'তুরুপের তাস' দলাই লামা, লাদাখ সীমান্ত সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি লুকিয়ে তিব্বতে
তিব্বতীদের নিয়ে গড়ে ওঠা স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার টাস্ক ফোর্সের উপর থেকে সমপ্রতি পর্দা উঠতেই ফের একবার সামনে চলে আসে ভারতের তিব্বতের প্রতি সহানুভূতির বিষয়টি। ২৯ অগাস্ট ভারত-চিন সীমান্তে সংঘর্ষের জেরে শহিদ হয় এসএফএফ-এর জওয়ান নাইমা তেনজিং। লাদাখে তাঁর অন্তিম যাত্রায় তিব্বত এবং ভারতীয় পতাকা জড়িয়ে পূর্ণ মর্যাদায় বিদায় জানানো হয়। এরপরই ফের ভারতের 'তিব্বত ট্রাম্প কার্ডের' বিষয়টি উঠে আসে আলোচনায়।
তেনজিংকে মর্যাদা প্রদানের নেপথ্যে থাকা কূটনীতি
নাইমা তেনজিংকে মর্যাদা প্রদান এবং ভারতীয় গণমাধ্যমে তাঁর অন্তিম যাত্রার ছবি প্রদর্শন যে নিছক সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে ছিল, এমনটা মনে করেন না অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। ভারত যে তিব্বতী জনগণ এবং তাঁদের সংস্কৃতি ও দেশের দাবিকে সমর্থন করে, বকলমে এই বার্তাই উঠে এসেছে এর মাধ্যমে। এবং তিব্বতীরাও যে ভআরতের পাশে তাও দেখা গিয়েছে এতে।
তিব্বতের উপর চিনা সার্বভৌমত্বের উপর প্রশ্ন
এই সময়ই ভারতের তরফে তিব্বতের উপর চিনা সার্বভৌমত্বের উপর প্রশ্ন তোলা হয়। প্রসঙ্গত, স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের গঠন হয়েছিল ১৯৫০-এর দিকে। চিন যখন তিব্বত দখল করে নেয়, তখন ভারতে আশ্রয় নেওয়া তিব্বতীদেরকে নিয়ে এই বাহিনী গঠন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। পরবর্তীতে এই বাহিনীতে তিব্বতী বংশদ্ভূতদের ভর্তি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওযা হয় ভারতীয় সেনার তরফে।
তিব্বত যদি আজ স্বাধীন রাষ্ট্র হত...
আদতে তিব্বত যদি আজ স্বাধীন রাষ্ট্র হত, তাহলে ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা তৈরি হত না। কারণ ভারতের সিংহভাগ সীমান্ত তিব্বতের সঙ্গে হত। এবং বিবাদপূর্ণ অঞ্চলগুলির উপর চিন তাদের অধিকার ফলাতে পারত না কোনও দিনই। তবে এখন এত দশক পর তিব্বতের স্বাধীনতা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয় হিসাবে দেখা হয়। তবে তিব্বতীরা স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি।
তিব্বত ইস্যুতে চিনকে চাপে ফেলার কৌশল
তিব্বত ইস্যুতে চিনকে চাপে ফেলার কৌশল যে ভারত নিজেদের আস্তিনে লুকিয়ে রেখেছে তা এক প্রকার 'ওপেন সিক্রেট' ছিল। তবে এভাবে শহিদ জওয়ানকে সম্মান জানিয়ে তিব্বতকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে চিন কিন্তু মুখ খোলেনি। বরং তারা বিষয়টি হজম করে গিয়েছে। কারণ বেজিংও জানে, লাদাখ সমস্যার মাঝে যদি তিব্বত নিয়ে কোনও বিদ্রোহ দেখা দেয়, তবে তাদের পক্ষে তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে বিশেষ প্রশিক্ষণ
১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর এই স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছিল ভারতীয় সেনা। অনেকটা মার্কিন বিশেষ বাহিনীর আদলে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এবং মার্কিন সংস্থা সিআইএ-ও এই প্রশিক্ষণ দিতে ভারতকে সাহায্য করেছিল সেই সময়। যদিও খাতায় কলমে এসএফএফ কিন্তু ভারতী গোয়েন্দা সংস্থা 'র'-এর অধীনে।
১৯৭১ সালে এবং ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়েছে এসএফএফ
তবে শুধু যে চিনের বিরুদ্ধেই এসএফএফ লড়েছে তেমনটা নয়। ১৯৭১ সালে এবং ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এসএফএফ। এবং এহেন তিব্বতী বংশদ্ভূতদের বাহিনীকে যেভাবে লাদাখ সংঘাতের মাঝে ভারত স্বীকৃতি দিয়েছে, তাতে তিব্বতীদের মধ্যে ভারতকে সমর্থন করার ইচ্ছা আরও প্রবল হয়েছে।
ভারতে এক লক্ষের বেশি তিব্বতীর বাস
পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে ভারতে কম করে হলেও এক লক্ষ তিব্বতী বাস করে। দেশএর বিভিন্ন স্থানে তারা স্বাধীন ভাবে বাস করে। তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা সংগঠনও রয়েছে ভআরতে। তিব্বতী ইউথ কংগ্রেস নামক এই সংগঠনে ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে। এবং এদের অনেকেই এসএফএফ-এ যোগ দিয়েছেন।
তিব্বতকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার পথে হাঁটতে চায়নি ভারত
যদিও বিগত কয়েক দশক ধরে সহানুভূতি থাকলেও তিব্বতকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার পথে হাঁটতে চায়নি ভারতের কোনও সরকার। মূলত, চিনকে চটাতে না চেয়েই এই মৌন ব্রত পালন ভারতের। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি সেই কাজটা করা যায়, তবে তা চিনের উপর পাল্টা চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ সে ক্ষেত্রে আমেরিকাও চিনকে চাপে ফেলতে তিব্বতকে সমর্থন জানাতে বাধ্য হবে।
চিন-ভারত সংঘাতের আবহে 'দলাই লামা'-কে ব্যবহার
এর আগে চিন-ভারত সংঘাতের আবহে 'দলাই লামা'-কে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টির 'মেন্টর' সঙ্ঘ পরিবার। মোদী সরকারে উদ্দেশে সঙ্ঘ পরিবারের প্রস্তাব, চিনকে কড়া জবাব দিতে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্নে ভূষিত করা হোক তব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামাকে। প্রসঙ্গত, নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া দলাই লামা চিনের পয়লা নম্বর শত্রু।
দলাই লামার চিন বিরোধিতা
এদিকে লাদাখে চিনা আগ্রাসনের আবহেই দলাই লামা চিনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেনা। তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা বেজিংকে ঠুকে বলেছিলেন, চিন তিব্বত দখল করতে পারলেও আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চল হয়ে লাদাখে আগ্রাসন দেখিয়েছে চিন। আর তিব্বতীরা কখনও তা মেনে নেবে না।
ভারতের জন্য ভালো নন বাইডেন, চিনা হুমকির নামে ভারতীয়-মার্কিনিদের কাছে ভোট ভিক্ষা ট্রাম্পের