ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মান্দোস, কোন দেশ করল নামকরণ, অর্থই বা কী? জানালেন আবহবিদরা
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মান্দোস, কোন দেশ করল নামকরণ, অর্থই বা কী? জানালেন আবহবিদরা
ফের ডিসেম্বরে সাগরে বাসা বাঁধতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় মান্দোস। বর্তমানে নিম্নচাপ আকারে তা দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগ বা আইএমডি-র পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কে করল, আর এই মান্দোস নামের মানেই বা কী, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আবহবিদরা।
বঙ্গোপসাগরে বাসা বাঁধছে ঘূর্ণিঝড়
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, "মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আবহিবদরা জানিয়েছেন, ৮ ডিসেম্বর সকালের মধ্যে উত্তর তামিলনাড়ু-পুদুচেরি এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।"
অপেক্ষায় রযেছে ঘূর্ণিঝড় মান্দোস
২০০৮ সালে তৈরি আট সারি তালিকা শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই। তারপর ২০২০ সালে প্রকাশিত ১৩ সারি তালিকার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এই তালিকার ১১টি ঝড় ইতিমধ্যেই বয়ে গিয়েছে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর দিয়ে। শেষ ঝড় হিসেবে বয়ে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিতরাং। সিতরাংয়ের পর অপেক্ষায় রযেছে ঘূর্ণিঝড় মান্দোস। কে করল তার নামকরণ?
প্রথম সারির এখনও দুটি নাম অপেক্ষায়
২০২০ সালের তৈরি নতুন তালিকা ব্যবহারের পর ওই বছরই সালে চারটি ঝড় বয়ে গিয়েছিল। সেগুলি হল- নিসর্গ, গতি, নিভার ও বুরেভি। নিসর্গ এসেছিল পুরনো তালিকার শেষ ঝড় আম্ফানের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। ২০২০ সালে আম্ফানকে নিয়ে মোট পাঁচটি ঝড় বয়ে যায় ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলে। আর ২০২১ সালেও পাঁচটি ঝড় বয়ে যায়। ২০২১ সালের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ছিল তাউটে বা তাউকটে। তারপর ইয়াস বা যশ, গুলাব, শাহিন, জাওয়াদ বয়ে গিয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশীয় অঞ্চলে। জাওয়াদ ছিল এই তালিকায় নবম নাম। ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি ঝড় বয়ে গিয়েছে। তা হল- অশনি ও সিতরং। প্রথম সারির এখনও দুটি নাম অপেক্ষায় রয়েছে। তারা হল- মান্দোস ও মোচা।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে 'মান্দোস'
বঙ্গোপসগারে এই ডিসেম্বরে যদি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, তবে তা হবে সিতরাংয়ের পর বর্ষা পরবর্তী দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ের নাম দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। যদি এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তবে তার নাম হবে 'মান্দোস'। আরবি ভাষায় মান্দোসের অর্থ হল টাকা বা ধন-দৌলতের বাক্স। এরপরের নামটি দিয়েছে ইয়েমেন। তারপর ফের শুরু হবে দ্বিতীয় সারির নামের ব্যবহার। প্রথমেই বাংলাদেশ তারপর একে একে ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেনের পালা।
এবারও ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি
ভারত মহাসাগর ক্রান্তীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম শুরু হয় মার্চ মাস থেকে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের মোক্ষম সময় এপ্রিল-মে মাসে। এবার এপ্রিলের শেষের দিকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্তর্বর্তী বঙ্গোপাসাগর বা আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল। এবারও ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা।
নামকরণ হয় কীভাবে, কারা দেন নাম
এইসব ঝড়ের নামকরণ হয় কীভাবে, কারাই বা দেন ঝড়ের নাম। আবহবিদরা উত্তর ভারত মহাসাগরের ৪৫ ডিগ্রি পূর্ব থেকে ১০০ ডিগ্রি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ করেন। যে সমস্ত ঘূর্ণিঝড় কমপক্ষে তিন মিনিট বাতাসে স্থায়ী হয় এবং গতিবেগ সর্বনিম্ন ঘন্টায় প্রতি ৬৩ কিলোমিটার হয়, সেই ঝড়েরই নামকরণ করা হয়।
২০২০-তে নতুন তালিকা তৈরি
২০২০-তে নতুন যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে ঝড়ের নামকরণের তাতে পর্যায়ক্রমে ১৩টি দেশকে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেন। এই পর্যায় অনুযায়ী প্রথম ১৩টি নাম হল- নিসর্গ, গতি, নিভার, বুরেভি, তাউটে, ইয়াস, গুলাব, শাহিন, জাওয়াদ, অশনি, সিতরং, ম্যানডৌস ও মোচা।
১৩টি দেশের তৈরি করা তালিকা
১৩টি দেশের তৈরি করা তালিকার দ্বিতীয় সারিতে যে সমস্ত ঝড়ের নাম স্থান পেয়েছে, তা হল পর্যায়ক্রমে- বিপর্যয়, তেজ, হামুন, মিধিলি, মিচাউঙ্গ, রিমাল, আসনা, দানা, ফেঙ্গাল, শক্তি, মোনথা, সেনইয়ার ও দিতোয়া। প্রথম সারির দুটি নামাঙ্কিত ঝড় বয়ে গেলে এই দ্বিতীয় সারির নাম ব্যবহার হবে।