ফিরে দেখা ২০১৯: বাংলার সেরা নিউজ মেকার
নিউজ মেকার নিয়ে লিখতে বসলে প্রথমেই চলে আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। সঙ্গে চলে আসে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের নামও।
নিউজ মেকার নিয়ে লিখতে বসলে প্রথমেই চলে আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। সঙ্গে চলে আসে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের নামও। সেই তালিকা থেকে বাদ যান না একসময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান সহযোগী মুকুল রায়ের নাম। সারা বছর বাংলার মিডিয়া এঁদের নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বছরের শুরুতে ছিল লোকসভা নির্বাচনের চাপ। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগান ছিল ৪২-এ ৪২টি আসন। বাংলা জুড়ে বিভিন্ন সভায় তিনি এই স্লোগান তুলেছিলেন। যদিও ফলাফলের নিরিখে রাজ্যে বড় ধাক্কা খায় তৃণমূল। এরপর সারা বছর ধরেই বিভিন্ন বিষয়ে তিনি মোদী-অমিত শাহকে আক্রমণ করে গিয়েছেন। বছরের মধ্যবর্তী সময় থেকে তাঁর অন্যতম সমস্যা তৈরি করেছেন নতুন রাজ্যপাল। আর বছরের শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যস্ত সিএএ আর এনআরসি বিরোধী পদযাত্রা নিয়ে। তিনি বলেই দিয়েছেন, জীবন থাকতে তিনি রাজ্যে সিএএ-এর প্রয়োগ হতে দেবেন না। আশ্বস্ত করে মমতা বলছেন, তিনি থাকতে কারও ভয়ের কোনও কারণ নেই।
জগদীপ ধনকর
৩০ জুলাই নতুন রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। এরপর একটি মাস বাদ দিয়েই সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্য সরকারের অন্যতম অসুবিধার কারণ হয়ে উঠেছেন। শুরুটা হয়েছিল যাদবপুরে বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধারে যাওয়া নিয়ে। এরপর কখনও কার্নিভালে তাঁকে একা ফেলে রাখার অভিযোগ, তো কখনও অপমান করার অভিযোগ। একের পর বিষয়ে রাজ্যের বিরোধিতা করে তিনি খবরের শিরোনামে। বছর শেষে তিনি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে টুইট যুদ্ধে ব্যস্ত।
মুকুল রায়
একটা সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান সহযোগী এখন বিরোধী শিবিরের অন্যতম সেনাপতি। রাজনীতিবিদদের একাংশ বলে থাকেন, তাঁর দেখানো পথেই বিজেপি রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে ১৮ টি আসন দখল করেছে। তৃণমূল থেকে দলবদলই হোক কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে কোনও বক্তব্য, শিরোনামে এসেছেন তিনিও।
অর্জুন সিং
অর্জুন সিং প্রথম সাড়া ফেলেন মে মাসে লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে দীনেশ ত্রিবেদীকে হারিয়ে জয়ের পরে। এরপর নিজের এলাকার একের পর এক পুরসভা বিজেপির দখলে আনেন। যদিও পরবর্তী সময়ে তা বিজেপি দখলে রাখতে পারেনি। তিনি অভিযোগ করেছেন, পুলিশের ভয়েই সবাই তৃণমূলে ফিরে যাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি কিছু বললেই খবরের শিরোনামে চলে এসেছেন তিনি।
দিলীপ ঘোষ
দিনের পর দিন খবরের শিরোনামে থেকেছেন দিলীপ ঘোষ। গরুর দুধে সোনা থাকার কথা বলার পরেই সব চেয়ে বেশি বিতর্ক দেখা দেয়। সম্প্রতি তাঁর মন্তব্য ঝামেলা না হলে রাজনীতি হয় নাকি, মন্তব্যেও বিতর্ক ছড়িয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে তাঁর মন্তব্য খবরের শিরোনামে থেকেছে এবং থাকছে। সম্প্রতি তিনি মন্তব্য করেছেন, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, সার্টিফিকেট কিছুই লাগবে না। বুথে গিয়ে নাম লেখালেই নাগরিকত্ব মিলবে।
শোভন-বৈশাখী
২০১৯-এ-র শুরুর দিকে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূলে সক্রিয়ভাবে দেখা যায়নি। অগাস্টে তিনি দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি যোগ দেন। সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেন বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তারপর থেকে বিজেপির কোনও কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যায়নি। আবার তিনি বিজেপি ছাড়ছেন কিংবা ছেড়েছেন একথাও প্রকাশ্যে ঘোষণা করেননি। যদিও ভাইফোঁটায় তিনি গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সেই সময় স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, তিনি তো আগেই বলেছিলেন শোভনকে ফিরতে হবে মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই। সেই সময়ই জল্পনা তৈরি হয়, এই তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন শোভন। যদিও তা এখনও পর্যন্ত হয়নি।
সব্যসাচী দত্ত
পয়লা অক্টোবর নেতাজি ইন্ডোরে গিয়ে অমিত শাহের হাত থেকে বিজেপির পতাকা তুলে নেন দীর্ঘদিনের তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত। যদিও তার আগেই বিধাননগরের মেয়রের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। সব্যসাচী দত্তের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনার শুরুটা হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের আগেই। সেই সময় মুকুল রায় সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেই সময় সব্যসাচী বলেছিলেন লুচি আলুর দম খেতে গিয়েছিলেন মুকুল রায়। সেই সময় থেকেই ফাটলের শুরু। পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎভবনে সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে দলেরই বিদ্যুৎমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি।