রাজীবের মূলমন্ত্র স্বচ্ছতা আর একাগ্রতা! সেচমন্ত্রী হিসেব সাফল্যের পর পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব
স্বচ্ছতা আর একাগ্রতাই মূলমন্ত্র, সেচমন্ত্রী হিসেব সফলতার পর পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে রাজীব
সেচমন্ত্রী হিসেবে তিনি পাঁচ বছরে বাংলার বুকে কাজের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। বনমন্ত্রী হিসেবেও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সাফল্যের গাথা তৈরি করছেন। ওয়ান ইন্ডিয়া বেঙ্গলির একান্ত সাক্ষাৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় পাত্র কাজের ছেলে বলে পরিচিত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে ধরলেন আম্ফান পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা।
বাদাবন না থাকলে কলকাতা ধ্বংসলীলা বাড়ত
রাজীব বলেন, আম্ফানে লন্ডভন্ড হয়েছে বাংলা, তা অস্বীকার করার কিছু নেই। যে তাণ্ডব চালিয়েছে আম্ফান, তাতে সুন্দরবনের বাদাবন না থাকলে কলকাতা ও শহরতলি পুরোপুরি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হত। সুন্দরবনের যে অংশ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছিল আয়লায়। কেননা আয়লায় কম প্রকোপ থাকলেও ক্ষতি এই কারণেই হয়েছিল যে তৎকালীন সরকার সেভাবে কাজ করেনি।
আয়লা বিধ্বস্ত সুন্দববনে কাজ, তাই রক্ষা
আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর আয়লাবিধ্বস্ত সুন্দরবন ও সুন্দরবন লাগোয়া অঞ্চলে প্রচুর কাজ করেছি। এই ১০ বছরে অনেক কাজ করেছি আমরা। বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে প্রচুর, সংস্কার হয়েছে, প্রচুর বৃক্ষরোপণ হয়েছে। ফলে আমরা আম্ফানের ভয়াবহ তাণ্ডব থেকে কলকাতা বা শহরতলিকে রক্ষা করতে পেরেছি। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন পরিবেশ রক্ষার
রাজীবের কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে। আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছেন। পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। আমি আপনি বাঁচব যদি প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। একটা হিসাব দেখছিলাম, ১৬০০ বর্গ কিলোমিটার সবুজ ধ্বংস হয়েছে। ১ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর সবুজায়ন নষ্ট হয়েছে। ১ কোটি ২০ লক্ষ গাছ পড়েছে। তার মধ্যে ১৬ লক্ষ একেবারেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
প্রকৃতি মাকে বাঁচানোর উদ্যোগ
হাসপাতালের ভেন্টিলেশনের মূল্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা হাসপাতালে বিল মোটাতে গিয়ে দেখি একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারের কত দাম। কিন্তু প্রকৃতি বা ঈশ্বর বিনামূল্য আমাদের যে এত অক্সিজেন সরবরাহ করেছে, তার আমরা কোনও মূল্য দিই না।
ঘাটতি পূরণ করতে সবুজায়ন
এত সবুজ ধ্বংস হয়েছে, এত প্রকৃতি ধ্বংস হয়েছে, কত কার্বন ইউনিট নষ্ট হয়েছে। যে কার্বন ইউন্টি দিয়ে নতুন কের মানুষ অক্সিজেন পেত, তা কমে যাবে। এর ফলে দূষণ বেড়ে যাবে, সৌন্দর্যায়ন নষ্ট হয়ে গেল। রেভিনিউ লস হল। এই ঘাটতি পূরণ করা যাবে যদি আবার আমরা সবুজায়ন করতে পারি, গাছ লাগাতে পারি।
সাড়ে তিন কোটি গাছ লাগানো হচ্ছে, আরও ৫ কোটি হবে
ইতিমধ্যেই আমরা সেই কাজ অর্থাৎ সবুজ প্রতিষ্ঠাপিত করতে শুরু করেছি। আমরা ইতিমধ্যে সাড়ে তিন কোটি গাছ লাগানো কাজ করছি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আরও পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগাতে। সার্বিকভাবে আমরা চেষ্টা করছি বাংলায় পরিবেশ বাঁচানোর জন্য, প্রকৃতি মাকে পুরোনো জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
১৪ জুলাই বন মহোৎসবে বৃক্ষরোপণ
এক মাসের মধ্যে সারা বাংলায় গাছ লাগানো হবে। ১৪ জুলাই বন মহোৎসব পালন করি। ওইদিন আমরা উৎসবের মেজাজে পালন করব, সারা বাংলা জুড়ে বৃক্ষরোপণ হবে একই দিনে। ব্লক থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। বর্ষাকাল একটা সিজিন। আমরা ফের বাংলার পুরো রূপে ফিরিয়ে দিতে পারব।
সুন্দর পৃথিবী, সুনির্মল আকাশ, পরিচ্ছন্ন প্রকৃতির জন্য
