ঠান্ডাতেও উষ্ণ হচ্ছে পাহাড়ের রাজনীতি, ছেলে অবিনাশকে সামনে রেখে মাটি শক্ত করতে চান 'ফেরার' বিমল
ঠান্ডাতেও উষ্ণ হচ্ছে পাহাড়ের রাজনীতি, ছেলে অবিনাশকে সামনে রেখে মাটি শক্ত করতে চান 'ফেরার' বিমল
সামনেই ভোট! টানটান উত্তেজনা। শাসক-বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিকদলের কাছেই কঠিন লড়াই। নজর থাকবে ২৯৪টি বিধানসভা আসনেও। তবে এবার যে সমস্ত কেন্দ্রগুলিতে বিশেষ নজর থাকবে তার মধ্যে অন্যতম নন্দীগ্রাম। কারন এই কেন্দ্র থেকেই ইতিমধ্যে নিজের নাম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণে নন্দীগ্রামের দিকে নজর থাকলেও উত্তরে নজর থাকবে দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রে। কারণ এবার এই কেন্দ্রে বিজেপির হাত ছেড়েছে বিমলপন্থীরা। তৃণমূলের সঙ্গে থাকার কথা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন বিলম গুরুং। অন্যদিকে, দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও রয়েছে। ফলে লড়াই এবার হাড্ডহাহাড্ডি হবে এই কেন্দ্রে। এমনকি, রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতে পারে
একাধিক প্রার্থীর নাম ঘোষণার সম্ভাবনা, প্রার্থী হতে পারে বিমল গুরুংয়ের ছেলে
ভোটের উত্তাপে ঠান্ডা পাহাড়েও উষ্ণতা বাড়ছে। দু ভাগে বিভক্ত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ইতিমধ্যে পাহাড়ে ফিরে এসেছেন গোর্খামুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং। বিজেপির হাত ছেড়ে তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়ছেন। এবারের ভোটে তাঁরা প্রার্থী দেবে বলে একপ্রকার নিশ্চিত। অন্যদিকে, দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রার্থী দেবে বলে খবর। দার্জিলিং কেন্দ্রে বিমলপন্থীরা প্রার্থী দেবেন সেটাও নিশ্চিত করে ফেলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনার শেষ নেই। তবে বিমল শিবির সূত্রের খবর, এবার রাজনীতিতে পা রাখছেন বিমল-পুত্র অবিনাশ গুরুং। বিধানসভা নির্বাচনে দার্জিলিং কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে তিনিই এগিয়ে। বিমল গুরুংয়ের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ছেলেকে সামনে রেখেই যে ফের একবার রাজনীতির ময়দানে পা রাখতে চলেছন বিমল তা পরিষ্কার।
বিজেপিকে সমর্থন জানায় বিলম গুরুং
বিজেপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। ২০০৭ সালে আত্মপ্রকাশের পর থেকে ১০ বছর বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেছে মোর্চা। বিজেপিকে তিনটি লোকসভা ভোটেই জেরায় মুক্তি মোর্চা। শুধু তাই নয়, একাধিকবার পাহাড়ের বিধানসভা উপনির্বাচনে গোর্খা প্রার্থীকে পালটা সমর্থন জানায় বিজেপি। ফলে, পাহাড় বিজেপি এবং গোর্খার সঙ্গেই হাত মিলিয়ে চলে। মূলত গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিমল গুরুং এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কিন্তু তাতে এখনও পর্যন্ত তাঁদের দাবিতে কোনও পদক্ষেপ বিজেপি এখনও পর্যন্ত নেয়নি। আর এর মধ্যে নদীর জল গড়িয়েছে অনেকটাই। দেশদ্রোহিতা, খুন সহ প্রচুর মামলায় ফেঁসে বিমল গুরুংরা সাড়ে তিন বছর পালিয়ে থাকলেও সেই মামলাগুলিতে নাম জড়িয়েছে বিমল গুরুংয়ের। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর গত বছর পুজোর সময় হঠাত করেই আত্মপ্রকাশ কলকাতায়। পুলিশের খাতায় ফেরার বিলম ঘুর বেড়ায় কলকাতায়। পরে অবশ্যই তৃণমূলকে সমর্থনের কথা কলকাতায় বসে জানান বিমল গুরুং।
