বিজেপিতে ‘দলত্যাগী’রাই পদাধিকারী, দলের জন্য ‘ত্যাগে’র দাম নেই! ক্ষোভ আদি নেতাদের
বিজেপিতে ‘দলত্যাগী’রাই পদাধিকারী, দলের জন্য ‘ত্যাগী’র দাম নেই! ক্ষোভ আদি নেতাদের
রাজ্যে আগামী বছরে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি নতুন রাজ্য কমিটি গঠন হয়। এর ফলেই পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে ফাটল তৈরি হয়। তৃণমূলের মতো আদি-নব্য দ্বন্দ্ব বাধে বিজেপিতেও। তৃণমূল এবং সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আদি নেতারা।
পুরনোরা অসন্তুষ্ট, বুমেরাং হতে পারে বিজেপির
বিজেপির পুরনোদের অভিযোগ, বেশ কয়েকজন নতুন নেতাকে বিভিন্ন মোর্চার দায়িত্বে আনা হয়েছে। এবং বিজেপির রাজ্য কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে দলে নতুন আসা অনেককে। এর ফলে পুরনোদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সেই অসন্তুষ্টি বুমেরাং হতে পারে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই পদাসীন
সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সংগঠনে যে রদবদল হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে বিজেপির রাজ্য ইউনিট, মহিলা, যুব, এসসি এবং এসটি শাখায় পরিবর্তন হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইনার-রাজনীতিবিদ অগ্নিমিত্রা পালকে মহিলা মোর্চার সভাপতি করা হয়েছে। দলের এমপি সৌমিত্র খান যুব মোর্চার সভাপতি হয়েছে। ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।
রাজ্য নেতৃত্ব নতুন নেতাদের পক্ষে, অভিযোগ
কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দুলাল বরকে এসসি মোর্চা সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। আর সিপিএম থেকে যোগ দেওয়া দলের সাংসদ খগেন মুর্মুকে এসটি মোর্চা প্রধান করা হয়েছে। নতুন এই পরিবর্তনগুলি দলের দীর্ঘদিন লড়াই করা নেতাদের বিরক্ত করেছে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, রাজ্য নেতৃত্ব নতুন নেতাদের পক্ষে।
পদ্মফুলে যোগ দিয়েই পদাধিকারী তৃণমূল-সিপিএমের নেতারা
এ ছাড়া প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা পুরসভার চেয়ারম্যান বর্তমানে বিজেপির সাংসদ অর্জুন সিংকে রাজ্য ইউনিটের সহ-সভাপতি করা হয়েছে। তাঁর পদোন্নতি হয়েছে বিজেপিতে। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্তকে রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ভারতী ঘোষ, মাফুজা খাতুনের মতো আরও অনেক নাম রয়েছে যাঁরা পদ্মফুলে যোগ দিয়েই পদাধিকারী হয়েছেন।
বাইরের লোকেদের গুরুত্ব, দলের নেতাদের ত্যাগের দাম নেই
অভিযোগ, যাঁরা আজ বিজেপির পদাধিকারী তাঁরা মূলত বাইরের লোক। সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়ে তাঁরা মাথায় এসে বসেছেন। রাজ্য নেতৃত্ব বিজেপির পুরনো নেতাদের কথা ভাবেননি। দলের প্রতি তাঁদের উৎসর্গ বা ত্যাগকে উপেক্ষা করেছে তাঁরা। এতদিন তাঁরা যে দলটা করে এসেছেন, সমর্থন জানিয়ে এসেছেন বিজেপির কাজকর্মের, তাঁর কোনও দাম নেই রাজ্যের নেতৃত্বের কাছে।
বিশ্বাসঘাতকতারা ঠাঁই পেয়েছেন, ক্ষোভ আদি নেতাদের
তাঁদের আরও অভিযোগ, নতুন নেতারা হলেন সুবিধাবাদী, যাঁরা তাদের প্রাক্তন দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দলকে বিপদে ফেলে নির্বাচনের আগে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছিলেন। আবার তাঁরা বেগতিক বুঝলেই এই দলকেও বিপদে ফেলে দিতে পারেন। যাঁরা এতদিন দলের সেবায় নিয়োজিত ছিল, তাঁদের কথা দলের মনে পড়ল না। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক প্রবীণ নেতা এমনই ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপির বিরুদ্ধে।
তৃণমূল-বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, ফায়দা তুলতে পারবে বাম-কংগ্রেস?
তৃণমূলে এতদিন যে সমস্যা ছিল সেই আদি-নব্য দ্বন্দ্বের বীজ এবার ছড়িয়েছে বিজেপিতেও। ফলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার ২০২১-এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলই। এই অবস্থায় বাম ও কংগ্রেসের কাছে মহা সুযোগ নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলার। তাই তৃণমূল-বিজেপির দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে বাম-কংগ্রেস কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তার দিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
বিজেপিতে অসন্তোষ, প্রতিক্রিয়া দিলীপ ঘোষের
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মেদিনীপুরের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "রাজ্য কমিটিতে কে অন্তর্ভুক্ত হবেন, কে হবেন না- সে সম্পর্কে তাঁদের মতামত সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। এটি একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। নতুন কমিটি গঠনের পর নেতাদের কাছ থেকে এ জাতীয় প্রতিক্রিয়া আসা স্বাভাবিক। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব চাপা পড়ে যাবে। বিজেপি একত্রিত হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
বাংলাকে হিংসা মুক্ত করতে ডাক! মারের বদলা মারই শ্যামাপ্রসাদের শিক্ষা, বললেন দিলীপ