নিজের ভোটই দিতে পারলেন না একদা 'শাসনের ত্রাস' মজিদ মাস্টার
কলকাতা, ২৫ এপ্রিল : পরিবর্তনের যুগে নিজের সাংবিধানিক অধিকারই প্রয়োগ করতে পারলেন না মজিদ আলি। তৃণমূলের ভয়ে উত্তর ২৪ পরগনার শাসনে গিয়ে নিজের ভোটটাই দিতে পারলেন না একসময়ের এই দাপুটে বাম নেতা।
চতুর্থ দফা নির্বাচনের LIVE UPDATE পড়ুন এখানে
এই শাসন এলাকায় তাঁর নামে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত। সন্ত্রাস, খুন, অপরাধের হাজারো অভিযোগ থাকলেও কেউ কোনওদিন টিঁকিটিও ছুঁয়ে দেখতে পারেনি তাঁর। শাসন এলাকায় এমনই দাপট ছিল সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা মজিদ আলির। সকলে যাকে একনামে চেনে মজিদ মাস্টার হিসাবে।
তবে ২০০৯ সালে পুরো ছবিটা বদলে গেল। তৃণমূল কর্মী-সমর্থক নূর আলি মহম্মদকে খুনের দায় চাপে মজিদ মাস্টারের নামে। তারপর থেকে শাসন এলাকা ছাড়া হতে হয় তাঁকে। তারপরে আর কোনওদিন চেয়েও শাসনে ফিরতে পারেননি তিনি। পরে জেলেও যেতে হয়েছে এই অভিযোগে।
২০১৪ সালের অক্টোবরে প্রায় কয়েকবছর পরে একবার পুলিশকে না জানিয়ে শাসনে ফিরেছিলেন তিনি। তবে গ্রামবাসীদের আক্রমণের মুখে পড়ে পুলিশের নিরাপত্তায় শাসনে নিজের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তারপর থেকে বারাসতের কাজিপাড়া এলাকার ভাড়াবাড়িই আস্তানা মজিদ মাস্টারের।
বাম আমলে বারবার মজিদ মাস্টারের নামে নানা অভিযোগ তুলত বিরোধীরা। এলাকায় সন্ত্রাস, বিরোধীদের মাথা তুলতে না দেওয়া তো ছিল, তার পাশাপাশি একসময়ের স্কুল শিক্ষক মজিদ আলির বিরুদ্ধে শাসনের ৪০ হাজার বিঘা জলশয়ের কর্তৃত্ব ছিল। ১০-১৫ হাজার টাকা বিঘা প্রতি যা লিজে দিতেন তিনি।
এর পাশাপাশি শাসনের মোট ১২টি গ্রাম ভয়ে তটস্থ থাকত মজিদ মাস্টারের নামে। সেখানে নিজের প্রাইভেট বাহিনী তৈরি করেছিলেন তিনি। যে বাহিনী গোটা শাসনকে শাসন করত মজিদ মাস্টারের অঙ্গুলি হেলনে।
অথচ আজ পরিস্থিতি বদলেছে। সিপিএমের একসময়ের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মজিদ আলি বয়সের কারণে রাজনীতি থেকে দূরে সরে এসেছেন। নিজের হাতে দাপট চালানো শাসনও তাঁকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে বারাসতের ভাড়া বাড়িতে দিন কাটে তাঁর।
যে শাসনে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করেছিলেন মজিদ মাস্টার, এদিন সেই শাসনেই নিজের ভোট দিতে পারলেন না তিনি। কী বলা যায় একে? ইতিহাসের পাল্টা আঘাত? হয়ত তাই।