শিক্ষায় এবার চাঁদার জুলুম! ৫০০ টাকা চাঁদার ফতোয়া খোদ ডিপিএসসি চেয়ারম্যানের
চাঁদার জুলুমবাজির হাত থেকে এবার রেহাই পেল না শিক্ষাও। আর সেই জুলুমবাজের নায়ক হিসাবে অভিযুক্ত হয়েছেন খোদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান।
চাঁদার জুলুমবাজির হাত থেকে এবার রেহাই পেল না শিক্ষাও। আর সেই জুলুমবাজের নায়ক হিসাবে অভিযুক্ত হয়েছেন খোদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান। তিনি ফতোয়া জারি করেছেন সার্কেল স্পোর্টস, সাব-ডিভিশন লেভেল স্পোর্টস এবং জেলা স্তরের স্পোর্টস মিট-এর জন্য ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায়ের জন্য। সরকারের ছাপানো প্যাডে সার্কুলার লিখে নিজের হাতে তা সই করে দিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনা পশ্চিম বর্ধমানের। রানিগঞ্জের ত্রিবেণীদেবী ভালোটিয়া কলেজে থাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতর থেকে এই সার্কুলার জারি করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান এ কে দে-র সইও রয়েছে এই সার্কুলারে। সমস্ত এসআই-এর কাছে এই সার্কুলার পাঠানো হয়েছে এবং প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকে দ্রুত চাঁদা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন চেয়ারম্য়ান এ কে দে।
৩ ডিসেম্বর সই করা এই সার্কুলার নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রাথমিক শিক্ষকরা। শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের প্রতিবাদী শিক্ষক মইদুল ইসলামও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা প্রতিবাদে নামছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
ফি বছরই প্রাথমিক স্কুলের নানা স্তরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা চাঁদা তোলা হয়। ১৯ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ডেপুটেশন দেওয়ার সময় উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্য়াসোসিয়েশন-এর পক্ষে রাজ্য সভাপতি সন্দীপ ঘোষ এই চাঁদা ইস্য়ু-তে আওয়াজ তোলেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষকদের নিজের পকেট কেটে কেন চাঁদা দিতে হবে শিক্ষামন্ত্রীর সামনে সে সওয়ালও রেখেছিলেন সন্দীপ। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। ৩০ অক্টোবর শহিদ মিনারের নিচে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের অবস্থান বিক্ষোভেও এই চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জোর সওয়াল হয়েছিল। শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের তরফে এই বছর থেকে চাঁদা না দেওয়ার আর্জি রাখা হয় প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছে।
দেখা যাচ্ছে খোদ জেলা প্রাথমিক স্কুল পর্ষদের চেয়ারম্য়ানই চাঁদা প্রথার পক্ষে সওয়াল করছেন। শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ এই চাঁদা না দেওয়ার জন্য গোঁ ধরে থাকলেও তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, বারাসত সার্কেলে চাঁদা না দেওয়া শিক্ষকদের নামের তালিকার পোস্টার ইতিমধ্যে সাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে যে স্কুলের শিক্ষকরা স্পোর্টস-এর জন্য চাঁদা দেননি তাঁদের নাম লিখে নির্দিষ্ট স্কুলের গায়ে পোস্টার-এর মতো তা সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকবছরই বহু শিক্ষকই প্রতিবাদ জানিয়ে স্কুল স্পোর্টস চাঁদা দেন না। আর স্পোর্টস পার হলেই তাঁদের নামে পোস্টার ফেলা হয়। এবারও তার অন্যথা হয়নি।
এমনভাবে নাম দিয়ে পোস্টার প্রকাশে স্বাভাবিকভাবেই বহু শিক্ষক আতঙ্কে থাকেন। কিন্ত কি সেই বাম আমল বা বর্তমান তৃণমূল-এর জামানা- সবসময়ই শিক্ষকদের অপমান করার এই প্রথা চলে আসছে। বিশেষ করে যেখানে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের মাথাই চাঁদা আদায়ে সার্কুলার দিচ্ছেন সেখানে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান-এর সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, তাঁর দফতরের ফোন বেজে গেলেও তা কেউ তোলেননি।