
সৌরজগতের বাইরে ৫ হাজারেরও বেশি পৃথিবী রয়েছে! নাসার গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
মহাবিশ্বে আমরাই শুধু একা নয়! আমাদের মতো আরও হাজার হাজার পৃথিবী রয়েছে মহাকাশে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের গ্রহগুলি আবিষ্কার করেছেন। তারা একে অপরের সঙ্গে বহু আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করলেও একসঙ্গে সৌরজগত গঠন করেছে। কিন্ত তার বাইরে রয়েছে অনেক পৃথিবী। নাসা মহাজাগতিক সীমানার বাইরে ৫০০০-এরও বেশি পৃথিবীর খোঁজ পেয়েছে।

৫০০০টিরও বেশি গ্রহের উপস্থিতি!
নাসা সৌরজগতের বাইরে গভীর মহাকাশে গবেষণা চালাচ্ছে। গবেষণা চালিয়ে নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ৫ হাজারটিরও বেশি বিশ্ব অপেক্ষা করে আছে সৌরজগতের বাইরে। ৬৫টি নতুন গ্রহের আবিষ্কারের মাধ্যমে নাসা সৌরজগতের বাইরের নক্ষত্রের চারপাশে ৫০০০টিরও বেশি গ্রহের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে, যা মহাকাশ অনুসন্ধানে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

৬৫ নতুন গ্রহের অস্তিত্বের সন্ধান পেয়ে
নাসা এক্সোপ্ল্যানেট আর্কাইভ গবেষণার জন্য ৬৫ নতুন গ্রহের অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছে। সেইসব গ্রহে জল, জীবাণু, গ্যাসের উপস্থিতি, এমনকী জীবন থাকতে পারে বলেও মনে করছেন নাসার গবেষকরা। এই এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের ঘটনা বৈজ্ঞানিক কাগজপত্রে প্রচারিত হয়েছে ইতিমধ্যে। একাধিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি বা বিশ্লেষণাত্মক কৌশল ব্যবহারও নিশ্চিত করা হয়েছে।

গ্রহগুলি আবিষ্কার হয়েছে, প্রত্যেকটি নতুন বিশ্ব
নাসা বলেছে, যে গ্রহগুলি আবিষ্কার হয়েছে, তাদের প্রত্যেকটি একটি নতুন বিশ্ব। একেবারে নতুন গ্রহ৷ আমাদের সৌরজগতের বাইরে এমন ৫ হাজারটিরও বেশি নতুন বিশ্বের সন্ধান মিলেছে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৫ হাজারটি এক্সোপ্ল্যানেটের গঠন এবং বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিসর রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর মতো ছোট পাথুরে জগত, বৃহস্পতির থেকে বহুগুণ বড় গ্যাস দৈত্য।

গ্রহগুলি একসঙ্গে দুটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে
এই পৃথিবী বা বৃহস্পতিরা তাদের নক্ষত্রের চারপাশে জ্বলন্তভাবে কাছাকাছি কক্ষপথে রয়েছে। সেখানে 'সুপার-আর্থ' আছে, যেগুলো আমাদের নিজেদের থেকে বড় পাথুরে পৃথিবী এবং 'মিনি-নেপচুন' রয়েছে, যা আমাদের সৌর জগতের নেপচুনের ছোট সংস্করণ। ইতিমধ্যে গ্রহগুলি একসঙ্গে দুটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে এবং গ্রহগুলি একগুঁয়েভাবে মৃত নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে শত শত বিলিয়ন গ্রহ রয়েছে
এইসব গ্রহগুলি গত তিন দশক ধরে আবিষ্কৃত হয়েছে। এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়, এইসব গ্রহগুলি এক একটা বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্টযুক্ত। আর্কাইভের বিজ্ঞানের প্রধান এবং ক্যালটেকের নাসা এক্সোপ্ল্যানেট সায়েন্স ইনস্টিটিউটের একজন গবেষণা বিজ্ঞানী জেসি ক্রিশ্চিয়ানসেনও অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতো বলেন, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে শত শত বিলিয়ন গ্রহ রয়েছে এবং এটি কেবল একটি গ্যালাক্সি।

