মমতার স্বপ্নের বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনের জঙ্গলে চরছে গরু! বঞ্চনার অভিযোগে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি অরূপের
ভবানীপুরের উপনির্বাচনের প্রচার শেষ হওয়ার আগে ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাকে বঞ্চনা করার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বাংলা থেকে অলিম্পিয়ান উঠে আসছেন না, পরিকাঠামো, অর্থ-সহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য বাংলার ক্রীড়াবিদদের অন্য রাজ্যে পাড়ি দিতে হচ্ছে, সেখান থেকে সহজ হচ্ছে অলিম্পিক-সহ আন্তর্জাতিক আঙিনায় সাফল্যের পথ, হরিয়ানা-ওডিশাও পরিকাঠামোয় পিছনে ফেলেছে বাংলাকে, এমন সব অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই অস্বস্তিতে রাখছিল রাজ্য সরকারকে। আজ নিউ সেক্রেটারিয়েটে সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রের কোর্টেই বল ঠেললেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বেহাল
জলপাইগুড়ির বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প। মউ স্বাক্ষরের পর ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজ্য সরকার বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন তুলে দেয় সাইয়ের হাতে। সেখানেই আজ ঘন জঙ্গল, গরু-সহ গবাদি পশুর বিচরণক্ষেত্র। অরূপ বিশ্বাস বলেন, খেলাধুলোর আদর্শ আবহাওয়া উত্তরবঙ্গে। সেই কারণেই সেখানে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন গড়েছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চান বাংলার বুকে এই ক্রীড়া পরিকাঠামো ব্যবহার করতে আসুক দেশের নানা প্রান্তের ক্রীড়াবিদরা। উজ্জ্বল করুন দেশের নাম। কিন্তু বাংলার প্রতি যে বঞ্চনার মানসিকতা নিয়ে এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার, তা অব্যাহত রয়েছে ক্রীড়াক্ষেত্রেও। যার জেরে আজ শোচনীয় অবস্থা বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনের।
জলপাইগুড়িতে বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন
রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনকে সেন্টার অব এক্সেলেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সে জন্যই উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। জলপাইগুড়ি শহরের যেখানে ২৭ একর জমিতে বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে এখন এই জমির দাম সাড়ে তিনশো কোটি টাকার বেশি। সেখানেই ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে তোলে রাজ্য সরকার। এখানে তিরন্দাজি, অ্যাথলেটিক্স, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ফুটবল, জিমন্যাসটিক্স, স্কোয়াশ, সাঁতার, টেবিল টেনিস ও ভলিবল প্রশিক্ষণের যাবতীয় পরিকাঠামো রয়েছে। ছেলে ও মেয়েরা যাতে এখানে থেকেই প্রশিক্ষণ নিতে পারে সেই ব্যবস্থাই করা হয়।
সাইকে কেন দেওয়া?
কেন এটিকে সাইয়ের হাতে রাজ্য সরকার তুলে দিয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তরে অরূপ বিশ্বাস বলেন, রাজ্য সরকার নিজেই এটি চালাতে পারত। কিন্তু যেহেতু ভারতে খেলাধুলোর বিষয়টি সাই দেখে, বিভিন্ন জায়গায় সেন্টার রয়েছে তাই আমরা চেয়েছিলাম সাই ভালো কোচ এনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিভা তুলে এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। যদি সেটা হতো তাহলে তো অলিম্পিকে পদকের সংখ্যা আরও বাড়তেও পারত। কিন্তু বাংলাকে, উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পকে জঙ্গলে পরিণত করেছে কেন্দ্র।
উদাসীন কেন্দ্রের বঞ্চনা!
রাজ্য সরকারের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের তরফে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর ও কিরেণ রিজিজুকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। রাঠোর কোনও উত্তর দেননি বলে অভিযোগ অরূপ বিশ্বাসের। গত বছর জুলাইয়ে রিজিজুকে চিঠি দেওয়া হলে তিনি অগাস্টে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ না হওয়ায় চলতি মাসে ফের রাজ্য সরকার চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে। কিন্তু ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও উত্তর না আসায় এবার চরম হুঁশিয়ারি দিলেন অরূপ বিশ্বাস।
চরম হুঁশিয়ারি
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া মন্ত্রকে প্রতিমন্ত্রী বাংলারই বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। ফলে উত্তরবঙ্গের ইস্যু তুলে তাঁর ও তাঁর দলের অস্বস্তি বাড়াতে চাইলেন অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া মন্ত্রককে রাজ্য সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যদি তিন মাসের মধ্যে বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনে ক্রীড়া প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে সাইয়ের সঙ্গে মউ ভেঙে বেরিয়ে আসবে রাজ্য সরকার। তারপর কীভাবে খেলাধুলোর এই পরিকাঠামো ক্রীড়াবিদদের স্বার্থে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ চূড়ান্ত করা হবে রাজ্য সরকারের তরফে।উত্তরবঙ্গের মন্ত্রী, সাংসদ-সহ বিজেপি নেতা-নেত্রীদের বাংলা ভাগের দাবি প্রসঙ্গে অরূপ বিশ্বাস বলেন, পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়! বাংলা অটুট থাকবে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ভারতবর্ষকে নেতৃত্ব দেবেন।