পশ্চিমবঙ্গে ডাহা ফেল আম আদমি পার্টি,কিন্তু কেন?
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের 'আম আদমি'-র দল বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪টি আসনে এবার প্রার্থী দিয়েছে। প্রথমে তো আপ নেতৃত্বের তরফে বলা হয়েছিল অন্তত ১২টি আসনে আপ প্রার্থী দেবেই। সেখান থেকে গিয়ে ঠেকে মাত্র ৫টি আসনে।
রাজ্যের মহানগরী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় শুধু মাত্র প্রার্থী দিতে সমর্থ হয়েছে আপ। কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, বারাকপুর এবং হাওড়ার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ কেন্দ্রেও প্রার্থী দিয়েছিল আপ। কিন্তু পরে সমাজসেবী মুদার পাথেরইয়া কলকাতা দক্ষিণ থেকে তার নাম প্রত্যাহার করেন ফলে শেষেমেশ তা বাংলায় আপের আসন সংখ্যা ৪-এ এসে ঠেকে।
প্রার্থী নির্বাচন নিয়েই এর পরে দলের মধ্যে কলহ শুরু হয়। আপের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সদস্যরা বিরক্তি প্রকাশ করে একে একে আপ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে থাকে, নয়তো বিরোধী শিবির গরীব আদমি পার্টি (গ্যাপ)-এ দলে দলে যোগ দিতে শুরু করে।
বর্তমানে আপ থেকে বেরিয়ে এলেও একসময় আপের বাংলা শাকার প্রধান ছিলেন কাজি মৌসম আখতার। তাঁর কথায়, আপের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিমাতৃসুলভ আচরণের ফলেই দলটা তামাশায় পরিণত হয়েছে। আপ কখনওই সাংগঠনিক শক্তিকে মজবুত করার কথা ভাবেনি। সাংগঠনিক প্রতিযোগিতা, স্বৈরাচার, দলবাজিতেই বেশি মনোনিয়োগ করেছে।
একই সুর প্রাক্তন আপ সদস্য মহম্মদ সিরাজুদ্দিন শেখের, যিনি বর্তমানে গ্যাপে যোগ দিয়েছেন। তিনি তো আপের বাংলা সংগঠনের উপর দুর্নীতিরই অভিযোগ টেনে আনলেন। তাঁর কথায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যে দলের জন্ম তারা এখন টাকা ছাড়া কিছুই বোঝে না, বিশেষয় পশ্চিমবঙ্গে।
'আপের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিমাতৃসুলভ আচরণের ফলেই দলটা তামাশায় পরিণত হয়েছে'
দলের বিক্ষুব্ধ এক অংশের কথায়, আমরা রাজ্যে একের পর এক জনসভা, পথ সভা, মিছিল, মিটিংয়ের আয়োজন করে গিয়েছি, কিন্তু দিল্লির নেতাদের এদিকে দেখার সময় কই। তাদের তো বড় সড় ব্যাপার। তারাই যখন মাথা ঘামাচ্ছেন না বাংলা নিয়ে আমরা আর কী করতে পারি? বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বা দলের অন্য শীর্য নেতারাও পশ্চিমবঙ্গে আসার প্রয়োজন মনে করেননি। তাই সংগঠনের এই দুরাবস্থা।
পশ্চিমবঙ্গ শাখার আপ নেতাদের কথায়, তহবিল তো একটা বড় বাধা বটেই। অর্থের অভাবেই বেসি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছনো যাচ্ছে না। তার উপর প্রার্থী নির্বাচনেও কোনও ধরণ নেই। যাকে তাকে দাঁড় করিয়ে লোকসভা নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলা যাবে না বলেই তাদের বিশ্বাস।
এদিকে বারবার চেষ্টা করেও বিক্ষুব্ধ তৃণমূল গোষ্ঠী যেমন, কবীর সুমন, প্রাক্তন আইপিএস অফিসার নজরুল ইসলাম, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে দলে টানতে পারেনি বাংলার আপ নেতৃত্ব। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সাংগঠনিক শক্তি ও সংযোগ মজবুত না হওয়ার কারণেই এই অনীহা তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিক শক্তি ছাড়া শুধুমাত্র জনপ্রিয়তায় ভর করে রাজনৈতিক দুনিয়ায় বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়।
এদিকে আপকে রাজনৈতিক দল বলতেই নারাজ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কথায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে, গলা ফাটিয়ে জনতার মধ্যে একটা লহর তুলতে সমর্থ হয়েছিল আপ,এর ফলে দিল্লিতে এতগুলি আসনও জিততে পেরেছিল তারা। কিন্তু আমি মনে করি না এটা এমন বড় কিছু ঘটনা। আমি এটাও বুঝতে পারি না, যাদের যুদ্ধ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা দলের মধ্যেই এত দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের ঠাঁই দিলেন কী করে।