নিশ্চিত নয় এই তত্ত্বের ব্যাপারে। যখন পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়, সেই সময়ের সঙ্গে গ্রহাণু পতনের সময়কালটি মিলে যায়।