আনিস-কাণ্ডের পর রামপুরহাট-‘গণহত্যা’, হাতে গরম ইস্যু পেয়ে কি কাজে লাগাতে পারবেন সেলিমরা
আনিস-কাণ্ডের পর রামপুরহাট-‘গণহত্যা’, হাতে গরম ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারবেন সেলিমরা
সিপিএম নতুন করে অক্সিজেন পেতে চাইছে রাজ্য রাজনীতিতে। ২০২১-এ বাংলার বিধানসভা সাফ হয়ে যাওয়ার পর শূন্য থেকে শুরু করেছে তারা। নেতৃত্বে ঘটেছে বিরাট বদল। সূর্যকান্ত মিশ্রের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মহম্মদ সেলিম। তারপর প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে সিপিএম। সেজন্য মহম্মদ সেলিম এসেই হাতে পেয়ে গিয়েছেন একাধিক বড় ইস্যু। এখন দেখার তিনি সেই হাতে গরম ইস্যু পেয়ে কীভাবে দলকে চাঙ্গা করতে পারেন।
হাওড়ার আমতায় আনিস-কাণ্ড নিয়ে সিপিএম আন্দোলন জারি রেখেছে। মহম্মদ সেলিম রাজ্য সম্পাদক হয়েই আনিস খানের বাবার সঙ্গে দেখা করেছেন। এই ঘটনায় তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তারপরই রামপুরহাট-কাণ্ড ঘটেছে। যা সিপিএম গণহত্যা বলে দাবি করেছে। তৃণমূলের আমলে প্রথম 'গণহত্যা'র ঘটনাকে ইস্যু করে সিপিএম কতটা ফায়দা তুলতে পারে, প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে রাজ্য রাজনীতিতে, সেটাই দেখার।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিন বাধাহীনভাবে ঢুকেছেন রামপুরহাটে বকটুইগ্রামে। একদিকে বামনেতৃত্ব গ্রামে ঢুকতে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে, অন্য দিক দিয়ে বাইকে করে ঘুরপথে সেলিম ঢোকেন বকটুই গ্রামের অগ্নিবিধ্ব্স্ত গ্রামে। সেখানে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। দাবি করেন, এই গণহত্যায় জড়িতদের সর্বসমক্ষে শাস্তি বিধান করতে হবে।
বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের জাল কাটতে রামপুরহাট যাচ্ছেন মমতা, নিশানা বিজেপি-সিপিএমকে
মহম্মদ সেলিম আগেই দাবি করেছিলেন, সিট গঠন করা হয়েছে প্রমাণ নষ্ট করার জন্য। কারণ আগে যে সব সিট হয়েছে তার কোনও ফল মেলেনি। আনিসকাণ্ডে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল সিটের। কিন্তু তা দিতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত কোনও কিনারা হয়নি আনিস-কাণ্ডের। তারপর রামপুরহাটে নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটানো হয়েছে, তারপর সিট গঠন করা হয়েছেন। এই সিটও প্রমাণ লোপাট করতে যাচ্ছে, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে যাচ্ছে না সিট।
মহম্মদ সেলিম এদিন গ্রামে গিয়ে বলেন, একানে তদন্ত হবে। সিট আসবে। কেউ যেন প্রমাণ নষ্ট করতে না পারে। সিট একমাত্র প্রমাণ নষ্ট করতে পারে। তাই সিট থেকে সাবধান থাকতে হবে। পুরো ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করে তিনি বলেন, অপরাধীরা যখন বাড়িতে ঢুকে খুন করেছিল, তখন পুলিস বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল।
এদিন সেলিম-সহ বাম নেতৃত্ব যেভাবে জনে জনে কথা বলেছেন, যাঁরা বিচার পাচ্ছে না বলে দাবি করছেন, পুলিশ অভিযোগ নিচ্ছে না বলে দাবি করছেন, তাঁদের দাবি মতো পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত, তাঁদের সাহস জুগিয়েছেন। এভাবেই বাম নেতৃত্ব পাশে থেকে আন্দোলনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন।
এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েকর হাওয়াই চপ্পলে রক্তের দাগ লেগে গিয়েছে। কালীঘাটে যেমন মমতার ভাইপো, তেমনই এখানে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। আশিস বন্যোমমপাধ্যায়ের ভাইপো এসডিপিওকে কিনে রেখে অত্যাচার চালাচ্ছেন এলাকায়। তিনি আরও বলেন, সিবিআই বা সিআইডি- যেই তদন্ত করুক কোনও লাভ হবে না। কারণ মমতার সিআইডি আর অমিত শাহের সিবিআইয়ের কোনও পার্থক্য নেই। কাক কাকের মাংস খায় না। মমতা আর শাহ ঠিক করে দেন কী হবে।
এখন সিপিএম এই আন্দোলনকে কতখানিক বিস্তারলাভ করাতে পারে, মানুষকে তাঁদের দিকে নিয়ে এসে আন্দোলনকে কতখানি বৃহত্তর রূপ দিতে পারে তার উপর নির্ভর করবে সিপিএমের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়া। সিপিএম চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না নির্যাতিত ও আক্রান্ত পরিবার ও গ্রামকে সঙ্গে নিয়ে শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করার ব্যাপারে।
মহম্মদ সেলিমকে রাজ্য সম্পাদক করে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ফেরানোর টার্গেট নিয়েছে সিপিএম। আর তারপর আনিস খান মৃত্যু রহস্যের ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়েছে রাজ্য। ঘটেছে রামপুরহাটের অগ্নিকাণ্ড। এই ঘটনাকে গণহত্যার বলে তুলে ধরেছে বিরোধীরা। তাই এই দুটি ইস্যু পেয়ে সিপিএম নিজেদেরকে প্রাসঙ্গিক করে তোলার সুযোগ পাচ্ছেন। এখন সিপিএম এই ঘটনাকে বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ দিতে সচেষ্ট। তাঁরা কতটা পারে, তার উপর নির্ভর করবে সিপিএমের পুনরুত্থান।
Recommended Video