মমতার সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে হানা ওয়াইসির! ‘সিঁদুরে মেঘে’র উঁকি তৃণমূলের আকাশে
বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বাকযুদ্ধের ফলে।
বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বাকযুদ্ধের ফলে। বিজেপি যখন মমতার চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠছে রাজ্যে, তখন তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট-ব্যাঙ্কে হানা দিতে বাংলায় প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মিম প্রধান ওয়াইসি।
মমতা বনাম ওয়াইসি লড়াই
মমতা ভারতে মুসলমানদের মধ্যে চরমপন্থা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন ওয়াইসির বিরুদ্ধে। ওয়াইসি পাল্টা দিয়ে বাংলার মুসলমানদের দুর্দশার ব্যাখ্যা করেছিলেন মমতার রাজত্বে। এই পরিস্থিতিতে উভয়ের বাক্যবাণে পরিস্থিতি সরগরম হয়ে উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে ওয়াইসিকে বিজেপির দালাল বলতেও কুণ্ঠা করেননি মমতা।
বিহারে আসনপ্রাপ্তির পর আত্মবিশ্বাসী
মাত্র দু'জন সাংসদ নিয়ে লোকসভায় ঊনিশতম দল আইআইএমআইএম। এতদিন হায়দরাবাদে সীমাবদ্ধ ছিল তাদের সীমা রেখা। বিহার উপনির্বাচনে কিষানগঞ্জ আসনে জয়ের পর এইআইএমআইএম এখন আত্মবিশ্বাসী। দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুসলিম জনসংখ্যার অধিকারী রাজ্য বাংলা এবার মিমের সফট টার্গেট। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার বিধানসভায় পৌঁছনোই তাদের লক্ষ্য।
তৃণমূলের কাছে বিপদ এখন মিমও
ফলে এতদিন মমতা তথা তাঁর দল তৃণমূলের কাছে বিপদ ছিল শুধু বিজেপি। এখন সেই তালিকায় সংযোজিত হল আরও একটি নাম, তা হল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন বা এআইএমআইএম বা মিম। এআইআইআইএম বাংলায় প্রবেশের হুঁশিারি দেওয়ায় মমতা আশঙ্কিত মুসলিম ভোট নিয়ে।
১০০ আসনে সিঁদুরে মেঘ
বাংলায় মুসলমানদের ভোট প্রায় ৩১ শতাংশ। মূলত মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও দিনাজপুর-সহ বিভিন্ন জেলায় ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে প্রায় ১০০ আসনে সংখ্যালঘু ভোট ফ্যাক্টর। যদি ওয়াইসির দল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলায় প্রবেশ করে, তবে মাথায় হাত পড়বে তৃণমূলের। বিজেপির সুবিধা হয়ে যাবে অনেকটাই।
মিমের টার্গেট যে আসনগুলি
এবার ঝাড়খণ্ড নির্বাচনেও ওয়াইয়ি প্রার্থী দিচ্ছে। আর একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন বাংলায় প্রতিটা আসনেই এবার তাঁর দল প্রার্থী দেবে। মূলত মুসলিম অধ্যুষিত আসন এবং তারপরে ৮১টি এসসি ও এসটি অধ্যুষিত আসনে মনোনিবেশ করব। বিগত লোকসভা নির্বাচনও লড়তে প্রস্তুতি নিয়েছিল মিম। একেবারে শেষ মুহূর্তে না লড়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
মুসলিম ভোট এখন তৃণমূলের ঝুলিতে
২০১১ সালে বাংলা থেকে বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই মুসলিম ভোটাররা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অনুগত রয়েছেন। সিংহভাগ মুসলিম ভোট এখন তৃণমূলের ঝুলিতেই আসে। আর এই ভোটের ফলেই ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে।
ওয়াইসির দল মমতার নয়া চ্যালেঞ্জার
এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। তারা এখন তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। এই অবস্থায় এইআইআইএম মুসলিম ভোটারদের মেরুকরণে সফল হলে মমতাকে বিপাকে পড়তে হবে। তাই তাঁর কাছে ওয়াইসির দলের বাংলায় প্রবেশ সিঁদুরে মেঘ হতে চলেছে। ২০২১-এ তৃতীয়বার টানা ক্ষমতায় আসতে তাই বিজেপির পাশপাশি মমতাকে মিমের চ্যালেঞ্জও নিতে হবে।