রাজ্যপাল কৌশলে সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করলেন বাংলায়, কিন্তু কী আছে এই ১৭৪ ধারায়
রাজ্যপাল সংবিধানের ১৭৪ নম্বর ধারা অন্তর্গত ২ নম্বর উপধারা প্রয়োগ করে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছেন।
রাজ্যপাল সংবিধানের ১৭৪ নম্বর ধারা অন্তর্গত ২ নম্বর উপধারা প্রয়োগ করে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু কী এই ১৭৪ ধারা? যা প্রয়োগ করে রাজ্যপাল রাজ্যের বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখার ক্ষমতা রাখেন। শনিবার রাজ্যে যখন চার পুরনিগমের ভোট চলছে, তার মধ্যে রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখার ঘোষণা টুইট করে রাজ্যপাল শোরগোল বাধিয়ে দেন। এর আগে রাজ্যে কোনও রাজ্যপাল ১৭৪ নম্বর ধারা প্রয়োগ করেননি।
কিন্তু কী রয়েছে সংবিধানের ওই ১৭৪ নম্বর ধারায়? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সংবিধানের ১৭৪ নম্বর ধারা মোতাবেক রাজ্যপাল রাজ্য বিধানসভাকে সমন পাঠাতে পারে বা তলব করতে পারবে। আর বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত ৬ মাস কার্যকরী থাকে। দ্বিতীয়বার তিনি একই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না এই সময়ের মধ্যে। অর্থাৎ একবার সমন পাঠালে দ্বিতীয়বার তিনি সমন পাঠাতে পারবে না।
এই ধারা প্রয়োগে রাজ্যপাল বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন, যদি মুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীদের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়। এই জাতীয় পরিস্থিতি বিধানসভায় তৈরি হলে মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যপালের কাছে দরবার করতে পারেন। রাজ্যপালের কাছে সংবিধান মোতাবেক এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে রাজ্যপালের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবেই এই ক্ষমতা থাকে।
রাজ্যপাল সাধারণভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ মেনেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এদিকে ভারতীয় সংবিধানের ১৫৫ নম্বর ধারা বলে ভারতের রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালকে নিয়োগ করে থাকেন। সংবিধানের ১৫৪-এর ১ ধারা মোতাবেক রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে থাকে।
রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় সেই ক্ষমতাই রাজ্যের উপর প্রয়োগ করতে চাইছেন। সেইমতোই তিনি ১৭৪ ধারার ২ নম্বর উপধারা প্রয়োগ করে রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্থগিতের কথা ঘোষণা করেছেন।
শনিবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় টুইটে লিখেছেন, সংবিধানের ১৭৪ নম্বর ধারা প্রয়োগের অধিকার রয়েছে তাঁর। সেই অধিকার বলে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখার ঘোষণা করছেন। রাজ্যপালের এই টুইটে তোলপাড় পড়ে যায়। যদিও রাজ্যপালের এই টুইটকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকারি দল তৃণমূল।
এমনকী তৃণমূল কংগ্রেস এটিকে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত হিসেবেও ধরতে নারাজ। রাজ্য সরকারে তরফে জানানো হয়েছে, শীতকালীন অধিবেশন ১৭ নভেম্বর শেষ হয়ে গেলেও রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাতের কারণে ফাইলটি রাজভবনে পাঠানো হয়নি। পরিষদীয় দফতর থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ফাইলটি রাজভবনে পাঠানো হয়। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যপাল অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করে দিয়ে ওই টুইটটি করে। রাজ্য সরকারের তরফে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এটা গত অধিবেশনের সমাপ্তির ঘোষণা।
রাজ্যপালের টুইট করে বিধানসভা স্থগিত প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা দ্বিধাবিভক্ত। রাজ্যপাল বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত করে দেওয়ার পর রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ কি তাঁর নিজ ক্ষমতাবলে অধিবেশন শুরু করতে পারেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। একাংশ বলেন, রাজ্যপাল অধিবেশন স্থগিত করে দেওয়ার পর রাজ্যের কাছে আদালতে যাওয়া ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। একমাত্র আদালতেই পারে ফের অধিবেশন শুরুর অধিকার দিতে।
আবার বিশেষজ্ঞদের অপর একটা অংশ বলছে, স্পিকার তাঁর ক্ষমতাবলে শুরু করতে পারেন অধিবেশন। রাজ্যপালের অনুমতি ছাড়াই এবং রাজ্যপালের ভাষণ ছাড়াই অধিবেশন চলবে। তারপর রাজ্যপাল টুইট করে অধিবেশন স্থগিতের কথা বলতে পারেন না। তাঁর এই পদক্ষেপ ধোপে টিকবে না আদালতে। তিনি প্রয়োজনে চিঠি দিয়ে রাজ্যকে জানাতে পারতেন অধিবেশন স্থগিতের প্রসঙ্গটি।