দেশের প্রবীণতম ব্যক্তি হিসাবে করোনা জয় করে ফিরলেন কলকাতার ৯৯ বছরের বৃদ্ধ
দেশের প্রবীণতম ব্যক্তি হিসাবে করোনা জয় করে ফিরলেন কলকাতার ৯৯ বছরের বৃদ্ধ
বয়স শুধুই একটা সংখ্যা। মনের জোর থাকলে সম্ভব হয় সবই। আর সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন ৯৯ বছরের শ্রীপতি নয়াবান। দু’চোখেই ছানি পড়েছে, খুব অল্পই দেখতে পান তিনি। তারওপর হাইপার টেনশনের রোগী। কিন্তু তা নিয়েই করোনা জয় করলেন তিনি। দেশের তথা রাজ্যের প্রবীণতম ব্যক্তি হিসাবে করোনা জয় করে বাড়ি ফিরলেন ডায়মন্ড হারবারের এই বৃদ্ধ। তাঁকে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সাতদিনেই সুস্থ ৯৯ বছররে বৃদ্ধ
নব্বইয়ের কোঠায় থাকা এই ব্যক্তির গলার আওয়াজ ভেঙে গিয়েছে কিন্তু তাঁর লড়াকু মনোভাবের জন্য তিনি বয়সজনিত কুসংস্কার ভেঙে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কোনও উন্নত চিকিৎসা ছাড়াই তিনি ঠিক সাতদিনের মাথায় সুস্থ হয়ে যান। ২৪ জুন তাঁর শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। শ্রীপতির পুত্র কনক কান্তি নয়াবান বলেন, ‘আমার বাবা সবসময় একজন যোদ্ধা ছিলেন। তিনি তরুণ বয়সে সেনাতে ছিলেন। আমরা তাঁর সাহস ও চেতনা দেখে বড় হয়েছি। আমরা জানতাম বাবা ঠিক করোনাকে জয় করতে পারবেন। তাঁর কাছে করোনার বিরুদ্ধে জয় কোনও বড় ব্যাপার নয়, তাঁর জীবনের অন্য এক যুদ্ধ এটা।'
৯৯ বছরের বৃদ্ধর দুই সন্তানও কোভিড আক্রান্ত
শ্রীপতি নয়াবান ১০ সন্তানের বাবা। তাঁর এক ছেলের বয়স ৭২ ও অন্যজনের ৫৩, উভয়ই হাসপাতালে চিকিৎসা রত। তাঁরা দু'জনেই করোনায় আক্রান্ত। তাঁর পঞ্চম পুত্র উপসর্গহীন থাকার ফলে সরকারি কোভিড হাসপাতালে চারদিন থাকার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১১ জন সদস্যের পরিবার শ্রীপতি বাবুকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু তিনি খুব সহজেই কোভিড-১৯ জয় করে নেন।
ঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা বাঁচিয়েছে বৃদ্ধকে
শ্রীপতিবাবুর চিকিৎসা করেছিলেন যে চিকিৎসক তাঁর মতে সময়মতো চিকিৎসাই তাঁকে বাঁচিয়ে তুলেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শ্রীপতি নয়াবাদের শরীরে অক্সিজেনের স্তর কম ছিল এবং তাঁর মধ্যে করোনা ভাইরাসের হাল্কা উপসর্গ ছিল, কিন্তু তাঁকে বাড়িতে অনবরত আইসোলেশনে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। পরিবারও এই হাল্কা উপসর্গকে অগ্রাহ্য করেনি এবং চারদিন বাড়িতে আইসোলেশনে রাখার পর তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ডাঃ সৌম্যদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা করোনা আক্রান্ত ৬০ বছরের কিছু রোগীকে মারা যেতে দেখেছি। কিন্তু আমরা অনেক বয়স্কদেরও সুস্থ হতে দেখেছি। এটা নির্ভর করে এর-একজনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। ৯৯ বছরের রোগী করোনায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন এটা আমাদের কাছে বড় সাফল্য। তিনি নতুন ওষুধে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবেন তা নিয়ে আমাদের প্রথমে সন্দেহ ছিল। আইসিএমআরের প্রেসক্রিপশন অনুসারে আমরা তাঁকে অ্যান্টিভাইরাল ও হাল্কা স্টেরওয়েড দিই। তাঁর শরীর ভালো সাড়া দেয় তাতে। কোভিড-১৯ চিকিৎসার সময় সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হল সময়মতো ওষুধের সহযোগিতা। এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যেখানে মানুষ উপসর্গগুলিকে উপেক্ষা করে এবং গুরুত্ব সহকারে নেয় না। শেষ মুহূর্তে রোগীকে হাসপাতালে আনার পর আমাদের পক্ষে তাঁকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি আমাদের সময় দেওয়া হয় তবে ৯৯ বছরের বৃদ্ধাকেও সুস্থ করে তোলা সম্ভব।'
৯৫ বছরের বৃদ্ধও করোনায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন
ডাঃ চক্রবর্তীর দাবি, শ্রীপতিকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৮৮এমএমএইচজি, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় ছিল কারণ সেটি ৯০এমএমএইচজি-এর নীচে ছিল। তাঁর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শ্রীপতি নয়াবানকে ২ লিটার অক্সিজেন দেওয়া হয়। তবে শ্রীপতি একা নন, যাঁর উদাহরণ মানুষকে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা এনে দেবে, বুধবার আরও এক ৯৫ বছরের বৃদ্ধ কোভিড-১৯ জয় করে হাওড়ার কোভিড হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
শততম জন্মদিনের আয়োজন
শ্রীপতির পরিবারের আশা অন্য আক্রান্ত সদস্যরাও শীঘ্রই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। ২০২১ সালের জুন মাসে শ্রীপতি নয়াবানের পরিবার তাঁর শততম জন্মদিন পালুনের আয়োজন করবে। তিনি ভারতের স্বাধীনতা, বৃদ্ধি ও প্রজন্মের বদল দেখেছেন। স্বল্পভাষী শ্রীপতি বলেন, ‘বয়সে কি আসে যায়? চিন্তা করোনা না আমি ঠিক আছি।'
২০২১ এর ভোটেও মুকুলই তুরুপের তাস বিজেপির, বাংলা জয়ের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছেন অমিত শাহ