সরকারি অফিসে ৫০ শতাংশ করা হল কর্মীদের হাজিরা, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে শয্যা
সরকারি অফিসে ৫০ শতাংশ করা হল কর্মীদের হাজিরা, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে শয্যা
নতুন করে দেশজুড়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। প্রত্যেকদিন রেকর্ড ভেঙে আক্রান্ত হতে হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষকে। অনেকে বলছেন এটি নাকি করোনার সেকেন্ড ওয়েভ!আর এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হতে চলেছে যে একমাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হল প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। গত চারদিনে তিনবার ভারতে একলক্ষের গন্ডি পেরিয়েছে সংক্রমণের সংখ্যা। এর আগের বৈঠকে দেশের বিভিন্ন জায়গাতে নতুন করে করোনার সংক্রমনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আটকাতে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।কিন্তু গত কয়েকদিনের পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে সেই ওয়েভ সম্ভবত আটকানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় রাজ্যগুলিকে এখনই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ কেন্দ্রের।
সরকারি দফতরগুলিতে ৫০ শতাংশ হাজিরার নির্দেশ
সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি দফতরগুলিতে কর্মীদের হাজিরার সংখ্যা কমানো হল। সমস্ত সরকারি দফতরে কর্মীদের হাজিরা ৫০ শতাংশ করতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী দপ্তরগুলিকে রোস্টার ব্যবস্থা চালু করতে বলা হয়েছে। বাকি কর্মীদের বাড়িতে বসেই কাজ করতে বলা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এই নির্দেশিকা কার্যকর করতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, জ্বর কিংবা কোনও উপসর্গ থাকলে অফিসে না আসার কথাও বলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সবদিক থেকেই সতর্ক নবান্ন।
দ্রুত সেফ হোম চালু করার নির্দেশ
নতুন করে ফের বাংলায় বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এই অবস্থায় ইতিমধ্যে হাসপাতালগুলিকে তৈরি থাকার নির্দেশ। অন্যদিকে ফের চালু হচ্ছে সেফ হোম। । স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, হাওড়ার রবার পার্ক, উত্তর ২৪ পরগনার সিএনসিআই, দক্ষিণ কলকাতার গীতাঞ্জলি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে সেফ হোম চালু হবে। এছাড়াও আরও বেশি কয়েকটা জায়গাতে সেফ হোম চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, দ্রুত যোগাযোগে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং কলকাতায় কোভিড হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে শয্যা
করোনার রেখচিত্র ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। প্রত্যেক ২৪ব ঘন্টাতেই বাড়ছে সংক্রমণ! এই অবস্থায় আগেভাগে সতর্ক হচ্ছে স্বাস্থ্যদফতর। পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না চলে যায় সে কারনে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেমন ধীরে ধীরে ফের সরকারি হাসপাতালগুলিতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে বেসরকারি নার্সিংহোমগুলির সঙ্গেও। সেখানেও শয্যাসংখ্যা বাড়ছে। কলকাতায় প্রায় ১৩ হাজার ৫৮৮ শয্যা করা হয়েছিল করোনা আক্রান্তদের জন্য। পরে তা কমে প্রায় ৯০০ হয়। ফের তা বাড়ানো হয়েছে। সেফ হোম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। চালু হচ্ছে টেলিমেডিসিন, কল সেন্টার ও অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও। করোনা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় গাইডলাইন মেনে প্রায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষাই আরটিপিসিআরে করা হচ্ছে। স্যানিটাইজ করা, মাস্ক ব্যবহার-সহ যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সবই করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।
করোনা সংক্রমণের গ্রাফ ফের উর্ধ্বমুখী
দেশের দৈনিক করোনা সংক্রমণের গ্রাফ ফের উর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ১,৩১.৯৬৮ জন। দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১,৩০, ৬০,৫৪২ জন। অর্থাৎ দেড় কোটির দিকে দ্রুত এগোতে শুরু করেছে দেশের মোট করোনা সংক্রমণ। এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৯,৭৯,৬০৮ জন। সুস্থতার সংখ্যার সঙ্গে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যার ফারাক ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৭৮০ জন।
বৃহস্পতিবারের হিসাবে বাংলায় করোনার সংক্রমণের হার
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২,৭৮৩ জন। অর্থাৎ প্রায় ২৮০০ ছুঁই ছুঁই। রাজ্যে এখন মোট করোনা ভাইরাসে সংক্রমিতের সংখ্যা ৬,০২, ৮০৭ জন। বাড়ছে দৈনিক মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে মারা গিয়েছেন ৭ জন। রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা ১০,৩৭০ জন। করোনা সংক্রমণ কাটিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৯৫৭ জন। সুস্থতার হার ৯৫.৬১ শতাংশ।
সংক্রমণে রাজ্যে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা শহর
করোনা সংক্রমণে রাজ্যে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা শহর। গত২৪ ঘণ্টায় শুধু কলকাতা শহরেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১৬ জন। শুধু কলকাতাতেই অ্যাক্টিঊ রোগীর সংখ্যা ৪৩০। তারপরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। এখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৫ জন। আর অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৪০০। শুধু কলকাতাতেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৩ জন। একই সঙ্গে হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে।
রাজ্যে করোনা কেস ১১ লক্ষ অতিক্রম করবে এপ্রিলের মধ্যে, অনুমান মহারাষ্ট্র সরকারের