একমাসে দু'বার: "আপনি জাহান্নামে যান" বলে ওবামাকে ফের আক্রমণ ফিলিপিনো রাষ্ট্রপতি দুতার্তের
ম্যানিলা, অক্টোবর ৫ : গত মাসেই তিনি বিশ্বের সর্বশক্তিমান মানুষটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। পরে আবার দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন। কিন্তু সেই দুঃখপ্রকাশ যে আদৌ প্রকৃত অর্থে নয়, তা ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রপতি রদরিগো দুতার্তে ফের প্রমাণ করলেন।
মঙ্গলবার (অক্টোবর ৪) ম্যানিলাতে দেওয়া এক অমার্জিত ভাষণে দুতার্তে দ্বিতীয়বার আক্রমণ করেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাকে, বলেন তিনি "জাহান্নামে যান।" মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্কে ইতি টানারও হুমকি দেন তিনি।
দুতার্তে, যিনি 'দ্য পানিশার' হিসেবে (কু)খ্যাত ফিলিপিনো রাজনীতিতে, গত জুন মাসে ক্ষমতায় আসেন। এবং তার পরেই পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় কড়া অভিযান। হাজার হাজার মাদক কারবারিদের মৃত্যু হতে থাকে পুলিশি অভিযানে, শিউরে ওঠে বাকি বিশ্ব। আর প্রেসিডেন্ট ওবামা এই নৃশংসতার সমালোচনা করতেই দুতার্তে বারংবার তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকেন।
সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিপিনো রাষ্ট্রপতি ওবামাকে "সারমেয় সন্তান" বলতে মার্কিন-ফিলিপিন্স সম্পর্কে চিড় দেখা দেয়। মার্কিন প্রশাসন দুতার্তের সঙ্গে ওবামার বৈঠক বাতিল করে এবং তারপরে আসে ম্যানিলার পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ। বলা হয় দুতার্তে আসলে কথাটি বলেছিলেন এক সাংবাদিককে লক্ষ্য করে।
কিন্তু অক্টোবরে ফের সেই একই কান্ড ঘটিয়ে দুতার্তে দেখালেন তিনি আছেন দুতার্তেতেই। এই পর্বে তিনি একহাত নেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকেও।
দক্ষিণ চিন সাগরে ফিলিপিন্সের মার্কিন-বিরোধী রাষ্ট্রপতি বড় প্রভাব ফেলতে পারেন
কিন্তু দুতার্তের এই বিষোদ্গার এখন আর শুধু তাঁর অভদ্র ভাষাতেই আবদ্ধ নেই। তাঁর মারমুখী মেজাজের প্রভাব পড়তে পারে সমগ্র উড়বো এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সমীকরণের উপরেও। দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিং-এর একপেশে দাপটের বিরুদ্ধে ওবামা প্রশাসন চিনের প্রতিবেশী ছোট দেশগুলিকে কাছে টানার পরিকল্পনা করেছে কৌশলগতভাবে বেজিংকে চাপে রাখতে। এর মধ্যে ফিলিপিন্সও রয়েছে।
ওবামা নিজে দু'বার ওই দ্বীপরাষ্ট্রে গিয়েছেন এবং মার্কিন-ফিলিপিন্স সামরিক সমীকরণের উপরেও গুরুত্বপ্রদান করেছেন। কিন্তু এখন দুতার্তের এহেন আচরণ ওয়াশিংটনের চিন-বিরোধী পরিকল্পনাতেই জল ঢেলে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
দুতার্তে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে (ফিলিপিন্স এককালে যার উপনিবেশ ছিল) দুষেই যে ক্ষান্ত হচ্ছেন তা নয়, তিনি একই সঙ্গে চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গেও দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করছেন। বলেছেন বেজিং এবং মস্কো ফিলিপিন্সকে "সবরকম সাহায্য" করবে বলে কথা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফিলিপিন্সের এক নতুন সামরিক চুক্তি তিনি বাস্তবায়িত করবেন বলেও জানান।
দুতার্তের কথা সত্যিই কিনা না তিনি ওয়াশিংটনকে আরও অস্বস্তিতে ফেলতে চাইছেন তা তিনিই জানেন, কিন্তু ওবামা এবং তাঁর পরবর্তী রাষ্ট্রপতির পক্ষে যে আগামী দিনগুলিতে ফিলিপিন্সের এই বেপরোয়া রাষ্ট্রপতি রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছেন, সে-ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।