দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে এবার দেশবাসীকে করোনার সঙ্গেই জীবনযাপন করতে হবে
দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে এবার দেশবাসীকে করোনার সঙ্গেই জীবনযাপন করতে হবে
এবার হয়ত করোনা ভাইরাসের সঙ্গেই দেশবাসীকে বাঁচতে শিখতে হবে। অন্তত সেরকমটাই মনে করছে কেন্দ্র সরকার। দেশের অর্থনীতি তলানিতে চলে গিয়েছে এই কয়েকমাসে। ভারত এখন লকডাউনের ৪৭ দিনে এসে নতুন প্রস্তুতি নিচ্ছে যাতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যায়। লকডাউন তোলার চেয়েও বড় বিষয় হল এই করোনাকে সাদরে গ্রহণ করে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।
যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে পর্যায়ক্রমে
লকডাউন তোলার অংশ হিসাবে রবিবারই ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মঙ্গলবার থেকে পর্যায়ক্রমে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন এবং সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে করোনার প্রকোপ কমাতে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে চলেছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ থেকে টুইট করে বলা হয়, মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ২০ মার্চ থেকে এটা মোদীর পঞ্চম বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে। এই বৈঠকে দেশজুড়ে লকডাউন তোলার বিষয়ে ও স্থানীয় অঞ্চলে প্রকোপ কমাতে সূক্ষ্ম-সুরক্ষা বিধি ব্যবস্থা নিয়ে সম্ভাব্য আলোচনা হতে পারে। গত ২৫ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়া এই লকডাউনের জেরে কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতি বিপুল পরিমাণে ধাক্কা খেয়েছে।
অর্থনৈতিক অবস্থা তথৈবচ
লকডাউনের জেরে ইতিমধ্যেই বিক্রির হার কমে গিয়েছে, কর্পোরেট সংস্থাগুলির অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ এবং ঋণ নিয়েও উদ্বেগ দেখা দেওয়ায় বিশ্লেষকরা এই আর্থিক বছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারের জন্য ইতিমধ্যে তাদের অনুমানগুলি নিয়ে কোনও কথা বলছেন না। তবে বিশ্লেষকদের মতে এই বিশাল বাধা অতিক্রম করার উপায় একটাই তা হল জনসাধারণ নিজেদের আচরণে বদল আনুক এবং বাস্তবকে মেনে নিক ও শিখে নিক এই ভাইরাসের সঙ্গে কিভাবে থাকতে হবে। রবিবার পর্যন্ত ভারতে করোনা সক্রিয় কেসের সংখ্যা ৪৩,৯৬৬টি, গত ১০ দিনে ৬৫% দাঁড়িয়েছে। দেশের বড় অংশ যথাক্রমে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, কলকাতা, হায়দরাবাদ ও বেঙ্গালুরুতে দেশের ওট সংখ্যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি এইসব শহরে, যা এখন লকডাউনের আওতায় রয়েছে। ১৭ মে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে এই লকডাউনের।
শিখতে হবে করোনার সঙ্গে বসবাস
মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা স্থায়ী সমাধান নাও হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লভ আগরওয়াল বলেন, ‘লকডাউন তোলার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আমার মনে হয় এই ভাইরাসের সঙ্গে কিভাবে বাস করতে হবে তা শেখাটা একটা চ্যালেঞ্জ। আর এটার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আমাদের জীবনের অংশ হিসাবে যোগ করতে হবে।' স্কুল, কর্মস্থান ও রেস্তোরাঁয় শারীরিক দুরত্ব মেনে বসার ব্যবস্থা ও কাজের শিফট করতে হবে। জনসমাগম হতে পারে এমন অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলা, বাড়িতে ডেলিভারি দিয়ে যাবে এমন ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হওয়া, ভিড় কম হওয়া গণ পরিবহন এবং প্রযুক্তির ওপর বিশ্বাস এবং মাস্ককে বাধ্যতামূলক করে নিতে হবে।
