পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় 'মর্মাহত' হতেই তিতিবিরক্ত শোভন চট্টোপাধ্যায়!
শোভন চট্টোপাধ্যায়র রাজনৈতিক মূল্য বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে অনেক বেশি। তুল্যমূল্য ভাবে এই ইঙ্গিত দিয়েই বিজেপির বিজয়া সম্মেলনী বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছিলেন বিজেপির মহিলা মোর্চা নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। এরপরই মর্মাহত বৈশাখী মঙ্গলবার ভোর বেলা দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে অগ্নিমিত্রাকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার শেখানোর চেষ্টা করেন।
শোভন-বৈশাখী বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা?
এই পুরো দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বিজেপির বিজয়া সম্মেলনীকে ঘিরে। এই অনুষ্ঠানে ডাক পাননি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আর যার জেরে শোভন চট্টোপাধ্যায় বা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কেউই রবিবার ইজেডিসিসি-তে আয়োজিত বিজেপি-র বিজয়া সম্মেলনী অনুষ্ঠানে পা রাখেননি। বৈশাখী স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন, দুজনের মধ্যে বিভাজন করা হচ্ছে বলেই বিজয়া সম্মিলনীতে যাবেন না তাঁরা। কিন্তু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন অভিযোগ অস্বীকার করে গেরুয়া শিবির।
অগ্নিমিত্রাকে কড়া ভাষায় নিজের 'দাম' বোঝালেন বৈশাখী
তবে কতকটা বৈশাখীর অভিযোগকে সঠিক প্রমাণ করেই অগ্নিমিত্রা পাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, শোভন দার সঙ্গে কি আর বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করা যায়! এতেই ফের তাল কাটে। দিলীপ ঘোষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বৈশাখী-শোভন যেই দূরত্ব কমাতে চেয়েছিল, তা যেন আরও চওড়া হয়ে গেল। এবং এরপরই দলের অন্তর্কলহ ফের একবার সামনে এসে পড়ে। অগ্নিমিত্রা পালকে কড়া ভাষায় নিজের 'দাম' বোঝান বৈশাখী।
রাজনৈতিক উথাল পাথাল
অরবিন্দ মেনন এবং অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে বৈঠকের পরপরই জল্পনা শুরু হয়েছিল বিজেপিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে। সূত্রের খবর, কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। তবে সুর কাটে বিজয়া সম্মেলনী ঘিরে। বৈশাখীকে আমন্ত্রণ না জানানোয় সেই অনুষ্ঠান বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।
গেরুয়া শিবির মানভঞ্জনে নামে
এই পরিস্থিতিতে গেরুয়া শিবির মানভঞ্জনে নামে। স্বয়ং দিলীপ ঘোষ মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বরফ গলানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলন। তবে ফের সব ওলট পালট হয় অগ্নিমিত্রা পালের বক্তব্যে। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি অগ্নিমিত্রার মতো বিজেপির অনেকেই বৈশাখীকে চাইছেন না দলে?
শোভন চট্টোপাধ্যায় ফের বিরক্ত
অগ্নিমিত্রার বক্তব্যে অবশ্য এও মনে হতে পারে যে শুধু মাত্র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে খুশি করতেই তিনি কথাগুলি বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্যে ইচ্ছা করে বৈশাখীকে নীচু দেখানোর কোনও অভিপ্রায় ছিল না। তবে ঘটনাক্রমেই তা হয়ে যায়। তবে কারণ যাই হয়ে থাকুক শোভন চট্টোপাধ্যায় ফের বিরক্ত হয়েছেন।
অগ্নিমিত্রার বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন বৈশাখী
এদিন এক দীর্ঘ পোস্টে অগ্নিমিত্রার বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন বৈশাখী। সেখানেই তিনি জানান, এই ঘটনায় শোভন চট্টোপাধ্যায় খুবই বিরক্ত হয়েছেন। বৈশাখী লেখেন, 'আপনি (অগ্নিমিত্রা পাল) যদি আপনি সেই উক্তি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে খুশি করতে করেছিলেন, তাহলে আমি আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই যে আপনার এই দায়িত্বহীন বক্তব্য শোভ চট্টোপাধ্যায় খুবই বিরক্ত হয়েছেন।'
কী লেখেন বৈশাখী?
বৈশাখী লেখেন, একজন শিক্ষাবিদ হওয়া ছাড়াও আমি মহিলা এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থে প্রচুর কাজ করেছি। আমি অশিক্ষা দূর করতে মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করেছি। আমি ফেসবুক টুইটারে এমনি এমনি ছবি পোস্ট করে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াইনি। আমি রাজনৈতিক পথে হেঁটেছি। মিটিং মিছিতে যোগ দিয়েছি। এরপর লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক মনে করিয়ে দিয়ে অগ্নিমিত্রার উদ্দেশে বৈশাখী লেখেন, 'এটা মনে রাখবেন আপনার পূর্বসূরী লকেট চট্টোপাধ্যায় কিন্তু আমার বিজেপিতে যোগদানের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি আমাকে প্রতিটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতেন। কিন্তু মিডিয়াতে আপনার সেই বক্তব্য আমাকে মর্মাহত করেছে। মনে রাখবেন, আমার কিন্তু কোনও রাজনৈতিক গডফাদার ছিল না।'
শুরু মেরুকরণের রাজনীতি, একুশের আগে সুর চড়িয়ে বিজেপির 'রাস্তা পরিষ্কার' করছেন ওয়েইসি