বাংলায় মেলেনি চিকিৎসা, অসুস্থ স্ত্রীকে সাইকেলে চাপিয়ে ১০০ কিমি পাড়ি দিয়ে ঝাড়খণ্ডে পুরুলিয়ার হরি
স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সাইকেলে ১০০কিমি পথ অতিক্রম করে ঝাড়খন্ড পৌঁছালেন রিক্সাচালক
রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি মোটেই সুখকর নয়, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর মধ্যেই, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অন্যান্য চিকিৎসা পরিষেবাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এদিন, পুরুলিয়ায় এক হাসপাতালে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে যান এক রিক্সাচালক। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে শেষমেশ তাকে এবং সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে সাইকেল ভাড়া করে ১০০কিমি পথ অতিক্রম করে ঝাড়খণ্ডের এক হাসপাতালে পৌঁছান ঐ রিক্সাচালক। জীবনীশক্তির এমন নজির সামনে আসতেই খবরের শিরোনামে এই দম্পতি।
করোনা ছড়ানোর অভিযোগে, রোগীকে ছুঁয়েই দেখলেন না চিকিৎসক
তীব্র পেটে ব্যথায় কান্নাকাটি করছিলেন পুরুলিয়ার রিক্সাচালক হরির স্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমে হরি স্থানীয় হাসপাতালে গেলেও, তাঁর স্ত্রীকে চিকিৎসকরা ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেননি বলে অভিযোগ করেন হরি। পাশাপাশি তারা করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে এমন অপবাদও দেন চিকিৎসকেরা। এই প্রসঙ্গে হরি জানান, কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কাছ থেকে এই কথা শুনে খুব অসহায় লাগছিল, এরপর বউকে বাঁচাতেই হবে ভেবে সাহস সঞ্চয় করে জামশেদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম"।
অসহ্য পেটের যন্ত্রণায় কাঁতড়াচ্ছিলেন বন্দিনী দেবী
অহস্য পেটের যন্ত্রণা নিয়ে জামশেদপুরের গঙ্গা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন ২৯ বছরের বন্দিনী দেবী৷ এরপর সমস্ত পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর অ্যাপেন্ডিক্স খুব বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে এবং তাৎক্ষণিক তার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। এরপর, সেইখানকার চিকিৎসকরা বিণামূল্যেই অপারেশন করে বন্দিনী দেবীর প্রাণ বাঁচান বলে জানা যাচ্ছে।
জামশেদপুরের চিকিৎসকরা বিণামূল্যেই সারলেন অস্ত্রোপচার
জেলায় চিকিৎসা না পেয়ে এবং ব্যয়সাপেক্ষ চিকিৎসা খরচের কথা চিন্তা করে স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য একরকম প্রস্তুতই ছিলেন রিক্সাচালক হরি। কিন্তু, তার সাধ্যমত শেষ চেষ্টাটুকুতেই ফিরল স্ত্রীর প্রাণ। 'রোগীর অবস্থা সংকটজনক দেখেই আমরা দেরী না করে তৎক্ষনাৎ অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিই। আর দেরী হলে হয়ত তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ত' এমনটাই জানান বন্দিনী দেবীর ডাক্তার এন সিং। তাই অর্থের কথা না ভেবে বিণামূল্যেই চিকিৎসা করা হয় বন্দিনীর।
সাইকেলের ভাড়া দেওয়ারই টাকা ছিল না, চিকিৎসার খরচ বহন করবে কী করে?
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ চিকিৎসার পর বন্দিনী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সেই বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। এই প্রসঙ্গে ডাক্তার এন সিং জানান, হরি সাইকেলের ভাড়া দেওয়ারই টাকা ছিল না। তাই তাকে ডাক্তারদের তরফ তার হাতে কিছু টাকা ও একটি সাইকেল তুলে দেওয়া হয়। ডাঃ সিং আরও জানান যে, ১৯৯০ সালে জামশেদপুরে অনুশীলন শুরুর আগে চিকিৎসার অভাবে তিনি তার বাবাকে হারিয়েছিলেন, তাই তিনি তার মাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে অর্থের অভাবে তিনি কারও সাথে চিকিৎসা অস্বীকার করবেন না। নিষ্ঠুরতার বিপরীতেই যে মানবিকতা দাঁড়িয়ে থাকে তারই নজির রেখে গেল হরির পুরুলিয়া থেকে ঝাড়খন্ড যাত্রা।
'আম্ফানে’র পর ধেয়ে আসবে ঘূর্ণিঝড় 'গতি’! বঙ্গোপসাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত