কেন দেশে দ্রুত করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে? ৪টে কারণের হদিশ দিলেন বিজ্ঞানীরা
কেন দেশে দ্রুত করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে?
গত বছরের মতো এ বছরও রেহাই মিলল না মারণ ভাইরাস করোনার থেকে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে করোনা ভাইরাস। দেশজুড়ে ক্রমেই সংক্রমণ বাড়ছে, দৈনিক সংক্রমণ তীব্রভাবে কেন বাড়ছে ভারতে তা জানতে চাইছেন দেশবাসী। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার তিনটে কারণ জানিয়েছেন দেশের বিজ্ঞানীরা।
তিন দেশের মিউট্যান্টের প্রবেশ ভারতে
ভায়রোলজিস্ট শাহিদ জামিল এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কারণ হল মিউট্যান্টগুলি মাথা চাড়া দিয়েছে, আন্তর্জাতিক ও এই দেশের উভয়। তিনি বলেন, 'নতুন দ্বিগুণ মিউট্যান্টগুলি ভারতে ঢুকতে শুরু করে দিয়েছে এবং যার ১৫-২০ শতাংশ কেস মহারাষ্ট্রে পাওয়া গিয়েছে। যদি এই সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পায়, তবে মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ বাড়ার পেছনে এই মিউট্যান্টের ভূমিকা স্পষ্ট হবে।' ভারতে প্রথম ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের ভ্যারিয়ান্ট পাওয়া যায়। মার্চের শেষের দিকে, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (এনসিডিসি) ঘোষণা করে যে মহারাষ্ট্র, দিল্লি ও পাঞ্জাবের মানুষের থেকে নেওয়া মুখের লালার নুমনায় এই নতুন ভ্যারিয়ান্ট সনাক্ত করা গিয়েছে। জেনোম সিকোয়েন্সিং ইন্ডিয়ান সার্স-কোভ-২ কনসোর্টিয়াম অন জেনোমিক্সের (আইএনএসএসিওজি), ভারতের ১০টি ল্যাব কনসোর্টিয়াম দ্বারা পরিচালিত ভ্যারিয়ান্টের দুটি গুরুত্বপূর্ণ মিউটেশনকে 'ডাবল মিউট্যান্ট' হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রমণ ছড়াতে দক্ষ ব্রিটেনের ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জামাল জানান যে ২টি মিউটেশনের মধ্যে একটি ডবল মিউট্যান্ট ক্যালিফোর্নিয়াতেও সনাক্ত হয়েছে, যা সংক্রমণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে।
কোভিড আচরণ বিধি
পরবর্তী কারণ হল সরকার ভারতের নাগরিকদের কাছে কোভিড যথাযথ আচরণবিধি অনুসরণ করার জন্য আর্জি জানালেও কোনো নিয়মই পালন করেননি দেশবাসী। জামাল বলেন, 'কোভিড-পরবর্তী সময়ের মতো সমস্ত কিছু খোলা রয়েছে এবং আচরণ এমন যেন দেশের জনসংখ্যার বড় অংশের কোনও ঝুঁকি নেই।' তামিলনাড়ুর খ্রীষ্টান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক তথা ভায়রোলজিস্ট টি জ্যাকোব জন বলেন, 'প্রথম ওয়েভের চেয়েও দ্বিতীয় ওয়েভে সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুটা ভ্যারিয়ান্টের কারণে আর কিছুটা মানুষের উদাসীন মনোভাবেকর কারণে।'
টিকাকরণ কর্মসূচি
দেশে টিকাকরণ কর্মসূচির প্রসঙ্গে জামিল জানান যে সরকারের টিকাকরণ কর্মসূচিতে গতি আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, 'অনেক কারণ রয়েছে এর পেছনে, স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন কর্মী সহ যারা টিকাকরণের যোগ্য, তারাই টিকা নিতে দ্বিধাবোধ করছেন। এমনকী মার্চের গোড়ার দিকে সংক্রমণ বৃদ্ধি হোয়া সত্ত্বেও ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা নাগরিকদের টিকা নেওয়ায় সেভাবে আগ্রহ নেই। যেখানে ০.৭ শতাংশ নাগরিক উভয় ভ্যাকসিন ডোজ ও মাত্র ৫ শতাংশ প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে সেখানে খুব দ্রুত এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ভ্যাকসিনের প্রভাব খুব কম দেখা যাচ্ছে।'
দ্বিতীয় বার আক্রান্তের কারণ
এগুলি ছাড়াও জেনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টারগ্রেটিভ বায়োলজি (আইজিআইবি) ইনস্টিটিউট জানিয়েছে যে করোনায় আক্রান্ত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে ছ'মাস পর। আর এটাই কারণ যাঁদের আগে করোনা হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা পুনরায় আক্রান্ত হচ্ছেন, আভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কানপুরের আইআইটি সহ দেশের বিজ্ঞানীদের মতে দেশে বিদ্যমান দ্বিতীয় ওয়েভ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় চড়চড়িয়ে বাড়বে এবং তা মে মাসের শেষের দিকে হ্রাস পেতে শুরু করবে।
দেশের করোনা পরিস্থিতি
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬১,৭৩৬ জন। এটা নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট সংক্রমণের সংখ্যা ১.৩৬ কোটির গণ্ডি পার করে গিয়েছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৮৭৯ জনের, যা নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ১৭১,০৫৮ জন। মহারাষ্ট্র ও দিল্লির পরিস্থিতি খুব খারাপ।
কোভিড দমনে এবার যোগী রাজ্যেও কি লকডাউন জারি করা হবে? জেনে নিন আসল সত্য