১২ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলছে স্কুল, ২৮ পাতার গাইডলাইন দিল শিক্ষা দফতর
অবশেষে রাজ্যে খুলতে চলেছে স্কুলগুলি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলগুলি চালু হবে। তবে এখনই সমস্ত ক্লাস চালু হবে না। প্রাথমিকভাবে বড়দের ক্লাসগুলি খুলছে। অর্থাৎ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের ক্লাস হবে। সেদিকে তাকিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ২৮ পাতার গাইডলাইন জারি করল রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। যেখানে স্কুল খুললে কি করা যাবে আর কি করা যাবে না সেই সংক্রান্ত একগুচ্ছ নির্দেশিকা প্রকাশ করল স্কুল শিক্ষা দফতর। স্কুলগুলির ক্ষেত্রেও কি কি বিষয়ে বাধ্যতামূলক সেগুলিও গাইডলাইনে বলে দেওয়া হয়েছে।
২৮ পাতার গাইডলাইনে কি বলা হয়েছে?
সংক্রমণ কমলেও এখনও করোনা চলে যায়নি। ফলে কোভিড নিয়ম মেনেই স্কুলগুলি খোলার কথা বলা হয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে। ফলে স্কুলগুলিকে কি কি ব্যবস্থা করতে হবে সে বিষয়ে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রেও। এমনকি, স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকার কি কি দায়িত্ব রয়েছে সেই বিষয়েই গাইডলাইনে বিস্তারিত বলা হয়েছে। জেলা স্কুল বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কী দায়িত্ব থাকবে, প্রশাসনের ভূমিকা কী হবে, সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে। স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে দেওয়া গাইডলাইন প্রত্যেকটি স্কুলকে বাধ্যতামূলক ভাবে মানতে হবে।
স্কুলের নোটিশ বোর্ডে থাকবে গাইডলাইন
প্রত্যেকটি স্কুলের নোটিশ বোর্ডে থাকতে হবে গাইডলাইন। মাস্ক ছাড়া কোনও শিক্ষক কিংবা শিক্ষাকর্মী স্কুলে ঢুকতে পারবে না। পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক। জ্বর কিংবা অন্য কোনও শারীরিক সমস্য রয়েছে কিনা তা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তপক্ষকে জানাতে হবে অভিভাবকদের। সমস্যা থাকলে নুন্যতম সাতদিন ওই পড়ুয়াকে বাড়িতেই থাকতে হবে। ফিট সার্টফিকেট জমা দেওয়ার পরেওই স্কুলে ফের আসতে পারবে য়ই পড়ুয়া। ক্লাসের বাকি পড়ুয়াদের কথা চিন্তা করেই এহেন সিদ্ধান্ত স্কুল শিক্ষা দফতরের।
স্কুলের মধ্যেই রাখতে হবে আলাদা আইসোলেশন রুম
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই খুলছে স্কুল। সামনেই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ক্লাসের প্রয়োজন। সেদিকেই তাকিয়েই খোলা হচ্ছে স্কুলগুলি, এমনটাই সূত্রের খবর। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্কুলগুলি খোলা হলেও সমস্ত ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। যেমন প্রত্যেকটি স্কুলে একটি নির্দিষ্ট করে আইসোলেশন রুমে রাখতে হবে বলে প্রকাশিত গাইডলাইনে স্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্কুল হয়ে যাওয়ার পর প্রত্যেকদিন অবশ্যই গোটা স্কুলকে স্যানিটাইজ করতে হবে বলে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সোশ্যাল ডিসটেন্স বজায় থাকে তা বিশেষভাবে দেখতে হবে। ক্লাসের মধ্যে পাশাপাশি একেবারেই বসা যাবে না। ফলে কীভাবে সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনে ক্লাস করানো যায় তা অবশ্যই স্কুলগুলিকে নির্দিষ্ট করতে হবে। স্কুলে ঢোকার সময় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের তাপমাত্রার রেকর্ড রাখবে। স্কুলের মধ্যে কোনও ভিজিটার কিংবা অভিভাবক এখনই ঢুকতে পারবেন না। এছাড়াও স্কুলে ঢোকার সময় অবশ্যই স্যানিটাইজ করতে হবে হাত। আপাতত এক জায়গাতে জড়ো হয়ে প্রার্থনা না করানোর জন্যেই স্কুলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্লাসে কেউ কারোর জল কিংবা টিফিন আদানপ্রদান চলবে না
খুব গুরুত্বপূর্ণ। জল কিংবা অন্যান্য খাবার আদান-প্রদানে সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আর সেজন্যে কোনও রকম খাবার, জল আদান-প্রদান একেবারেই নিষিদ্ধ। অন্যের বই, ব্যাগ, টিফিন যাতে ভাগাভাগি করে কেউ যাতে না ব্যবহার করতে পারে সেজন্যে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। এজন্যে স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষ নজরদারি রাখার কথা বলা হয়েছে। স্কুলের শৌচাগার থেকে শুরু করে সব জায়গায় গুলিকে স্যানিটাইজ করতে হবে।
যাবতীয় স্কুলে স্পোর্টস কিংবা অনুষ্ঠান বন্ধ
অনেক স্কুলেই এই সময় বার্ষিক কিছু অনুষ্ঠান করা হয়। বিভিন্ন ধরনের স্পোর্টস করা হয়। আপাতত সেগুলি বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতরের গাইডলাইনে। এমনই একগুচ্ছ নির্দেশিকা স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে দেওয়া হয়েছে। এগুলি মানা হচ্ছে না তা দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুল পরিদর্শকদের। যদি কোথাও এই গাইডলাইন না মানা হয় তাহলে তাঁরা যেন সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলাশাসককে জানান সে বিষয়ে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্যে বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গাইডলাইনে
ইতিমধ্যে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকরা। এখন রোজ যেতে না হলেও সপ্তাহে বেশ কিছুদিন যেতে হবে। তবে স্কুলগুলি রোজই যেতে হবে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে প্রয়োজন ছাড়া যাতে শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকরা ছুটি না নেন। কারন দীর্ঘদিন পর স্কুল শুরু হচ্ছে। জারা অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি তাঁদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে গাইডলাইনে। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের।
প্রধান শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকাকেও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে
গাইডলাইন মানা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকাকে। যেদিন প্রথম স্কুল খুলবে সেদিন অবশ্যই প্রত্যেক পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। গাইড লাইন বোঝাবেন। করোনা সংক্রান্ত কোনও ভয় পড়ুয়ার মধ্যে কাজ করছে কিনা তা নজর দেবেন। প্রয়োজনে ভয় কাটাতে সাহায্য করবেন তিনি। পড়ুয়াদের পাশাপাশি এমনই একগুচ্ছ নির্দেশিকা দেওয়া প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্যে।
তবে এখনই খুলছে না কলেজ-বিশ্ব বিদ্যালয়
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুল খুললেও এখনই খুলছে না কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বুধবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা দফতরের পদস্থ আধিকারিকরা। দীর্ঘ বৈঠকে এখনই কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় না খোলার সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে কবে খুলবে সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামিদিনে ফের বৈঠক হবে বলে খবর। তবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খুলছে না। তবে আগামী মার্চ মাসে যে বিজোড় সেমেস্টারের (প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ইত্যাদি) পরীক্ষা আছে তা বাড়ি থেকেই দিতে পারবেন পড়ুয়ারা। তবে ক্ষেত্র বিশেষে গবেষণারত পড়ুয়াদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের অনুমতি দিতে পারে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। তবে কবে সেটা সংশ্লিষ্ট কলেজ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।