এই লকডাউনে দেখেছেন স্বচ্ছ বাতাস, পরিশুদ্ধ প্রকৃতি। এটাই তো ছিল আসলে প্রকৃতি মানুষশ তো নিজের কাজে প্রকৃতিকে ধ্বংস করেছে। আমাদের উচিত সেই প্রকৃতিকে ফের ফিরিয়ে দেওয়া। আমি আপনি, সাধারণ মানুষ যদি সচেতন হই তবে সুন্দর পৃথিবী, সুনির্মল আকাশ, পরিচ্ছন্ন প্রকৃতি আবার ফিরে আসবে। এই সচেতনতার প্রচার চালানোর জন্য আমরা এটা উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে
আগামী ১৪ জুলাই ৯৩৫টি স্কুল, কিছু প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আমরা সচেতনতার প্রচার করব। প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সেই জন্যই এই সচেতনতা। যার যখন প্রয়োজন গাছ কেটে ফেলবে, যার যেখানে প্রয়োজন বনা়্চল দখল করে নেবে, যার যেখানে প্রয়োজন একটা ডাল কেটে দেবেষ এটা চলতে পারে না। মানুষ যদি সচেতন হয়, তবে প্রকৃতি রক্ষা করা, সবুজ বাঁচানো সম্ভব।
দিলীপের শিষ্টাচারে খুশি, রাজীবের সৌজন্য
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খণ্ডন করে একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজীব বলেন, রাজনীতিতে মতাদর্শের ফা্রাক থাকতে পারে, তা থাকবেও। কিন্তু রাজনীতিতে ব্যক্তিগত শত্রুতার কোনও জায়গা নেই। দিলীপবাবু একটা কথা বলেছেন, আমার খুব খারাপ লেগেছিল। উনি কী বলেছিলেন, সেই ভিডিও আমি শুনিনি। ওয়েব পোর্টালে পড়েছিলাম শুধু। তার দুদিনের মাথায় দিলীপবাবু ফোন করে জানিয়েছেন তিনি ‘আত্মসাৎ' কথাটি বলেননি। আমি তাঁর এই শিষ্টাচারে খুব আনন্দিত, খুশি।
বিধানসভার রেকর্ড বলবে কাজ, জানালেন রাজীব
রাজীব বলেন, আমি ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেচ দফতরের দায়িত্বে ছিলাম। এই পাঁচ বছরে যে কাজ হয়েছে, যেভাবে কাজ হয়েছে, তা আগে কখনও হয়নি। তা লিপিবদ্ধ রয়েছে বিধানসভার রেকর্ডে। শুধু আমার দলই নয়, বিরোধীরাও সে দফতরের কাজের প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর আমলে পাঁচ বছরে সবথেকে বেশি বাঁধ নির্মাণ, বাঁধ সংস্কার, সেচ খাল সংস্কার ইত্যাদি সমস্ত কাজ হয়েছে।
স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত তুলে শিষ্টাচারে জবাব রাজীবের
রাজীব বলেন, সারাজীবন স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে এসেছি। যতদিন কাজ করব, স্বচ্ছতার সঙ্গেই করব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব দিয়েছিলেন মানুষের জন্য কাজ করার জন্য। সুন্দরবনের মানুষের জন্য তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। এছাড়া বাম আমলে ১৮০ কোটি টাকার কোনও কাজ হয়নি। সেই টাকাও আমি সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে দিয়েছি। ফলে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বললাম, কেউ প্রমাণ দিতে পারলে আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেব।
২০২১ প্রসঙ্গে রাজীব
রাজীবের কথায়, রাজনীতি আসবে যাবে। কিন্তু মানুষের জীবন অমূল্য। মানুষ না থাকলে কোনও দাম নেই রাজনীতির। মানুষকে সেবার জন্য রাজনীতিতে এসেছি। তাই এই সংকট সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সর্বাগ্রে কর্তব্য। করোনায় মানুষ বাঁচতে চাইছে। তার উপর আম্ফানে সহায় সম্বল হারিয়েছে রাজ্যবাসী।
ভার্চুয়াল ব়্যালি প্রসঙ্গে রাজীব
রাজীব মনে করেন, এখন রাজনীতি করার সময় নয়। মানুষকে বাঁচানোই প্রথম লক্ষ্য আমাদের। একুশ এখনও অনেক দূরে। আমাদের সরকার ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে। বিজেপি সেখানে ভার্চুয়াল ব়্যালি করছে। ওঁরা মনে করছে, ২০২১-এ বাংলা দখল করাই ওঁদের লক্ষ, তাহলে তাঁরা তাই করুন।
বিজেপি টার্গেট করলেই হারে, আবারও হারবে
রাজীব বলেন, বিজেপি আজ পর্যন্ত যেক'টা রাজ্যকে টার্গেট করেছে, সেক'টা রাজ্যেই ভোকাট্টা হয়ে গিয়েছে। এখন সামনে শুধু বিহার আর বাংলা। এই দুই রাজ্যেও বিজেপি জবাব পাবে। মানুষ এর রায় দেবে যথার্থ সময় এলেই। আমরা এখনও ২০২১ নিয়ে ভাবছি না, আমরা শুধু মানুষকে নিয়েই ভাবছি।
ছবি সৌ:রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক প্রোফাইল
সেচমন্ত্রী হিসেবে 'রেকর্ড’ কাজ! শিষ্টাচার মেনেই দিলীপকে জবাব 'স্বচ্ছ’ রাজীবের