গরম জলে ভিজিয়ে রাখলেই ভাত তৈরি, এমনই ‘ম্যাজিক’ ধানের সন্ধান দিলেন তেলঙ্গানার এক কৃষক
‘ম্যাজিক’ ধানের সন্ধান দিলেন তেলঙ্গানার এক কৃষক
এবার আর ভাত রান্না করার জন্য আপনাকে গ্যাস খরচ করতে হবে না। জ্বালানির খরচ বাঁচাতে এমনই এক 'ম্যাজিক’ চাল ফলিয়েছেন তেলঙ্গানার করিমনগর জেলার এক কৃষক। তাঁর এই 'ম্যাজিক’ চাল শুধু গরম জলে ভিজিয়ে রাখলেই ভাত তৈরি হয়ে যাবে, তা রান্না করার দরকার পড়বে না।
অসমের বোকা সাউল চাল
ইলান্থাকুন্তা মণ্ডলের শ্রীরামুলা পল্লীর বাসিন্দা শ্রীকান্ত সবসময় কৃষিকাজে অনন্য ও বিরল কোনও ফসল ফলাতে চেয়েছিলেন। আর তাঁর এই ইচ্ছাই তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফসলের অনন্য জাত খুঁজে বের করতে। তিনি এই খোঁজ নিয়েই পৌঁছে যান অসমে। শ্রীকান্ত সেখানে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধানের বিভিন্ন ধরনের জাত দেখতে পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের সহায়তায় শ্রীকান্তের নজর পড়ে দেশীয় এক ধানের জাত বোকা সাউল বা 'মাড রাইস'। এই জাতের ধান অসমের নিম্ন এলাকায় এবং নলবাড়ি, বারপেটা, গোলপাড়া, কামরূপ, দারাং, ধুবড়ি, চিরাং, বোংগাইয়াগাঁও সহ পাহাড়ি এলাকায় চাষ করা হয়।
দেড়বছর ধরে খোঁজ চলছে
শ্রীকান্ত তাঁর এই খোঁজ নিয়ে বলেন, 'আমি এ ধরনের বিশেষ কিছু পাওয়ার জন্য গত দেড়বছর ধরে কাজ করে চলেছি। আমি এই প্রজাতির ধানকে আরও জনপ্রিয় ও এর বংশবৃদ্ধি করতে চাই যাতে তা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উপলব্ধ হয়।' শ্রীকান্ত এই ধানের চাষ শুরু করেন তাঁর কৃষিক্ষেত্রের ছোট জমিতে (০.০৫ একর) এবং তিনি পাঁচ ব্যাগ ফলন আশা করছেন।
সাধারণ ধানের মতো এই বোকা সাউল
তিনি বলেন, 'এই ফলন সাধারণ ধানের ফসলের মতো একই। ফসলের সময় ১৪৫ দিন। এবার এই ফসল কাটতে হবে। আমি এর কোনও আর্থিক দিক এখনই দেখছি না। শুধু এর বিকাশ করতে চাই। আমি ফলন বীজ হিসাবে আরও উৎপাদন করতে ব্যবহার করব।' শ্রীকান্ত এও জানিয়েছেন যে তিনি ফলনের আগেই এই ধান একটু কেটে তার স্বাদ গ্রহণ করেছেন। গরম জলে আধঘণ্টা পুরোপুরি ভিজিয়ে রাখলেই ভাত তৈরি। যদি ঠাণ্ডা জল ব্যবহার করা হয় তবে ভাত ঠাণ্ডা হবে এবং গরম জল ব্যবহার করলে তা গরম। শ্রীকান্ত এই ভাতের সঙ্গে গুড়, কলা ও দই মিশিয়ে খেয়েছেন, তাঁর এই ভাতের স্বাদ দারুণ লেগেছে। তিনি বলেন, 'এই চাল ভেজানোর পর তা চিঁড়ের মতো হয়ে যায়।'
বোকা সাউলের ইতিহাস
'বোকাসাউল' নিয়ে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, এই ধানের মধ্যে ১০.৭৩ শতাংশ ফাইবার ও ৬.৮ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে। এই ধরনের চাল ব্যবহার করত ১২ শতাব্দীতে অহম রাজবংশ, যারা অসম ও উত্তরপূর্ব ভারতের ক্ষমতায় ছিল। এই ধানকে ইতিমধ্যেই ভারত সরকার জিআই ট্যাগ দিয়ে দিয়েছে। জৈব চাষ পদ্ধতিতে শ্রীকান্ত ১২০টি দুর্লভ জাতের ফসলের চাষ করেছেন।
প্রতীকী ছবি
করোনার কোপে প্রজাতন্ত্র দিবস! বাদ পড়ছে একাধিক অনুষ্ঠান, কমছে দর্শক সংখ্যাও