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের পাঠানো চিত্র থেকে
সম্প্রতি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের পাঠানো একটি চিত্র একটি একক ফ্রেমে হাজার হাজার ছায়াপথ দেখায়। প্রতিটিতে এরকম আরও অনন্য অনাবিষ্কৃত পৃথিবী রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এখন সেই গ্রহগুলি কীভাবে আবিষ্কৃত হয়, সেটাই জানাবেন নাসার বিজ্ঞানীরা। কীভাবে তাঁরা এত গ্রহ আবিষ্কার করেছে এবং তার থেকে অনেক গুণ গ্রহের সন্ধান পেয়েছে, তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।

ওই গ্রহে এক বছর হয় মাত্র চার দিনে
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গ্রহের আবিষ্কার একটি দীর্ঘ ও শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া। এ জন্য স্থল-ভিত্তিক এবং মহাকাশ-ভিত্তিক টেলিস্কোপগুলি থেকে আসা ডেটাগুলি বছরের পর বছর পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন। ১৯৯৫ সালে একটি সূর্যের মতো নক্ষত্রের চারপাশে শনাক্ত করা প্রথম গ্রহটি একটি উত্তপ্ত বৃহস্পতিতে পরিণত হয়েছিল। এটি একটি গ্যাস দৈত্য, যা আমাদের নিজস্ব বৃহস্পতির ভরের অর্ধেক। তা নক্ষত্রের কক্ষপথ চার দিনে পরিভ্রমণ করতে সক্ষম। অর্থাৎ ওই গ্রহে এক বছর হয় মাত্র চার দিনে।

১ লক্ষ ৭০ হাজার নক্ষত্রের একটি ক্ষেত্রের দিকে তাকিয়ে
আমাদের পৃথিবীর মতো ছোট, পাথুরে জগৎ খুঁজে বের করার জন্য এক্সোপ্ল্যানেট-হান্টিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল, যা ট্রানজিট পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি গ্রহ বা গ্রহ-সদৃশ এক্সোপ্ল্যানেটগুলি চিহ্নিত করা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম বোরুকি একটি টেলিস্কোপের সঙ্গে অত্যন্ত সংবেদনশীল আলো আবিষ্কারক সংযুক্ত করার পর মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছিলেন। টেলিস্কোপটি বছরের পর বছর ধরে ১ লক্ষ ৭০ হাজার নক্ষত্রের একটি ক্ষেত্রের দিকে তাকিয়ে থাকবে। যখন একটি গ্রহ একটি নক্ষত্রের মুখ অতিক্রম করবে তখন তারার আলোতে তা অনুসন্ধান করবে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তৃপ্তির অনুভূতি পেয়েছেন গ্রহ আবিষ্কারে
বিশ্বব্যাপী জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এই গ্রহের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অদূর ভবিষ্যতে আমরা গভীর মহাকাশে জীবনের অনুরূপ কিছু খুঁজে পেতে পারি। এখনও পর্যন্ত, আমরা এই গ্রহগুলি নিয়ে গভীরভাবে স্টাডি করছি বা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। এই আবিষ্কারে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তৃপ্তির অনুভূতি পেয়েছেন। কারণ এই আবিষ্কারে তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন।

জ্ঞানের আবির্ভাব এবং জেমস ওয়েবের আবির্ভাবে
আসলে কেউই এই বিশাল বৈচিত্র্যের গ্রহ ব্যবস্থা এবং নক্ষত্রের আবিষ্কার আশা করেননি। এটা খুবই আশ্চর্যজনক ঘটনা বলে ব্যাখ্যা করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম বোরুকি। বিজ্ঞানের আবির্ভাব এবং জেমস ওয়েবের মতো নতুন টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার পরে গ্রহ আবিষ্কার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গিয়েছে। আমরা তা থেকে আকর্ষণীয় কিছু খুঁজে পেতে পারি।