সভাপতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহে পদত্যাগের হিড়িক বিজেপিতে, এবার কারা চললেন তৃণমূলে
যখন বিজেপি নেতৃত্ব ভাবছিল মুকুল রায়কে দিয়ে তৃণমূলকে ভাঙা অনেক সহজ হবে। তখন বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে এমন বিদ্রোহ দেখা দেবে, তা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি বিজেপি নেতৃত্ব!
তৃণমূল কংগ্রেসকে ভাঙতে গিয়ে নিজেরাই বিপাকে। মুকুল রায়-দিলীপ ঘোষরা উত্তরবঙ্গ সফরের পরও দলের অন্দরে ভাঙন ঠেকাতে ব্যর্থ। যখন বিজেপি নেতৃত্ব ভাবছিল মুকুল রায়কে দিয়ে তৃণমূলকে ভাঙা অনেক সহজ হবে। তখন বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে এমন বিদ্রোহ দেখা দেবে, তা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি বিজেপি নেতৃত্ব! বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আলিপুরদুয়ারে অস্তিত্ব হারাতে চলেছে বিজেপি-র সংগঠন।
[আরও পড়ুন:ডিভোর্স রুখতে অভিনব উদ্যোগ সিউড়ির বিচারকের, দেখুন ভিডিও]
বিজেপির জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে জেলায় পদত্যাগ অব্যাহত রয়েছে গেরুয়া শিবিরে। শুধু বিজেপি নেতা-কর্মীরা পদত্যাগ করেই ক্ষান্ত নন, তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য লাইন দিয়েছেন। গত এক মাসে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে আলিপুরদুয়ার জেলায়। খোদ জেলা সহ সভাপতির বিদ্রোহের শরিক হয়ে অনেকেই বিজেপি ছাড়ছেন। আর তাতেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন বিজেপি জেলা সভাপতি।
সম্প্রতি ডুয়ার্সের গজমম এলাকার নেতা-কর্মীরা দল বেঁধে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। তাঁদেরও অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে বিজেপি জেলা সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা দেখিয়েই তাঁদের বিজেপি এই দলত্যাগ। সেইসঙ্গে বিজেপি জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও এনেছেন দলত্যাগী নেতা-কর্মীরা।
ভাঙনের সূত্রপাত ২০১৭-র আগস্টে। আলিপুরদুয়ারের জেলা সহসভাপতি হেমন্তকুমার রায় বিজেপি থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, জেলা সভাপতি তলে তলে মোর্চার হয়ে কাজ করছেন। দিল্লিতে গিয়ে গোর্খাল্যান্ডের হয়ে সওয়াল করছেন। যার প্রভাব পড়ছে সংগঠনে। বিজেপি যে বঙ্গভঙ্গের পক্ষে, তা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। এই অভিযোগ তুলেই হেমন্ত রায় সরে গিয়েছিলেন বিজেপি থেকে।
তাঁর পথ ধরে এরপর বিজেপির একাধিক নেতা কর্মী ইস্তফা দিতে শুরু করে। এঁদের মধ্যে ছিলেন আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপির ১০ নম্বর মণ্ডল কমিটির ১৯ জন বুথ সভাপতিও। এছাড়াও মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে সম্পাদক, সহ সভাপতি ও তিন শতাধিক সদস্যও ইস্তফা দেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই তৃণমূলে পা বাড়িয়েছেন।
ডুয়ার্সের আদিবাসী নেতা পবন লাকড়াও ফিরে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। গত ডিসেম্বরে তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস যোগদান করেন। তাঁর সঙ্গে অনুগামী কর্মীরাও গিয়েছেন তৃণমূলে। আর সেই ধারা বজায় রয়েছে নতুন বছরেও। এমনকী মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ-রা উত্তরবঙ্গ সফরে এসেও এই ভাঙন আটকাতে পারেননি।
আলিপুরদুয়ারে বিজেপির ১২ নম্বর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দত্ত জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে গত ৩১ ডিসেম্বর বিজেপি ছেড়েছেন। তারপর ভাঙন ধরেছে বিজেপি জেলা সভাপতির অনুগামীদের মধ্যেও। ৬ জানুয়ারি ১০ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি অনুপ রায়, সাধারণ সম্পাদক বিক্রম কার্জি কর্মীদের নিয়ে বিজেপি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে।
জেলা বিজেপিতেই এমন বিদ্রোহ নজিরবিহীন বলে আখ্যা দিয়ে পুরনো এইসব বিজেপি নেতাদের দাবি, বর্তমান রাজ্য সভাপতির দুর্নীতি ও মোর্চা-ভজনা চলতে থাকলেও বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাবে জেলায়। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তবে রাজ্য নেতৃত্ব পঞ্চায়েতের প্রাক্কালে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পদত্যাগীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলবে। বিজেপির শক্তিক্ষয় আটকানোর সমস্ত প্রয়াস চালানো হবে।
[আরও পড়ুন:বিনিয়োগ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক রাজ্য, বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে কটাক্ষ বিরোধীদের]