ভাইরাসের জন্য স্থায়ীভাবে লকডাউন ঠিক নয়
অর্থনীতিবিদরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে ভাইরাসটির আশেপাশের অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনীতি স্থায়ীভাবে লকডাউনে থাকতে পারে না। যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য ধাক্কা খাচ্ছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, কারণ অধিকাংশই রেড জোনের আওতায়, বিশেষ করে মেট্রো শহরগুলিতে কর্মী সংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকার জন্য তাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে ২০১৭ সালের আর্থিক বছরে দেশের ৬৩ মিলিয়ন এমএসএমই দেশজ উৎপাদিত পণ্যে ২৯ শতাংশ অবদান রেখেছিল। ২ মে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) সরকারের কাছে অনুরোধ করে যে কনটেইনমেন্ট জোনসহ দেশে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিয়ম জারি করে ভারি বাণিজ্যিক ও শিল্প চালু করে দেওয়া হোক। এতে ব্যবসাগুলি নিজেদের টিকিয়ে রাখতে এবং চাকরি হারানোর ক্ষতি এড়াতে সহায়তা করতে পারে বলে জানায় সিআইআই।
সুরক্ষা নিয়ম মেনে শুরু করা হোক উৎপাদন
সিমেন্ট প্রস্তুতকারকরা সাধারণ সুরক্ষা নিয়ম নিয়ে পুনরায় দেশে কাজ চালাতে প্রস্তুত। সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সংগঠনের সভাপতি মহেন্দ্র সিং জানিয়েছেন যে দেশের প্রত্যেক কারখানায় সুরক্ষা বিধি মানা হবে। তিনি বলেন, ‘খুবই ধীরে ধীরে উৎপাদন হচ্ছে, নতুন মডেলের সঙ্গে সমন্বয় হতে সময় লাগবে। আমরা যখন কাজে ফিরে আসি, সেই একটি জিনিস যা পরিবর্তিত হয় তা হল আমাদের মানসিকতা এবং উপায়।' অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের মতে, ঋণের বিধান ও ঋণ শোধ করার জন্য এমএসএমই-এর উৎপাদন দ্রুত শুরু করে দেওয়া উচিত। একমাসের জন্য গণ পরিবহন বন্ধ থাকার দরুণ কর্মী সংখ্যাও কম থাকবে, এরকম পরিস্থিতিতে এমএসএমই ৩০-৪০% উৎপাদন করার ক্ষমতা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বদল করতে হবে জীবনযাপন
বিজ্ঞানীরাও বর্তমানে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে একমত হয়ে জানিয়েছেন যে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধকের খোঁজ চলছে এখনও তাই মানুষের এখন জীবনধারাকে পরিবর্তন করতে হবে। আইসিএমআরের প্রাক্তন মুখ্য মহামারি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানী ললিত কান্ত বলেন, ‘কেউ জানেন না যে কবে ভাইরাস দেশ ছেড়ে যাবে। শীতকালে দ্বিতীয়বার এর প্রকোপ দেখা দেবে। এটা আবার সার্সের মতোই গায়েব হয়ে যাবে অথবা মরশুমি ফ্লুয়ের মতন থেকেও যেতে পারে।' সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিকে জানানো হয়েছে যে কাজের শিফট ও লাঞ্চের সময় সামাজিক দুরত্ব যাতে বজায় রাখা হয় তা নিশ্চিত করতে। এই রোগকে রোধ করার এটাই একমাত্র চাবিকাঠি, জানিয়েছেন ললিত কান্ত। স্কুলে গহরেমর ছুটি পড়ার মুখেই লকডাউন তোলা হচ্ছে, তাই শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে ঠিকঠাক প্রস্তুতি নেওয়ার পরই স্কুলগুলি সরকারের খোলা উচিত। এই গরমের ছুটিকে বিশেষভাবে কাজে লাগিয়ে স্কুলে যথাযথ ব্যবস্থা করার পরই স্কুল খুলতে পারে সরকার।
লকডাউন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে মোদীর হাইভোল্টেজ বৈঠক! সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব কোথায় দেওয়া হচ্ছে