টোকিও অলিম্পিকের সূচনা সাক্ষী থাকল প্রতিবাদ ও অভিনব ঘটনার
করোনা আবহে টোকিওর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা হল ৩২তম অলিম্পিকের। জাপান সম্রাট নারুহিতো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলেন অলিম্পিকের সূচনার, ১৯৬৪ সালে তাঁর পিতামহের মতোই। বিশ্বের তাবড় দেশ ঘুরে আসা মশাল অ্যাথলিটদের হাত ঘুরে একেবারে শেষে উঠল জাপানের টেনিস তারকা নাওমি ওসাকার হাতে। তিনিই স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৮ মিনিট নাগাদ প্রজ্জ্বলন করলেন অলিম্পিক মশালের। প্রায় চার ঘণ্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হল যতটা সম্ভব জাঁকজমক কমিয়েই। তবে স্টেডিয়ামের বাইরে চলল করোনা পরিস্থিতিতে অলিম্পিক বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। অলিম্পিকের সঙ্গে যুক্ত এমন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এদিনই ১০০ ছুঁয়েছে, নতুন করে ১৯ জন সংক্রমিত হওয়ায়।
দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে
দর্শকরা স্টেডিয়ামের বাইরে এলেও অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ভিতরে কেউ প্রবেশের সুযোগ পাননি। ৬৮ হাজার দর্শকাসন বিশিষ্ট স্টেডিয়ামে অতিথি, অভ্যাগতদের নিয়ে মেরেকেটে ৯৫০ জন সাক্ষী থাকলেন অলিম্পিক উদ্বোধনের। সাদার রঙের সার্জিকাল মাস্ক পরে অলিম্পিক শুরুর ঘোষণা করেন জাপান সম্রাট। টোকিও অলিম্পিক আয়োজন কমিটির প্রধান হাশিমোতো সেইকোর প্রত্যয়ী ঘোষণা, অর্ধ-শতাব্দী বাদে জাপানে ফিরল অলিম্পিক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গর্বিত হতে পারে এমন দৃষ্টান্তই আমরা স্থাপন করতে চাইছি। করোনা আবহে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের প্রতিও কুর্নিশ জানানো হয় অলিম্পিক উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে।
ভিতরে উদ্বোধন, বাইরে বিক্ষোভ
এবারের অলিম্পিকের উদ্বোধন সাক্ষী থাকল এক অভিনব ঘটনার। ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে অংশ নেওয়া ইজরায়েলের ১১ জন অলিম্পিয়ান প্যালেস্তাইন বন্দুকবাজদের হামলায় নিহত হন। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের তরফে আইওসি-কে আবেদন করা হয়েছিল, অন্তত এক মিনিট নিহতদের স্মৃতিতে শোকপালনের জন্য। আইওসি প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কিছু না জানালেও এদিন সেই নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নীরবতা পালন করা হয়। শোকপালন করা হয় করোনায় প্রয়াতদের জন্যও। অলিম্পিক আয়োজনের বিরোধীরা তখন বাইরে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছিলেন লাগাতার। তাঁদের গর্জন প্রবেশ করে মিনিটখানেকের জন্য নিস্তব্ধ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে।
মাস্ক ছাড়াই পাকিস্তান-সহ কিছু দেশ
অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাঁরা পারফর্ম করলেন তাঁরা সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে যেভাবে বাধা পেরিয়ে অলিম্পিক আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে বা অ্যাথলিটরা এই এক বছর যে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অলিম্পিকের আসরে এসেছেন, সেই প্রতিবন্ধকতা জয়ের থিম উঠে আসছিল বিভিন্ন উপস্থাপনায়। মার্চ পাস্টে যাঁরা হাঁটলেন তাঁদের সঙ্গে গ্যালারিতে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। যদিও পাকিস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের পতাকাবাহক-সহ অনেকেই মাস্ক ছাড়াই মার্চ পাস্টে হাঁটলেন, যা করোনা আবহে দৃষ্টিকটুই ঠেকেছে। এলজিবিটি কমিউনিটির প্রতি সমর্থন জানাতে কানাডার অ্যাথলিটদের জ্যাকেটে ছিল রেনবো-র চিহ্ন।
উৎসাহিত করলেন রাষ্ট্রপ্রধানরা
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ, মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বিডেনরা তাঁদের দেশের অ্যাথলিটরা মার্চ পাস্টে হাঁটার সময় করতালি দিয়ে অভিবাদন জানালেন। ১৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী বা শীর্ষস্তরীয় প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। এই প্রথমবার অলিম্পিকের আসরে বিদ্বেষ দূরে রেখে সাম্যের শপথ নিলেন অ্যাথলিটরা।
আলোর রোশনাই আর আতসবাজি
জাঁকজমকহীন অনুষ্ঠান হলেও চোখধাঁধানো আতসবাজি ও আলোর রোশনাই দেখা গেল। টোকিওর প্রতীক ইন্ডিগো বা নীলের সঙ্গে সাদা, এই দুটি রঙেরই প্রাধান্য লক্ষ্য করা গিয়েছে। ১৯৬৪ সালের অলিম্পিকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশালাকৃতি কাঠের অলিম্পিক রিংও আনা হয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। এক হাজারের বেশি ড্রোন দিয়ে তৈরি থ্রি ডি গ্লোবও টোকিওর আকাশে এদিন নজর কেড়েছে।
উচ্ছ্বাস অ্যাথলিটদের
১৬ দিনে ৩৩৯টি ইভেন্ট হবে অলিম্পিকে। যে খেলাগুলি হবে ৫০টি পিক্টোগ্রামের মাধ্যমে ও জাপানের সাইলেন্ট কমেডি প্যান্টোমাইমের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হল। রিফিউজি অলিম্পিক টিম নিয়ে ৫,৭০০ জন অ্যাথলিট ও আধিকারিক এদিন অংশ নেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। করোনার কারণে অনেকেই এই অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে মার্চ পাস্টে বেশি উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে আর্জেন্তিনা, পর্তুগাল, উগান্ডা ও ফ্রান্সের অ্যাথলিটদের।
জাপানি সংস্কৃতি
মার্চ পাস্টের মিউজিক অনেকের কাছেই চেনা ঠেকেছে। জনপ্রিয় জাপানি ভিডিও গেমসের মিউজিকই বেজেছে মার্চ পাস্টের সময়। ছিল ট্র্যাডিশনের কাবুকি থিয়েটারের ফিউশনও।
খেলা শুরু
আইওসি প্রধান থমাস বাখ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, এই মুহূর্ত আমরা সকলে মিলে উপভোগ করছি। কারণ অবশেষে এখানে আজ সকলে মিলিত হতে পেরেছি। ২০৫টি দেশের অ্যাথলিট ও আইওসি রিফিউজি অলিম্পিক অলিম্পিক টিম গেমস ভিলেজে একসঙ্গে রয়েছে। খেলাধুলোর ঐক্যবদ্ধ শক্তির বড় উদাহরণ এটি। আয়োজক জাপানের প্রশংসাও করেছেন বাখ। ফাস্টার, হায়ার, স্ট্রংগার, টুগেদার- এই মোটো নিয়েই শুরু টোকিও অলিম্পিক।