দুভাগে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা
দীর্ঘদিন পাহাড় ছাড়ার থাকার ফলে দুভাগে বিভক্ত জনমুক্তি মোর্চা। নিজেকে এখনও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান হিসাবে দাবি করলেও বিনয় তামাং গোষ্ঠী গোর্খা মুক্তির মোর্চা চালায় দীর্ঘদিন। কার্যত শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গেই জোটে তাঁরা রয়েছে বলেও দাবি করে তাঁরা। কিন্তু বিমল গুরুং পাহাড়ে ফিরে আসায় নতুন করে রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে পাহাড়ে।
২-১ এই ছকেই প্রার্থী দেবে বিনয় তামাং এবং বিমল গুরুং শিবির
বিনয় তামাং কিংবা বিমল গুরুং দুজনেই এখন তৃণমূলকে পাহাড়ে সমর্থন করার কথা জানিয়েছে। যা বিজেপির জন্যে চাপের। এই অবস্থায় বিনয় তামাং এবং বিমল গুরুং শিবির ২-১ এই ছকেই প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে বলে খবর । বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড়ের তিনটি আসন অর্থাৎ দার্জিলিং, কার্সিয়াং ও কালিম্পং বিধানসভা কেন্দ্র। জানা যাচ্ছে, দুপক্ষকেই খুশি করতে চায় তৃণমূল। আর সে কারনে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ দার্জিলিং থেকে বিমল গুরুং এবং কার্সিয়াং ও কালিম্পং বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিনয়রা প্রার্থী দেবেন বলে প্রাথমিকভাবে স্থির হয়েছে। কাজেই দার্জিলিং থেকে বিমল কাকে প্রার্থী করবেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু।
বিমলপন্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা
বিমলপন্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে পুলিশের খাতায়। এমনকি খোদ বিমল গুরুং পুলিশের খাতায় ফেরার। এই অবস্থায় বিমলপন্থীদের কাউকে প্রার্থী করলে কমিশনের নজরে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা। আর সেদিকে তাকিয়েই নিজের ছেলে অবিনাশকে তুলে ধরছেন বিমল। ২০০৭ সাল থেকে পাহাড়ের রাজনীতিতে একেবারে একক ভাবে রাজ চালিয়ে গিয়েছেন বিমল গুরুং। ড্রাইভার থেকে রাজনীতি। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। কিন্তু দীর্ঘদিন পাহাড়ের রাজনীতি বিমল গুরুং ছিলেন না। কিন্তু নিজে রাজনীতি করলেও নিজের ছেলেকে কোনওদিনই সেই মঞ্চে নিয়ে আসেননি বিমল গুরুং। স্ত্রী আশা গুরুংকে নিয়ে বিমল রাজনীতি করতেন। কিন্তু মেয়ে বিদেশে পড়াশোনা এবং ছেলে দার্জিলিংয়ের মাউন্ট হারমন স্কুলের ছাত্র। কিন্তু রাজনীতিতে ছেলেমেয়েরা কেউ ই ছিলেন না। মাঝে একটি নেপালি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন অবিনাশ। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে বিমল পালিয়ে গেলে সঙ্গে স্ত্রী এবং ছেলেও আত্মগোপন করেছিলেন। সাড়ে তিন বছর এভাবে থাকার পর বিমল ফের প্রকাশ্যে। আর শিলিগুড়িতে ৬ ডিসেম্বর জনসভা মঞ্চে প্রথমবার ছেলেকে বাবার পাশে দেখা গিয়েছিল। তার পর থেকে তিনি যেখানেই জনসভা করছেন, প্রচারে যাচ্ছেন ছেলে অবিনাশ তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে ঘুরছেন মোর্চা সূত্রের খবর, বিমল আগামী বিধানসভা ভোটে অবিনাশকে দার্জিলিং আসনে প্রার্থী করতে চান।
'লঙ্গর খুলে দিদিমনি প্রমাণ করলেন সরকার ব্যর্থ', ৫টাকার ডিম-ভাত নিয়ে কটাক্ষ দিলীপের