আর সরকারি রিপোর্টে ভরসা নেই, জেলার খবর এবার নিজস্ব 'নেটওয়ার্ক' থেকে জানবেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী
জেলায় কেমন কাজ চলছে তা জানার জন্য তিনি যে আর শুধু মাত্র প্রশাসনের আধিকারিকদের ওপর নির্ভর করবেন না, তা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জেলায় কেমন কাজ চলছে তা জানার জন্য তিনি যে আর শুধু মাত্র প্রশাসনের আধিকারিকদের ওপর নির্ভর করবেন না, তা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরাতে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান যে জেলা থেকে যে রিপোর্ট তিনি সরকারি ভাবে পান তার পাশাপাশি রিপোর্ট পাওয়ার জন্য তার নিজের 'ইনফ্রাস্ট্রাকচার' আছে। সেই নেটওয়ার্ক ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার থেকেই তিনি ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার জেলার প্রচুর অভিযোগ পেয়েছেন।
এদিন বৈঠকে সেই সব অভিযোগের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার আধিকারিকরা ঠিক মতো কাজ করছেন না । পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে তিনি ৭৮৬ জনের অভিযোগ পেয়েছেন যার বেশির ভাগই খারাপ রাস্তা সংক্রান্ত । পূর্ত দফতরের কাজে গাফিলতি আছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই জেলা থেকেই আইন শৃঙ্খলা, পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ৩০৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে । জেলা প্রশাসনের কাজ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে অনেক । জমি সংক্রান্ত অভিযোগ আছে প্রায় ১৭৫টি। বারে বারে বারে বলার পরেও জমির পাট্টা দেওয়া হচ্ছে না, জমির বেদখল হচ্ছে, নদীতে বেআইনি ভাবে বালি তোলা বন্ধ হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রীর হিসাবে এই জেলা থেকেই ৩৫৭৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে । যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। জেলা শাসক, পুলিশ সুপার, বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের ধমক দিয়ে বলেন যে কেন একটা জেলা থেকে তার কাছে এত অভিযোগ জমা পড়েছে । তার অর্থ এই জেলার পুলিশ প্রশাসন ঠিক মত কাজ করছে না। শুধু মাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর না, ঝাড়গ্রাম জেলার থেকেও রাস্তা, হাসপাতাল, জমি সংক্রান্ত, বেআইনি বালি তোলা, ঠিক মত ভাতা না দেওয়ার সংক্রান্ত অভিযোগ উঠেছে।
এই সব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের তুলোধোনা করে বলেন যে তাদের প্রত্যেকের কাজের দায়বদ্ধতা আছে এবং সেটা তারা এড়াতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রী এই বৈঠকে বলেন যে প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিক, পুলিশ ও জন প্রতিনিধিদের নিয়মিত এলাকায় গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে।
এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বারে বারে বুঝিয়ে দেন তিনি আর শুধু মাত্র প্রশাসনের আধিকারিকদের ওপর নির্ভর করবেন না । তার নিজের নেটওয়ার্কেও এলাকা নিয়ে পুরো রিপোর্ট দেখবেন ।এবং সেই মত কাজ হবে।
জেলা প্রশাসনের কয়েক জন মনে করেন যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর লোকসভার নির্বাচনেও যে ভরাডুবি হয়েছে এই এলাকাতে তার পর আর প্রশাসনের ও নিজের দলের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করবেন না মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে ঠিক মত কাজ না হলেও কাজ হয়েছে বলে তার কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে । কাজ না হওয়ায় মানুষ তার দলকে ভোট দেয় নি। তাই এলাকার প্রকৃত চিত্র পেতে নিজের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই রিপোর্ট যে ভুল না তার নমুনা আজ পেয়েছেন তারা।