পুলওয়ামার বুকেই বদলা সেনার, ১৭ ঘণ্টার এনকাউন্টারে গুলিতে ঝাঁঝরা মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি কামরান
হল কি প্রাথমিক বদলা? যে ৪০ জন জওয়ান ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তারপর কেটে গিয়েছে ৪দিন। আর এই ৪ দিনের মাথায় এই পুলওয়ামার বুকেই ঘটে গেল এক ভয়ানক এনকাউন্টার।
হল কি প্রাথমিক বদলা? যে ৪০ জন জওয়ান ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তারপর কেটে গিয়েছে ৪দিন। আর এই ৪ দিনের মাথায় এই পুলওয়ামার বুকেই ঘটে গেল এক ভয়ানক এনকাউন্টার। যাতে মারা পড়ল তিন জঙ্গি। এদের মধ্যে ২ জন পাকিস্তানি। একজন কাশ্মীরের ভারতীয় ভূখণ্ডের বাসিন্দা। যে জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি দলে নাম লিখিয়েছিল। সেনা সূত্রে দাবি, এই নিহত ২ পাকিস্তানি জঙ্গিদের মধ্য়ে একজনের নাম কামরান ওরফে আব্দুল রশিদ গাজি। এই কামরানই পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গির মাস্টার মাইন্ড বলে দাবি করছে সিআরপিএফ। আর যে কাশ্মীরি জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে তার নাম হিলাল বলে দাবি করা হচ্ছে।
এই ভয়ানক অনকাউন্টারে অবশ্য় বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের। কারণ, এতে এক মেজর পদমর্যাদার অফিসার-সহ ৪ জন শহিদ হয়েছেন। শহিদ হয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের এক কনস্টেবলও। এছাড়াও পায়ে গুলি লেগে জখম হয়েছেন রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর ১২ নম্বর সেক্টরের ব্রিগেডিয়ার হারবিরং সিং এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ডিআইজি অমিত শর্মা।
পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় মাস্টারমাইন্ড হিসাবে কামরান ওরফে রশিদ গাজি-র নাম উঠে আসে। ইনটেলিজেন্স থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছিল পুলওয়ামায় ১৪ ফেব্রুয়ারি আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় জইশ-ই-মহম্মদ কমান্ডার কামরান-ই মাস্টারমাইন্ড। এরপর থেকেই কামরান-এর খোঁজে তল্লাশি চলছিল। খবর ছিল কামরান-রা পুলওয়ামা ছেড়ে বের হতে পারেনি।
খবরের সত্যতা ভালমতোই ছিল বলে এখন মনে করছে সেনাবাহিনী। কারণ, রবিবার রাতে পুলওয়ামার পিংলায় সেনা-র টহলদারি জিপে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এই ঘটনায় এক মেজর-সহ ৪ জওয়ান শহিদ হন। ততক্ষণে সেনার টহলদারি জিপে জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে এলাকা ঘিরে ফেল সিআরপিএফ, রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ও পুলিশ। চারিদিক থেকে জঙ্গিদেরকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হয়। জঙ্গিরা একটি বাড়়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে।
সেই বাড়ি ঘিরে রাতভোর গুলির লড়াই চলে। শেষমেশ সকাল ৯টা নাগাদ জঙ্গিদের দিক থেকে গুলি আসার মাত্রা কমতে থাকে। বাড়ির কাছে পৌঁছে সেনা ২ জঙ্গির দেহ আবিষ্কার করে। কিন্তু, বাড়ির কাছে যাওয়া মাত্র তখনও জীবীত এক জঙ্গি সমানে গুলি চালাতে থাকে। গুলি আর গ্রেনেড বিস্ফোরণে বাড়িটি তখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেই ধ্বংস্তূপের আড়াল থেকেই গুলি চালাতে থাকে সেই জঙ্গি। এই সময়ই গুলির জখম হন এক পুলিশ কনস্টেবল। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
শেষমেশ সন্ধ্যে ছটা নাগাদ আত্মগোপনকারী জঙ্গির দিক থেকে গুলি আসার মাত্রা কমতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরেই পুরোপুরি গুলি আসা থেমে যায়। ধ্বংস্তপে পরিণত হওয়া বাড়ি থেকে ৩ জঙ্গির দেহ বের করা হয়। সিআরপিএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সকালেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড কামরান এবং স্থানীয় জঙ্গি হিলাল। তৃতীয় জঙ্গির পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার পর থেকেই জঙ্গিরা অ্যাডভান্সড মেসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করছে। মোবাইল এসএমএস তারা করছে না। অ্য়াডভান্সড মেসেজিং সিস্টেমের জন্য জঙ্গিদের লোকেশনও চট করে ধরা যাচ্ছে না। পুলওয়ামার পিংলায় যে জঙ্গিরা নিহত হয়েছে তাদের কাছে এমন অ্য়াডভান্সড মেসেজিং সিস্টেম পাওয়া গিয়েছে কি না তা নিয়ে এখনও কোনও বিস্তারিত তথ্য় পাওয়া যায়নি।
এদিকে, জঙ্গি-দের সঙ্গে গুলির লড়াই চলার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আধা সেনাকে লক্ষ করে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। তবে, এই বিক্ষোভ বড় আকার নেওয়ার আগেই মাইকিং করে উত্তেজিত জনতাকে দূরে সরিয়ে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী।